বাংলাদেশে পথচারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান সমালোচিত: “আমি পথচারী, অপরাধী নই”

ব্যস্ত রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা - যদি স্বল্প দুরেই ওভারব্রিজ। ছবি তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ।

ব্যস্ত রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা – যদি স্বল্প দুরেই ওভারব্রিজ। ছবি তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৩০/৮/২০১২)

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার ঠেকাতে দেশটির পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ’ পথচারীকে জেল-জরিমানা করেছে।

পুলিশ দপ্তর জানিয়েছে, ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস থাকা সত্ত্বেও নাগরিকেরা খুশিমতো যেখান দিয়ে ইচ্ছা রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এতে যানজটের পাশাপাশি সড়কে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারাও যাচ্ছে। এজন্য তারা জনগণকে সচেতন করতে এই অভিযান পরিচালনা করছেন।

তবে পুলিশের এই অভিযান ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

বিডি নিউজের একজন পাঠক ঢাকা শহরের ফুটওভার ব্রিজগুলো ব্যবহারে অসুবিধার কথা তুলে ধরেছেন:

ফুটওভার ব্রিজগুলোতে ওঠানামা করতে খুব কষ্ট হয়। সুস্থ লোকও হাপিয়ে যায়। আন্ডারপাসে ওঠানামাও কষ্টকর। তাই জরিমানা করার আগে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা দরকার। বিজ্ঞাপন, ব্যানার, ফকির, হকার, বখাটে, টিজার, অন্ধকার, নোংরা- এসব ব্রিজ থেকে অপসারণ করে পরিষ্কার ঝকঝকে রাখা দরকার। সিসিটিভি দিয়ে মনিটর করা দরকার। ওঠানামার জন্য ভাল এস্কেলেটর বা লিফট থাকতে হবে।

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন:

পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ আর আন্ডারপাস ব্যবহারে আপনি উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, বাধ্য করতে পারেন না। পুলিশ যেভাবে অফিসগামী ব্যস্ত মানুষদের ছিনতাইকারীর মত দৌড়ে বেল্টে ধরে, কলারে ধরে ভ্রাম্যমান আদালতের সামনে আনছে তা অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন।

পুলিশ যানজটের অজুহাতে পথচারীদের রাস্তা পারাপারে বাধা দেয়ার প্রতিবাদ করেছেন ব্লগার কুঙ থাঙ:

পথচারিরাই পথের মালিক ৷ গাড়ি হল গতকালকের সৃস্টি ৷ এই পথে তোমার ইঞ্জিন লাগানো গাড়ি চলতে পারে, তবে সেটা কোনক্রমেই পথচারিদের হাঁটাচলা বন্ধ করে বা চলাচলে বাধা সৃস্টি করে নয় ৷

Citizens risk their lives in the traffic to cross the road at Kazi Nazrul Islam Avenue in the capital Dhaka. Image by Firoz Ahmed. Copyright Demotix (30/8/2012)

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। ছবি তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৩০/৮/২০১২)

এখানে উল্লেখ্য যে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্যে আলাদা ট্রাফিক লাইটের ব্যবহার ঢাকার রাস্তায় বিরল। ব্লগার রাসেল পারভেজ পুলিশের কর্মকাণ্ডকে অসভ্য বলে উল্লেখ করেছেন:

পথচারী ট্রাফিক আইন মেনে অন্য সকল সভ্য দেশের মতো রাস্তা পার হবে নিরাপদে, শুধুমাত্র গাড়ীচালকদের নির্বিঘ্নে গাড়ী চালানোর সুযোগ দিতে গিয়ে লোকজনকে আকাশ-পাতালে উঠা নামা করতে হবে- এটা অসভ্য একটা রীতি।

বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিদিন ঢাকা শহরে ১৮৫টি নতুন গাড়ি যুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ির সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার যা ২% মানুষের। তাই ২% মানুষের যাতায়াত সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা যুক্তিসঙ্গত নয় বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী সৈয়দ মাহুবুবুর আলম:

[…] ঢাকা শহরের প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ হাঁটা, পাবলিক বাস, সাইকেল এবং রিকশাসহ অন্যান্য গণপরিবহনে যাতায়াত করছে। যার অধিকাংশ পায়ে হেটে চলাচল করে থাকে। নগরে মাত্র ২% মানুষের যাতায়াতের বাহনকে সুবিধা প্রদানের জন্য ৯৫% মানুষের যাতায়াতকে উপেক্ষা করা যুক্তিসংগত নয়।

তাই ব্লগার, বাম আন্দোলনকর্মী কল্লোল মোস্তফা ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ পথচারীদের অগ্রাধিকার’ পাবার দাবি জানিয়েছেন। ফেসবুক ব্যবহারকারী মারুফা রহমান অভিযান চলার সময়ে পুলিশ মারধর করছে বলে অভিযোগ করেছেন।

ঢাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে বাস চাপা পড়া খুব সাধারণ ঘটনা। চলতি বছর এ পর্যন্ত ঢাকায় ১৩৪ জন পথচারি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা নগর যাতায়াতব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলেছেন। এগুলো হচ্ছে: প্রকৌশলগত সঠিকতা নিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ। অবকাঠামো ব্যবহার ও এ-সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করা এবং সবশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে আইন প্রয়োগ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .