২২ মে তারিখে সংগঠিত অভ্যুত্থান, যার মাধ্যমে সামরিক জান্তা দেশটির সরকারে অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তার মাত্র ছয় অতিক্রান্ত হয়েছে। ক্ষমতা এসে সামরিক জান্তা দ্রুত দেশটির সংবিধান স্থগিত করে এবং সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা করে। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশ-এর উপর তাদের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং সাময়িক ভাবে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করে।
এই সকল ঘটনা সত্ত্বেও, কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য নাগরিকরা স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার করছে এবং দেশটির পরিস্থিতির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করাচ্ছে। নিচের ছবিগুলো বিগত ছয় মাসের ছবি।
১.অভ্যুত্থান সেলফি
Newsy or a Doozy – ‘Aint no selfie like a Thai coup selfie'… @graciewtaylor pic.twitter.com/H2PIuZcKWT
— George FM Breakfast (@GRGFMBRKFST) May 27, 2014
সংবাদ, নাকি অদ্ভুত কিছু। থাই অভ্যুত্থানের সেলফির মত কোন সেলফি নেই।
২২ মে তারিখে থাই রাজধানীতে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতারা শত শত সশস্ত্র সেনা নিয়ে আসে , যারা সাথে ভারী অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নাগরিক দ্রুত সেনাদের কাছে গিয়ে হাজির হয় ‘অভ্যুত্থানের সেলফি’ তোলার জন্য যা বহির্বিশ্বের কাছে একই সাথে এই বাহিনীর রাজনৈতিক বিবৃতি এবং তাজা সংবাদ তুলে ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়।
২. গ্রেফতার এবং আটক
For those who don't know, the woman with the red tape across her mouth is a journalist (a brave one). #ThaiCoup pic.twitter.com/FBBXzfYUxd
— แก้วมาลา Kaewmala (@Thai_Talk) May 23, 2014
যারা জানেন না তাদের জ্ঞাতার্থে, মুখে লাল টেপ বাঁধা মেয়েটি এক সাংবাদিক (সাহসী একজন)।
সামরিক এই জান্তা রাজনৈতিক নেতা এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গণতন্ত্র কর্মীর প্রতি সমন জারি করে। প্রাথমিক ভাবে যাদের কয়েকজন রিপোর্ট করতে অস্বীকার করে তাদের গ্রেফতার করা এবং আটকে রাখা হয় এবং তারা এখন কয়েক বছর কারাদণ্ডের মত শাস্তির মুখোমুখি।
৩. স্যান্ডউইচ নিষেধাজ্ঞা
রাজনৈতিক ভিন্নমত বলে প্রতীয়মান যে কোন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে নেতারা দ্রুত সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। যখন থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পাঁচজনের বেশী নাগরিকের সমাবেশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, একটিভিস্টরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘স্যান্ডুউইচ পার্টির’ আয়োজন করে। সামরিক নেতার দ্রুত বিষয়টি খেয়াল করে এবং একটিভিস্টদের সতর্ক করে তা বন্ধ করতে বলেন।
৪.পাঠ্য পুস্তকের পুনঃপাঠ
ক্ষমতা গ্রহণে পর পর সামরিক নেতারা, তাদের জন্য হুমকি হতে পারে এমন ভাষণ,সভা,এবং বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে। ছাত্র এবং অধ্যাপক যারা এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছেন, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। অভ্যুত্থানের নেতারা “১২টি মূল্যবোধ” স্মরণ রাখা বাধ্যতামূলক করেছে যা কর্তৃত্বের মাঝে যে পার্থক্য তার উপর মনোযোগ প্রদান করে থাকে এবং যারা তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাদের গতিবিধি অনুসরণ করে।
সামরিক এই সব নেতারা একই সাথে ইতিহাসের পাঠ্যবই সংশোধন করে সে সব বই থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার নাম মুছে ফেলে, যার রাজনৈতিক দল ২০১১ থেকে সকল নির্বাচনে জয়লাভ করেছে।
৫.সেন্সরশীপ
অন্য সকল ভিন্ন মতের সাথে সামরিক সরকার বিতর্কিত কিছু বই নিষিদ্ধ করেছে , যেমন জর্জ ওরওয়েলের “১৯৮৪” নামক বইটি।
৬. পান্ডা হুমকি
অভ্যুত্থানের নেতা সাংবাদিকদের শাস্তি এবং হুমকি প্রদান করেছে যেন তারা থাইল্যান্ডের প্রাক্তন এই দুই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রকাশিত ছবির বিষয়ে কোন সংবাদ না ছাপে,চীন ভ্রমণের সময় তোলা এই ছবিতে তারা একটা পান্ডাকে আদর করছিল,তা ছাপা নিষেধ কারণ এটি থাইল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য এক হুমকি।
এই ছবিটাকে অনেকে থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রের প্রতি বেইজিং-এর সমর্থনের প্রতীক হিসেবে দেখছে।
৭. থাই এলাকায় দি হাঙ্গার গেম
অভ্যুত্থানের কিছুদিন পরে কয়েকজন একটিভিস্ট “দি হাঙ্গার গেম” নামক চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রাজনৈতিক প্রতিবাদের এক ধরন হিসেবে তিন আঙ্গুলে সেলুট প্রদানের বিষয়টিকে অভ্যুত্থান বিরোধী প্রতিবাদের জন্য ব্যবহার করা শুরু করে। যখন এই চলচ্চিত্রের ধারাবাহিকতায় এর দ্বিতীয় খণ্ড সারা বিশ্বে মুক্তি লাভ করে, তখন থাই দেশটির রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য একটিভিস্টরা অনলাইনে সংগঠিত হয়। তারা থাইল্যান্ডের কিছু প্রধান শহরের সিনেমা হলগুলোর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং উক্ত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে।
থাই সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা এবং এখন প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণকারী প্রায়ুত চান–ও-চা নির্বাচন প্রদান সাপেক্ষে পুনরায় বেসামরিক আইন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন-কিন্তু তা করা হবে সেই সময়,যখন সামরিক নেতারা দেশটির রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী সংস্কার সাধন করে তা প্রয়োগ করবে, যে সব বিষয় দেশটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরী। তবে থাই একটিভিস্টরা ক্রমাগত সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান দাবি করে যাচ্ছে।