চীনা রন্ধনপ্রণালীর প্রামাণ্য চিত্র “চীনের খাবার” যেন একটি চাক্ষুষ ভোজ

চীনের পণ্ডিত লিন ইয়ুটাং “পুরুষের সুখ” বিষয়টিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেনঃ

娶一个日本女人做太太;找一个法国女人谈恋爱;雇一个中国人当厨师、找一个英国管家料理家政。

একজন জাপানিজ স্ত্রী, একজন ফ্রেঞ্চ প্রেমিকা, একজন চীনা বাবুর্চি এবং একজন ব্রিটিশ খানসামা পাওয়ার মাঝেই পুরুষের সুখ নিহিত থাকে। 

বলা বাহুল্য, চীনা খাবার হচ্ছে চীনা সংস্কৃতিরই একটি বিশেষ দিক। এটি নিয়ে চীনের লোকেরা বেশ গর্ববোধ করে। এটি দৈনন্দিন জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং পণ্ডিত কে. সি. চ্যাং লক্ষ্য করেছেন, “খাবার চীনা লোকেদের মন বিশেষভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে”। এ বিষয়টি লক্ষণীয় যে, “বেশিরভাগ সামাজিক পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে খাবার একেবারে কেন্দ্রস্থলে থাকে বা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে বা প্রতীকায়িত করে থাকে।”

তথাপি, চীনা খাবারের সৌন্দর্য এবং রহস্যময়তা কখনই ভাল ভাবে তুলে ধরা হয়নি। এমনকি খোদ চীনেও চীনা খাবারকে কখনই শৈল্পিক স্তরে নিয়ে যেয়ে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। “চীনের খাবার” (যার আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “জিহ্বার আগায় চীন”) শিরোনামে চীনা খাবারের সংস্কৃতি নিয়ে নির্মিত সাত খণ্ডের একটি ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারের আগ পর্যন্ত ব্যাপারটি তেমনই ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন চ্যানেল চীনা কেন্দ্রীয় টেলিভিশন ২০১২ সালের মে মাসে প্রামাণ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছে। এই ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্রটি চীনের সমৃদ্ধ রান্নাবান্না সম্পৃক্ত ঐতিহ্যের একটি দর্শনীয় সূচনা তৈরি করেছে। স্থানীয় মৌলিক উপাদান, রন্ধন পদ্ধতি এবং স্থানীয় খাবারের বিশেষত্ব ও প্রথা বোঝানোর মাধ্যমে এই প্রামাণ্যচিত্রটিতে ব্যাপক আঞ্চলিক ভিন্নতা আনা হয়েছে। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে চীনা রন্ধন পদ্ধতি মৌলিকতা ফিরে পেয়েছেঃ এখানে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে পথবিহীন পর্বতের পাশে মাতসুতাকে মাশরুম খুঁজতে দেখা যাচ্ছে, রাতের খাবারের জন্য একজন জেলেকে বারাকুডা ধরতে দেখা যাচ্ছে, শীতকালে কর্দমাক্ত নদী থেকে একদল কৃষককে পদ্মের শিকড় সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে।   

Poster of "A bite of China"

“চীনের খাবার” প্রামাণ্যচিত্রের একটি পোস্টার। 

দেশটির সর্বোচ্চ শ্রদ্ধেয় ত্রিশজন চিত্র নির্মাতা এক বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করে এই ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য ৫০ মিনিটের দীর্ঘ সাতটি পর্ব তৈরি করেছেন। পানি জমে বরফ হওয়া লেক থেকে শুরু করে বাঁশের বন পর্যন্ত সারা দেশজুড়ে তারা এই ধারাবাহিকগুলোর জন্য চিত্রধারণ করেছেন।

এই প্রামাণ্যচিত্রটি রাতারাতি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। এটি চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রচলিত শিরোনামে পরিণত হয়। অনেকেই মনে করে সুন্দর ভিজুয়াল ইফেক্ট এবং এটিতে যে শক্তিশালী গৃহকাতরতার আবাহন করা হয়েছে, তা এটিকে চীনে তৈরিকৃত এযাবৎ কালের সবচেয়ে ভালো প্রামাণ্যচিত্রে পরিণত করেছে। এটি এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে দ্বিতীয় মৌসুম তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্বিতীয় মৌসুমটি ২০১৪ সালে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে এটি চীনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সিকুয়াল হতে যাচ্ছে। জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ২০টি দেশে “চীনের খাবার” ধারাবাহিকটি সম্প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে ধারাবাহিকটি শুধুমাত্র ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।

প্রথম অংশটি দেখার পর নেতৃস্থানীয় সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ডুবানে অনেক ইন্টারনেটবাসী তাদের মন্তব্য জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটির তাৎপর্য শুধুমাত্র খাবারের চেয়েও আরও অনেক বেশীঃ এটি চীনের বিভিন্ন পর্যটন স্থানকে তুলে ধরেছে এবং চীনের জনগণের গল্প বলেছেঃ   

bug君跪求逆袭: 作为一个吃货,生长在地大物博的中国是人生最美好的事!

একজন খাদ্যরসিক হিসেবে চীনে জন্মগ্রহণ করাটা যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ। এটি প্রচুর সম্পদশালী একটি স্থান। 

去他的肥肉!!: 拍得相当不错,这不仅仅是食物的故事,也是人的故事。

এটি একটি চমৎকার প্রামাণ্যচিত্র। শুধুমাত্র খাবার সম্পর্কে নয়, বরং এটি চীনের জনগণ সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেছে। 

老尘 : 原来在华夏内地还有这么多充满文化意味的地方没有去

সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ চীনের কতগুলো স্থানে যে আমার যাওয়া হয়নি, সে সম্পর্কে আমার ধারণা নাই !   

কেউ কেউ মনে করেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটি বিরাট মৃদু শক্তি হিসেবে কাজ করেছেঃ 

掉队的猪  爱国主义教育就得这么搞!

এভাবেই দেশপ্রেম শেখানো উচিৎ। 

যাইহোক, অনেকেই এটা ভেবে দুঃখ পাচ্ছেন, শিল্পায়ন এবং পরিবেশ দূষণের কারণে আধুনিক চীনে এই জীবণধারাগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছেঃ  

阿轩  美食也是一种行将消逝传统,多少有些沉重。

রন্ধন পদ্ধতি একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রথা। [যখন আমি এটা নিয়ে ভাবি] আমার হৃদয় আপনা আপনি ভারী হয়ে ওঠে। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .