ছবিঃ সিরিয় শরনার্থীদের নিয়ে পাঁচটি ছোট গল্প

এই পোস্টটি আমাদের বিশেষ কভারেজ “সিরিয়ায় বেঁচে থাকা”র একটি অংশ।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্রমাগতভাবে সিরিয়ার নাগরিকদের হত্যা করতে থাকায় যখন সারা বিশ্ব বেশ খুশি বলে মনে হচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, পত্রিকা, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং শৌখিন ও পেশাদার ফটোগ্রাফাররা ২০ লক্ষ সিরিয় শরনার্থীর (২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের আনুমানিক হিসাব) গল্প এবং দু:খ যাতনা দিয়ে ইন্টারনেট সঞ্চারিত করছেন। তা সত্ত্বেও এই পোস্টটি “সিরিয়ার বাইরে বেঁচে থাকা” হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ। কিন্তু এটি সিরিয়াতে বেঁচে থাকা, শিরোনামের আমাদের বিশেষ কভারেজের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। সিরিয় দ্বন্দ্বের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবদান তুলে ধরার জন্য এই পোস্টটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই পোস্টটির জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে সিরিয়ার জনগণের যুদ্ধে সাহসিকতার কথা উল্লেখ করতে বেশ কিছু ছবি বাছাই করা হয়েছে। সিরিয়ার শিশু এবং নারীরা তাদের আবাসস্থল ও পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে যেসব অন্ধকার, কঠিন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে, সেসব ছবির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার জন্যই এই আয়োজন। সিরিয়ার শরণার্থীরা যেসব সমাজে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে আবার তারা নানান দুর্ভাগ্যের শিকার হচ্ছে। তুরস্কে রেয়হানলি বোমা বিস্ফোরণের পর সিরিয় শরনার্থীরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়, অবশ্যই তা সিরিয়ার উদ্বাস্তু মেয়েদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করতে নয়।  

গল্প ১:

প্রায় ৩ বছরের দীর্ঘ দ্বন্দ্বের সময়টাতে সিরিয়ার যেসব শরনার্থী লেবাননে পালিয়ে গিয়েছে,তাদের ছবিগুলো ফটোজার্নালিজমাস সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টাম্বলারে পোস্ট করেছে। তাদের একটি বৃহত্তম অংশেরই বাড়ি এখন লেবানন। সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের এই বিশাল অভ্যন্তর মুখী প্রবাহকে লেবানন সামলাচ্ছে। সিরিয়ার শরণার্থীদের এই সংখ্যা আজ লেবাননের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০-২৫ ভাগ। লেখক লিখেছেনঃ

লেবাননের রাস্তাগুলোতে ঠিক কতসংখ্যক শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক কাজ করছে, তাঁর কোন দাপ্তরিক উপাত্ত নেই। হিসাব মতে, এই সংখ্যাটি ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার হতে পারে। বেইরুতের বিত্তবানদের জেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভিক্ষা করতে, আবর্জনাতে বিভিন্ন জিনিস খুঁজতে অথবা পথচারীদেরকে জুতা পালিশের প্রস্তাব দিতে দেখা যাচ্ছে। 

tumblr_mwepxmpa3T1r44q44o9_1280

একজন সিরিয় বাচ্চা মেয়ে বৈরুতের একটি বিত্তবান শহরে লাইটার বিক্রি করছে। সূত্রঃ টাম্বলারে ফটোজার্নালিজম।  

গল্প ২:

সিরিয় বিপ্লবের স্ত্রীরা” শিরোনামের অধীনে তানিয়া হাবজোকা তাঁর ১০ টি ছবির মধ্যে যে কোন একটি নিয়ে সংক্ষেপে একটি বর্ণনা লিখেছেনঃ 

২৬ বছর বয়সী উম্মে সুলেইমান একা তাঁর চার সন্তানকে (একজন কোলের শিশু সহ) নিয়ে হেঁটে সিরিয়া থেকে ইরাক এবং সবশেষে জর্ডান যাবেন। এই সফরে তাদের সাথে কোন খাবার নেই। তাঁর স্বামী যুদ্ধে যোগ দিয়ে দেশে থেকে গেছেন।

tumblr_mwhznjPNuM1rouua1o2_500

সূত্রঃ টাম্বলারে পাঁচটি সেন্ট একটি পাউন্ড। সিসি বাই ২.০ এর অধীনে ব্যবহৃত

তিনি আরো লিখেছেন

সামনের সারি থেকে এই নারীরা এখন অনেক দূরে – এখন জর্ডানে শরনার্থী – আর্থিক ভাবে নিঃস্ব হওয়া সত্ত্বেও তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে সংগ্রাম করছে। শুধুমাত্র তাদের স্বামীদের ফোন কল পেলেই কেবল তাদের প্রাত্যহিক জীবনের এই ক্লান্তিকর রুটিনে ব্যঘাত ঘটে। উগ্র লিখিত বার্তা পেয়ে আবার মিলিত হওয়ার অলীক কল্পনা পুনরায় এই বিয়েগুলোতে প্রেমের শিহরণ ঢেলে দিতে পারে।    

গল্প ৩:

মাইকেল ডেভিড ফ্রিবার্গ তাবমেলরে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সে ছবিতে বিশাল জাতারি শরনার্থী শিবিরে সিরিয়ার শিশুরা ফুটবল খেলছে। হিসাব মতে (৪ জুলাই, ২০১৩ পর্যন্ত), শিবিরটিতে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুল জনসংখ্যা এটিকে জর্ডানের চতুর্থ বৃহত্তম শহরে পরিনত করেছে।   

tumblr_mw5r3dIMjH1qb1egco1_1280

গত জুলাই, ২০১৩ তে জর্ডানের জাতারি শরণার্থী শিবিরের বাইরে সিরিয় লোকেরা ফুটবল খেলছে। সূত্রঃ মাইকেল ডেভিড ফ্রিবারগ।  

গল্প ৪:

শান্তিকে একটি সুযোগ দিন নামে টাম্বলারে একজন সিরিয় কর্মী তারেকের এই ছবিটি শেয়ার করেছেন। তিনি গ্রিসে পালিয়ে গেছেন।  

৪৬ বছর বয়সী তারেক একজন বেকার সিরিয় চিত্রশিল্পী। একটি ছাউনির ভিতরে একটি আয়নায় তাকে প্রতিবিম্বিত করা হয়েছে। গ্রিসের এথেন্সে একটি পরিত্যক্ত কারখানায় তিনি বসবাস করেন।    

tumblr_mw6ppcnawY1si73a4o1_1280

সূত্রঃ শান্তিকে একটি সুযোগ দিন। সিসি বাই ২.০ এর অধীনে ব্যবহৃত 

গল্প ৫:

আশা করি ফিরে আসবো! এই ছবিটিতে তিনজন সিরিয় ছেলের গল্প বলা হয়েছে। তারা তিনজন বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। জর্ডানের জাতারি শরণার্থী শিবির থেকে সিরিয় শরণার্থীদের এই বাসটি সিরিয়াতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। 

প্রতিদিন ৪ টি বাস ছেড়ে যায়। লোকজন নানা কারণে সিরিয়ায় ফিরে যায়। তাদের বেশিরভাগই জাতারিতে বসবাসের চেয়ে বরং সিরিয়াতে বসবাসের আরেকটি সুযোগ নিতে চায়। যেহেতু বাসে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী পরিমানে লোকজন জাতারি ছাড়তে চাচ্ছে, তাই প্রতিদিন এই পরিস্থিতি অবিশ্বাস্যভাবে আরো নিয়ত পরিবর্তনশীল হয়ে উঠছে। লোকজন এঁকে অপরের ওপর চড়ে বসছে এবং খোলা জানালা টপকে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতি সামলাতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

tumblr_mpd87yb10c1qb1egco1_1280

সূত্রঃ টাম্বলারে মাইকেল ডেভিড ফ্রিবার্গ। সিসি বাই ২.০ এর অধীনে ব্যবহৃত

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .