কানাডা জুড়ে আদিবাসীদের ‘অলসতা আর নয়’ আন্দোলন

কানাডা জুড়ে “অলসতা আর নয়” ব্যানারে ১০ই ডিসেম্বর ২০১২ তারিখ রোজ সোমবার দেশের আদিবাসী জনগণের উপর বর্তমান এবং প্রস্তাবিত সরকারী নীতির প্রভাবের প্রতিবাদ করার জন্যে হাজার হাজার জনগণ সংগঠিত হয়েছিল।

মূলধারার মিডিয়ার সামান্য মনোযোগ আকর্ষণ করলেও অলসতা আর নয় সামাজিক মিডিয়া নেটওয়ার্কে ভর করে ব্যাপক সমাবেশ, প্রতিবাদ এবং রাস্তা অবরোধ সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে এই সপ্তাহে কানাডায় টুইটারে #অলসতাআরনয় হ্যাশট্যাগকে বহুল আলোচিত করেছে।

প্রধান প্রধান শহর টরোন্টো, ওটাওয়া, এডমন্টন, উইনিপেগ এবং ক্যাগেরিতে অব্যাহতভাবে অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলোতে প্রথম জাতিসমূহের অসন্তুষ্টির যে বিস্তৃত অভিপ্রকাশ ঘটেছে তা কানাডা বহু বছর দেখেনি। আন্দোলনটি অনেকের কাছে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হওয়া “আরব বসন্ত” বিপ্লবী ঢেউয়ের আদলে “স্বদেশী(আদিবাসী) শীতকাল” হিসেবে গণ্য হয়েছে।

Indigenous Idle No More protests

অলসতা আর নয় প্রতিবাদকারীরা স্ট্যান্ডঅফ আলবার্টার ব্লাড রিজার্ভে জড়ো হয়েছে। ছবি, ব্লেয়ার রাসেল। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

অলসতা আর নয় আন্দোলনের শীর্ষ-প্রোফাইল কর্মকাণ্ডের একটি হলো এট্টাওয়াপিস্কাট প্রধান থেরেসা স্পেন্স মঙ্গলবার একটি অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি স্টিফেন হারপার এবং রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রথম জাতিসমূহের নেতাদের সঙ্গে চুক্তির জন্যে একটি মিটিংয়ে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত এটা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

তিনি বলেছেন যে রক্ষণশীল হারপার সরকার তার আদিবাসী নাগরিকদের জন্যে আরো সম্মান দেখালে তিনি তার জনগণের জন্যে মৃত্যুবরণ করতে রাজি আছেন। আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী জন ডানকান (আদিবাসী) প্রধান স্পেন্সের সঙ্গে  দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সমর্থকরা (আদিবাসী) প্রধান স্পেন্সের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং টরোন্টোসহ আরো অন্যান্য কানাডীয় শহরে ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছে।

Tগত বছরের অক্টোবরে একটি শীতকালীন আবাসন সংকটের সময় এট্টাওয়াপিস্কাট জাতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে যখন উত্তর অন্টারিও’র প্রথম জাতিসমূহের এই ক্ষুদ্র সম্প্রদায়টির মানবেতর আবাসন পরিস্থিতি লোক সমক্ষে আসে। বিক্ষোভকারীরা উল্লেখ করেছে যে এট্টাওয়াপিস্কাট ঘটনাটি প্রথম জাতিসমূহের চাহিদার প্রতি রক্ষনশীল সরকারের অবহেলার একটি উদাহরণ মাত্র।

একটি ঔপনিবেশিক সম্পর্ক

৪ঠা ডিসেম্বর তারিখে ওটাওয়াতে প্রথম জাতিসমূহের প্রতিনিধিদেরকে প্রস্তাবিত একটি বিল সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করার জন্যে তাদের হাউস অফ কমন্সে প্রবেশে বাধা দেওয়া হলে অলসতা আর নয় আন্দোলনটি শুরু হয়।

হার্পার প্রশাসনের অমনিবাস (সংকলিত) আইন বিল সি-৪৫ অলসতা আর নয় আন্দোলনের জন্যে ধারাবাহিক কান্না হিসেবে কাজ করেছে। “কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধি আইন ২০১২” নামেও পরিচিত বিল সি-৪৫ প্রথম জাতিসমূহের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়াই ইন্ডিয়ান আইনটিতে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এটি ইন্ডিয়ান আইনটি ছাড়াও নাব্য জলসীমা সুরক্ষা আইন, মৎস্য আইন এবং আরো অন্যান্য আইনসহ ষাটটিরও বেশি আইনে ব্যাপক সংশোধনী এনেছে। বিরোধীরা যুক্তি করেছে এই পরিবর্তনগুলো বিদ্যমান চুক্তিসমূহকে লংঘন এবং জল ও জমি্র পরিবেশ সুরক্ষাকে দুর্বল করেছে।

তার শক্তিশালী এবং ব্যাপক আলোচিত “আদিবাসীরা অস্থির। কেন তাই ভাবছি?” লেখাতে মেটিস ব্লগার চেলসিয়া ভাওয়েল উল্লেখ করেছেন যে এই আন্দোলনটি বিল সি-৪৫ এর বিরোধিতাকে অতিক্রম করে আরো বেশি পদ্ধতিগত রাষ্ট্র-নাগরিক সম্পর্ককে প্রতিরোধের দিকে ধাবিত হবে:

এভাবেই এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি। কানাডা নিজের কাছে ঔপনিবেশিক সম্পর্ক রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়, তবে আদিবাসীদের কাছে এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। (কিন্তু) কানাডা সেই সম্পর্ককে অস্বীকার করছে।

তিনি আন্দোলনটি ব্যাখ্যা করে চলেন:

আজকে আদিবাসীরা তাড়াহুড়ো করে চাপিয়ে দেওয়া এবং প্রথম জাতিসমূহের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই প্রণিত আইনগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্যে সমস্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন শহর এবং কমিউনিটিতে সমাবেশ করছে। আদিবাসীদের অধিকারের ক্ষেত্রে আইনগুলোর গুরুতর প্রভাব রয়েছে। ঐসবই মোকাবেলা করা সমস্যাগুলোর সব নয়। তবে এর গোড়ায় রয়েছে আদিবাসীদের সঙ্গে কানাডার চলমান এবং অস্বাস্থ্যকর ঔপনিবেশিক সম্পর্কটি। পরিবেশ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, কারারোধ, আত্মহত্যা, শিক্ষা, সহিংসতা এবং আরো অনেক সমস্যায় এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

অলসতা আর নয়” আহবানের অধীনে সমাবিষ্ট সত্যিকারের এই তৃণমূল  আন্দোলনটি সামাজিক মিডিয়াতে জনগণ যোগদানের কারণে এমনভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে যে আমি আসলেই একে অভূতপূর্ব বলতে পারি। আপনি একটি সম্মিলিত বার্তা খুঁজে পেতে চাইলে সেটা… “এই কানাডা, আমাদের উদ্বেগগুলি তোমাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া শুরু করতে হবে” ছাড়া আর কিছুই নয়।

কিন্তু শুধুমাত্র প্রথম জাতিসমূহ একাই এই মত পোষণ করে না। ৩০শে নভেম্বর তারিখে প্রকাশিত পোস্টমিডিয়া সংবাদের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল মার্টিন কানাডার আদিবাসী গোষ্ঠীগলোর নিম্নমানের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে কানাডাতে:

আমরা নিজেদের কাছে কখনো স্বীকার করিনি যে কে যে আমরা একটি ঔপনিবেশিক শক্তি ছিলাম, এবং এখনো আছি… এবং আমরা এখনো একাত্ম হয়ে যাওয়ার উপর জোর দিচ্ছি। এছাড়া অর্থায়নে বৈষম্যের অন্য কোনো কারণ, অন্য অজুহাত নেই।

আরেকটি সরকারের পদক্ষেপের গোড়ালি ধরে আসা বিল (খসড়া আইন) সি-৪৫ আদিবাসীদের সংগঠনকে দুর্বল করে দিতে পারে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত জাতীয় এবং আঞ্চলিক আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থার জন্যে কমপক্ষে ১০% বাজেট কর্তন  ঘোষণা করেছে। বাজেট কর্তনের এই উত্তরাধিকারকে জোর দিয়ে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং মেটিস-ক্রি লেখিকা তানিয়া এল (@তানিয়ালালন্দি) ১২ই ডিসেম্বর তারিখে টুইট করেছেন:

@তানিয়ালালন্দি: আমি একটি অসম বিশ্বে আমাদের জনগণের উপশম, বিকাশ, উন্নয়ন, এবং সমান তালে চলতে সাহায্য করা কর্মসূচিতে একের পর এক কর্তন দেখেছি #অলসতাআরনয়

তবে সতীর্থ মেটিস ব্লগার অ্যারন প্যাকে যুক্তি করেছেন যে বর্তমান নয়া উদারবাদী আইনটি শুধু আদিবাসীদের নয়, সকল কানাডীয়কে প্রভাবিত করবে:

এই সরকার পদ্ধতিগতভাবে আমাদের সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে আরো বেশি সম্পদকে শোষণের জন্যে হাজির করা চেষ্টা চালাচ্ছে…. এটা শুধু আদিবাসীদের প্রতিবাদের চেয়ে অনেক বড় কিছু, এটা আপনি যেখানে বাস করছেন সেই বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠার বিষয়।

ব্লগার নোরা লরেটো অ-আদিবাসীদের বিক্ষোভগুলোকে সমর্থন এবং এগুলোতে অংশগ্রহণ করার উপায় জানিয়ে একটি পোস্ট সংকলিত করেছেন।

আইকেইএ বানর বনাম অলসতা আর নয়

Idle No More Logo

ডয়েইন বার্ড এর অলসতা আর নয় লোগো। অলসতা আর নয় ফেসবুক পৃষ্ঠায় পোস্ট করা।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা এসব ব্যাপক বিক্ষোভ কাভারে ব্যর্থ মূলধারার মিডিয়ার সমালোচনা করেছে। কয়েকজন ব্লগার লক্ষ্য করেছেন টরোন্টো আইকেইএ-তে একটি কোট পরা বানর সম্পর্কিত সাম্প্রতিক কাহিনীটি কানাডা জুড়ে প্রথম জাতিসমূহের অসংখ্য মানুষের সমাবেশের চেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

তবে #অলসতাআরনয় হ্যাশট্যাগের অধীনে  অপ্রমাণিত আন্দোলনটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে  টুইটার বিস্ফারিত হয়েছিল। কার্যকলাপ সঙ্গে থেকে করেনি. ব্যবহারকারীরা সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে পরিকল্পিত মিছিল, রাস্তা অবরোধ এবং জনসমাবেশ সম্পর্কে তথ্য বিতরণ করেছে। এক্টিভিস্ট এবং লেখক ডেরিক ও’কীফে লক্ষ্য করেছেন, তারা আশা করে যে সামাজিক মিডিয়াতে একটি অব্যহত উপস্থিতি অলসতা আর নয় কাহিনীটিকে মূলধারাতে আনতে বাধ্য করবে।

দেশব্যাপী আন্দোলনটি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্যের জন্যে অলসতাআরনয়.সিএ ওয়েবসাইট খুঁজে দেখুন অথবা আন্দোলনের ফেসবুক পৃষ্ঠায় যোগদান করুন। ছবি এবং প্রচারাভিযানটি সম্পর্কে আপডেটের জন্যে আদিবাসী মাল্টি-মিডিয়া সমিতি অনুসরণ করুন

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ অলসতা আর নয় সমাবেশ ২১শে ডিসেম্বর তারিখে নির্ধারণ করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .