এই পোস্ট আমাদের স্লাটওয়াক ২০১১/১২ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদনের অংশ।
২৪ মে ২০১২ তারিখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্লাটওয়াক আন্দোলনে যোগ দিলো। এদিন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে হাঁস ফাঁস করতে করতে ১০০ নারী-পুরুষ মিছিল করে এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সংগঠকরা তাদের ফেসবুক পাতায় শহরে স্লাটওয়াকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন:
স্লাটওয়াক বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র লন্ডন, প্যারিস, শিকাগোতেই স্লাটওয়াক দেখিনি, দিল্লি, ভূপাল এবং ব্যাঙ্গালোরেও দেখেছি। আমাদের আনন্দনগরে আমরা কি অস্বীকার করতে পারবো, যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের শিকার নারী বিদ্রুপ, বিচার ও অপমানের মুখোমুখি হয় না? আমরা নিশ্চিন্তে বসে থেকে আমাদের সিস্টেমের দোষ দিয়ে নিজস্ব জীবনধারায় ফিরে যাই না? এসব কিছু ভেবেই আমরা কলকাতায় স্লাটওয়াকের আয়োজন করেছি।
ব্লগার খুশনাদ তার ইনসাইট ব্লগে লিখেছেন:
… ২৪ মে স্লাটওয়াকের জন্য কলকাতাবাসীদের এগিয়ে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আমি আমার সাধারণ জ্ঞানে ভারতে স্লাটওয়াকের উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে পারি না। তবে ভারতে নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার আমার কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ে বা নারীদের সংক্ষিপ্ত পোশাক কি তাকে ধর্ষণ করার বার্তা দেয়? যদি তাই হয়, তাহলে তিন মাসের শিশু ধর্ষিত হওয়াটাকে আমরা কিভাবে জাস্টিফাই করবো? যদি কিছু বিকারগ্রস্ত লোক (সাইকো) বলে, সংক্ষিপ্ত পোশাক তাকে ধর্ষণ করতে অথবা মেয়েটিকে উত্যক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, তখন আমরা কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবো যখন কেউ বলে “তার ব্যবহৃত সুগন্ধি আমাকে অত্যাধিক প্ররোচিত করেছে, তাই আমি তাকে ধর্ষণ করেছি।” এখানে বার্তাটি হলো নারীরা যে পোশাকই পরেন না কেন, তা যতই অন্যরকম দেখাক, এটা ভেবে নেবেন না যেন, সে আপনাকে ধর্ষণ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
শারিব আলী নামের একজন তরুণদের প্লাটফর্ম পুল-ই-জওয়ান-এ আয়োজন সম্পর্কে বলেছেন:
কলকাতার প্রায় ৩০০ নারী, এদের বেশিরভাগই কলেজ ছাত্রী, তারা রাজপথে হেঁটে যা খুশি তাই পোশাক পরার দাবি জানিয়েছেন। এজন্য তাদের যেন স্লাট বা খানকি নামে চিহ্নিত না করা হয়। তারা পুলিশি বেষ্টনির মধ্যে থেকে জনাকীর্ণ রাস্তায় হেঁটেছেন, দর্শকদের আনন্দিত করেছেন। এতে সম্ভবত ‘ভদ্রলোকীয়’ আবেগ ছোট্ট একটা হোঁচট খেয়েছে। আমার ধারণা, এটা যথেষ্ঠ সময়োপযোগী ছিল।
কৌস্তভ সেনগুপ্ত ইনজেনে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন, কলকাতার স্লাটওয়াকে শুধু নারীরাই আসেন নি। এতে পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এদের মধ্যে কিছু আবার যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন।
স্লাটওয়াকে দেখা গেছে, নারীদের পাশাপাশি পুরুষরা ছিলেন। সাঈদ সোমেক নামের একজন যশোপ্রার্থী অভিনেতা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, “এটা লৈঙ্গিক ব্যাপার নয়। এখানে একটা বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, দয়া করে আমরা কী পরেছি, সেটা দিয়ে বিচার করবেন না।”
সংগঠকরা তাদের আয়োজনটিতে সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করতে চেয়েছেন এবং তাদের ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেছেন:
নারী-পুরুষ দুই ভাগে ভাগ করা আমাদের অভিপ্রায় ছিল না… এই আন্দোলন শুধুমাত্র নারীর প্রতি জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে না… এ আন্দোলন সবার… শুধুমাত্র নারীরা কিভাবে প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে নিয়মিত পোস্ট হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে… সমতা বিধান নিয়ে আপনি কিছুই বলছেন না, কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বলছেন… এটা আমাদের মাথায় থাকলে আমরা এই মিছিলের আয়োজন করতাম না… আমরা যেকোনো মানুষ তিনি যেই লিঙ্গের হোন না কেন, তার ভুল উপস্থাপন, অপবাদ/নিগ্রহ/উত্যক্ত করার বিষয়টি লৈঙ্গিক প্রান্তিকতা এবং তা বাঁধাধরা ছাঁচের আলোকে সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছি।
মিছিলটি শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়েছে। সামনে থেকে মিছিলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া মিছিলটিতে আরো ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট, এনজিও কর্মী এবং সাধারণ জনগণ। ট্যাঙ্গুয়াল পার্কে এসে মিছিল শেষ করে প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি এবং পথ নাটকের আয়োজন করা হয়।
মূল ভিডিওটি এখানে দেখতে পাবেন।
এ আয়োজন নিয়ে টুইটারে কিছু মন্তব্য এসেছে:
পিয়ুষ (@সুয়াশপিয়ুষ) কলকাতায় ‘স্লাটওয়াক’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। পোশাক পরার স্বাধীনতাকে সমর্থন দিতে অনেকে এসেছিলেন।
উসামা খিলজি (@উসামাখিলজি) স্লাটওয়াক কলকাতা: কলেজ শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ সংস্কৃতির প্রতিবাদে রাস্তায় এসেছিল।
অন্যন্যা (@পটেটো_উইঙ্গডি) আশা করি #স্লাটওয়াকের #কলকাতা এপিসোড অনেক বেশি কাভারেজ পাবে।
অনুষ্ঠানের ছবি নিয়ে অন্য একজন টুইট করেন:
রেসপন্সিবল চ্যারিটি (@সেকুলারচ্যারিটি) আমি ফেসবুকে “স্লাটওয়াক কলকাতা ২০১২” শিরোনামে একটি অ্যালবাম পোস্ট করেছি। http://fb.me/2922lhulT
স্লাটওয়াক কলকাতার আরো অনেক ছবি আপনি এখান থেকে দেখতে পাবেন।
এই পোস্ট আমাদের স্লাটওয়াক ২০১১/১২ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদনের অংশ।