মরোক্কো: খ্রিষ্টানরা কি বিপদের সম্মুখীন?

গত মার্চের প্রথম দিকে, আমরা দেখেছি যে দীর্ঘদিন করে এতিমখানায় কাজ করতে থাকা প্রায় ২০ জন খ্রিষ্টান সাহায্যকর্মীদের সেই দেশ থেকে বের করে দেয়া হয় যাকে তারা তাদের বাড়ি বলত। এই ঘটনা, আর এর পরের গুলো, মরোক্কোতে খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে যে বিতর্ক চলছে তা তুলে ধরেছে।

যদিও মরোক্কোর সরকারী ভাষ্য হল যে তার জনসংখ্যার ৯৮.৭-৯৯ শতাংশ মুসলিম (বাকি প্রায় ১% খ্রিশ্চান আর ০.২% ইহুদি), এই হিসাবের মধ্যে জাতিগত ইউরোপিয়ান আছেন যারা মরোক্কোতে বাস করেন। ধর্মান্তর করা বেআইনি এখানে, যেমন ইসলাম থেকে অন্য ধর্মে যাওয়া। তারপরেও বিদেশী খ্রিষ্টানদের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে দেয়া হয়। আর বেশ কিছু গির্জা আছে দেশে, বেশীরভাগ ফরাসী উপনিবেশ আমলের। এর সাথে তুলনায় দেশের ক্ষুদ্র ইহুদি গোত্র প্রায় পুরোটাই স্থানীয়, আর তাদেরকে তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে দেয়া হয়।

ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে সরকার এখন ধর্মান্তরের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছেন, সত্যি আর কাল্পনিক, দুই ক্ষেত্রেই। দ্যা মরোক্কোন ডিস্প্যাচেস সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা বলেছেন যেখানে একজন মিশরীয় ক্যাথলিক পাদ্রী কে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়:

ইভাঙ্গেলিকানরা অনেক বছর ধরে মরোক্কোতে কাজ করছেন, তাদের প্রধান লক্ষ্য হল মুসলিমদের ধর্মান্তর। ক্যাথলিকরা এর থেকেও বেশী দিন ধরে কাজ করছেন, কিন্তু ইচ্ছা করে ধর্মান্তরের চেষ্টা করেননি। তাই এটা বিস্ময় হিসাবে এসেছিল যে একজন ক্যাথলিক পাদ্রীকেও গত সপ্তাহের অভিযানের সময়ে আটক করে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এই ব্লগার মরোক্কোতে কাজ করা একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজকের বার্তা জানিয়েছেন:

মার্চ ৭ রবিবার, প্রার্থনা শুরুর পাঁচ মিনিট আগে; লারাচ শহরের পুলিশ আমাদের আশ্রমে প্রবেশ করে একজনকে গ্রেপ্তার করেন, তরুণ একজন মিশরীয় ধর্মযাজক রামি জাকি, যিনি এক বছর আমাদের সাথে ছিলেন, তাকে আদেশ দেয়া হয় পুলিশের সাথে যাওয়ার জন্য। কোন কিছু সাথে নেয়ার সুযোগ পায়নি সে, আর তার গ্রেপ্তারের কোন কারন জানান হয়নি…

… রামিকে যখন প্লেনে তোলা হয়, তার পাসপোর্ট তার কাছ থেকে নিয়ে পাইলটের কাছে দেয়া হয় যে সেটা পরে কায়রোতে পুলিশের কাছে রামিসহ জমা দেন। তাকে কায়রোতে পুলিশ আরো সাত ঘন্টার জন্য আটক করে রাখেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যার পরে তাকে অন্যান্য পাদ্রীর সাথে যোগাযোগের সুযোগ দেয়া হয়। রবিবার, তার গ্রেপ্তারের দিন থেকে, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত, যখন তাকে ছেড়ে দেয়া হয়, ৫০ ঘন্টার বেশী সময়- রামি মরোক্কো আর মিশরের পুলিশ দ্বারা সকল মানবাধিকার বঞ্চিত ছিলেন।

আর একটা পোস্টে, ব্লগার জানিয়েছেন যে জনগণ এই কাজে সহায়তা করছে; একটা ঘটনার কথা বলে যেখানে অনেক দিনের পুরানো ক্রুশকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়:

যেখানে একসময়ে ক্রুশ ঝুলত

যেখানে একসময়ে ক্রুশ ঝুলত


মেকনেস মেদিনার এই স্থানে একটি ক্রুশ ঝুলত। যেসব ক্যাথলিক মরোক্কোর ভাষা আর চাকুরির যোগ্যতা শেখান এই বাড়িতে ধর্ম প্রচারে এ জড়িত না। কিন্তু তারা খ্রিষ্টান বিরোধী মনোভাবের শিকার হয়েছেন সম্প্রতি খ্রিষ্টানদের বের করে দেয়ার ঘটনার পরে। গত সপ্তাহে এই ক্রুশটিকে নামিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

ভালো দিক চিন্তা করলে, যেসব মরোক্কোবাসী তাদের কাজ থেকে উপকার পেয়েছেন তারা ক্রুশটি পুনর্নিমাণ করে দিতে চেয়েছেন।

সাম্প্রতিক একটা পোস্টে, একই ব্লগার এই পরিস্থিতিতে তেলকুয়েলে প্রকাশিত একটা রিপোর্টের মূল্যায়ন করেছেন, আর সেই সম্পর্কে বলেছেন:

মূল প্রতিবেদনে, বলা হয়েছে যে বেশীরভাগ মরোক্কোবাসী খ্রীষ্টান হন আরবি মিডিয়ার কারনে, বিদেশী ধর্মযাজকদের কারনে না। এটা আমার অভিজ্ঞতার সাথে তালে তাল মেলায়। আমি বেশ কিছু মরোক্কোবাসীকে চিনি যারা খ্রীষ্টান ধর্মযাজকদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ধর্ম নিয়ে কিন্তু কেউ ধর্মান্তরিত হননি। কেউ কেউ ইসলামকে সমর্থন করেছেন নেশা করতে করতে কেবলমাত্র খ্রিস্টানদের ক্ষুব্ধ করার জন্য – এর থেকে বোঝা যায় কতজন মরোক্কোবাসী তাদের ইসলামি পরিচয় বোঝেন। বিদেশী ধর্মযাজকদের ব্যাপারে এই তথ্য অবশ্য সম্প্রতি অনেক বিদেশীদের বের করে দেয়াকে ছোট করে দেখায়।

পরিশেষে, ব্লগার সম্প্রতি মিডিয়ার উপরে আঘাতের ব্যাপারে বলেছেন আর দু:খ করেছেন যে:

অন্যান্য মিডিয়া যারা সরকারের সমালোচনা করছে তাদেরকে বন্ধ করা হয়েছে। আর একই জিনিষ হতে পারে তেলকুয়েলের সাথে। কিন্তু যতক্ষণ তারা আছে, অন্তত কিছু বিতর্ক আর সমালোচনামূলক চিন্তা থাকবে বর্তমান ঘটনা নিয়ে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .