কিরগিজস্তান: শয়তানের খপ্পরে

কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক দল ইআরকে-এর (এরকিন কিরগিজস্তান-যার অর্থ, কিরগিজস্তানকে মুক্ত কর) নেতা সাইরবেক ঝুশুয়েভ। তিনি কিরগিজস্তানের অনেককে এক বিস্ময় উপহার দিতে সক্ষম হন, যখন তিনি ঘোষণা দেন যে দেশটির রাজধানী বিশকেক অনেক বছর ধরে শয়তানের খপ্পরে পড়ে রয়েছে। তার এই ঘোষণার কারণ, শহরটির মাঝে শয়তানের এক বিশাল প্রতীক চিহ্ন রয়েছে। তার মতে এটি শয়তানের অনুসারীদের কাজ। ঝুশুয়েভ বলেছেন, যখন তিনি গুগল আর্থ নামের মানচিত্র দেখার সাইটে ঘোরাফেরা করছিলেন, তখন তিনি এই প্রতীক চিহ্ন আবিষ্কার করেন। গুগল আর্থে তিনি অনেক উপর থেকে বিশকেক শহরটিকে কেমন দেখায় সে সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করছিলেন। বিশকেক শহরের ঠিক মাঝখানে পানফিলভ উদ্যানটি অবস্থিত। এটি সংসদ ও হোয়াইট হাউজ নামক ভবনের ঠিক পাশেই অবস্থিত। উদ্যানটিকে পঞ্চভূজাকৃতির এক তারার মতো করে তৈরি করা হয়েছে, যা সারা বিশ্বের সবজায়গায় শয়তানের উপাসকদের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২৪.কেজি ঝুশুয়েভের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছে [রুশ ভাষায়]:

আমি বেশ কৌতূহলজনক একটি চিত্র দেখতে পেলাম-উপর থেকে পানফিলভ উদ্যানে পাঁচটি কোণা তৈরি করে এমন এক জ্যামিতিক আকার রয়েছে, যা পেন্টাগ্রাম বা পঞ্চভুজ হিসেবে পরিচিত: এটি শয়তানের প্রতীক অথবা যাকে “সিগিল অফ বাফমেট” ( বাফমেন্ট: কারো কাছে প্রাচীন দেবতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত, আবার কারো কাছে, হজরত মোহাম্মদ (স:)-এর দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত, বিষয়টি মধ্যযুগে এক কবিতায় বর্ণনা করা হয়েছে) নামে জানা যায়- চার্চ অফ স্যাটান যা শয়তান পূজারীদের উপাসনালয়ের প্রতীক চিহ্ন। এটা বলা অবান্তর যে, ঘটনাক্রমে এটি শহরের মানচিত্রে প্রকাশ পেয়েছে, অথবা এটা প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতাকায় থাকা সেই তারকা চিহ্ন। বিশেষ করে যখন এর চেহারা নির্ভুলভাবে পৃথিবীর প্রতীয়মান বিন্দু বা কোণের সৃষ্টি করে।

এরক এর নেতা সাইরবেক ঝুশুয়েভ মনে করেন, বিসকেক নগরী থেকে এ ধরনের ধর্মীয় প্রতীক চিহ্ন অপসারণ করার এখনই সময়, বিশেষ করে যখন সেটি কাজাখস্তানের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব কোন ধর্মের প্রতীক নয়। ঝুশুয়েভের পূর্বে এরক পার্টির প্রধান ছিলেন তুরসানবি বাকির ঊলু। তিনি কিরগিজস্তানের প্রাক্তন ন্যায়পাল (সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে জনতার আনা অভিযোগের বিচার করেন যিনি)। তিনি ইসলামপন্থী বিবৃতি প্রদানের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তুরসানবি বাকির ঊলু কিরগিজস্তানের মুসলিম ইউনিয়নের প্রধান এবং এআরকের একজন সদস্য। তিনি এ বছরের শুরুতে বিশকেকের কেন্দ্রস্থলে ইজরায়েলের পতাকা পুড়িয়েছেন। এটি তিনি করেছিলেন গাজায় তাদের অভিযানের প্রতিবাদের কারণে।

কিরগিজস্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সক্রিয়ভাবে বিসকেকের তথাকথিত সবচেয়ে বড় শয়তানের প্রতীক নিয়ে আলোচনা করছে। এই বিষয় নিয়ে বিতর্কে সবচেয়ে সক্রিয় রয়েছেন ইন্টারনেট ফোরাম ডিজেল এর ব্যবহারকারীরা।

এলেক্স বলছে, পঞ্চভূজ একটা সাধারণ প্রতীক এবং তার সাথে সাধারণত ধর্মের কোন যোগাযোগ নেই [রুশ ভাষায়]:

এই অর্থহীন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। তাদের [এরক-এর সদস্য] এই সব বিষয় নিয়ে গবেষণা করা ছাড়া আর যেন কিছু করার নেই! এই ধরনের তথাকথিত শয়তানের প্রতীক প্রত্যেকটি পুলিশের জামার কাঁধে এক লম্বা ফিতায় বাঁধা রয়েছে এবং একটি প্রতীকের প্রত্যেক কোণের বিষয়টি হল- এই সব কোণ দিয়ে সহজেই আকাশের তারা আঁকা যায়। একই ভাবে এটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এক প্রতীক চিহ্ন।

ফোটো.কেজি অভিযোগ করেছেন উক্ত দলের নেতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর মনোযোগ প্রদান করছে না। তবে তারপরেও ব্লগার আনন্দিত এই কারণে, যে নেতা কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানে [রুশ ভাষায়]

আমি মনে করি এআরকে দলের নেতার কিছুই করার নেই…আমি আনন্দিত যে দলের সদস্যরা কম্পিউটারে গেম খেলা ও ইন্টারনেটে অশ্লীল কোন সাইটে প্রবেশ করার বদলে, কম্পিউটার ও গুগল মানচিত্র ব্যবহার করা শিখছে।

ডন.স্পিকইংলিশ মনে করেন যে সারিবেক ঝুশুয়েভেকে অবশ্যই বিসকেক শহরের ইতিহাস সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে হবে [রুশ ভাষায়]।

জনাব: ঝু্শুয়েভেরে হয়তো জানা নেই যে এই উদ্যানটিকে এক সময় স্টার বা তারা উদ্যান বলে ডাকা হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই উদ্যানটিকে পানফিলভ নামে ডাকা হয়।

কাজাক্স! ব্লগ কিছু তথ্য প্রদানের মধ্যে দিয়ে ঘটনার পরিহাস করেছে [রুশ ভাষায়]:

এদিকে দেখুন! ফেরির (ছোট জাহাজ) চাকাগুলোকে শয়তানের চাকা নামে ডাকা হয় (রুশ ভাষায় Чертово колесо)। এটা সবকিছুর ব্যাখ্যা করে! এ কারণেই উদ্যানটি শিশু এবং তরুণদের এতটা আকৃষ্ট করে- যাদের মনের বেশ দ্রুত পরিবর্তন হয়। ধনীদের বাসায় সাঁতার কাটার স্থান এবং জুয়া খেলার জায়গা রয়েছে [পার্কের এলাকার কাছেই] যারা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে, পরিস্থিতি সেগুলোকে ঠিক করে দেবে।

যদি প্রতীকের কথা বলা যায়, তা হলে কাজাখস্তানের অনেক জায়গায় এখনো সোভিয়েত যুগের অজস্র প্রতীক ও চিহ্নের দেখা যায়, যার মধ্যে রয়েছে পঞ্চকোণাকৃতির তারা, লেলিনের মূর্তি, হাতুড়ি ও কাস্তে, ইত্যাদি।

এছাড়াও লেখাটি নিউইউরাশিয়া পোস্ট করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .