অস্ট্রেলিয়া: বাচ্চাদের ভুগতে দাও

উন্নত বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে থাকবে আশ্রয় প্রার্থী আর বেআইনী অভিবাসীর ব্যাপারটি। সমুদ্র থেকে আশ্রয় প্রার্থী তুলে আনা একটা কার্গো জাহাজ তাম্পার আগমনের পরে প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড ২০০১ সালের অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে সীমান্ত নিরাপত্তাকে মূল বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছিলেন যা আশানুরূপ ফলাফল নিয়ে এসেছিল ।

অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে তার উত্তর সূরী কেভিন রুড আর একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন:

প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড বলেছেন এই সপ্তাহান্তে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ ২৬০ জন অস্ট্রেলিয়ায় যাত্রা কারী শ্রীলংকার নাগরিককে ধরার আগে তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুশিলো বাম্ব্যাং ইয়োধোইয়োনোর সাথে কথা বলেছেন ।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পরে আশ্রয়প্রার্থী থামানো হয়েছে

বিশিষ্ট ব্লগার মার্ক কেনি এ্যাডেলেইডে সংবাদ লিমিটেড এর সংবাদপত্র দ্যা এডভার্টাইজারের রাজনৈতিক সম্পাদক। তিনি ব্লগ করেন দ্যা পাঞ্চে, যেটি নিউজ লিমিটেড এর কর্মী, ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের আর বাছা কয়েক ডজন স্বাধীন লেখককে একত্র করে একটা অনলাইন উদ্যোগ। তার মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর ছিল:

এই সপ্তাহে এ্যাডিলেইডে একটা সাক্ষাৎকারে, কেভিন রুড ‘কঠিন’ আর কঠোর’ শব্দ ব্যবহার করেছেন বারবার আর বারংবার বলেছেন যে সরকার নৌকার মানুষদের সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য ‘কোন ক্ষমা প্রার্থনা করবে না'।

দুই নেতার প্রতি তার নিন্দা একই মাত্রার ছিল:

বিশ্বে বলপূর্বক স্থান চ্যুত দের (এমন ৪ কোটি বিশ লাখ লোক আছে বিশ্বে) মানবাধিকারের চেয়ে বড় প্রশ্ন আর বর্তমানে নেই। আর রাজধানীর মতো, মানুষের যাতায়াত একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা।

সরকারের তাদের সিদ্ধান্তের জন্য সাহস থাকা উচিত আর এর বিরুদ্ধে যে ভীতির প্রচারণা শুরু হয়েছে তার মুখোমুখি হওয়া উচিত। যদি কোথাও প্রমাণ- সাপেক্ষে নীতির ব্যাপার ছিল, এটা এখানে আর এখন দরকার। এটা আসল নৈতিক নেতৃত্ব হবে- ভোটাররাও এটা সম্মান করে।

আমার নাম কেভিন রুড, আর আমি ঠিক জন হাওয়ার্ডের মত

দ্যা অস্ট্রেলিয়ান কন্জারভেটিভ ব্লগে মার্ক হেন্ডারসন অবশ্য এর বিপরীত ধারণা পোষণ করেন:

নৌকা মানুষদের প্রতি হাওয়ার্ড সরকারের কঠোর কিন্তু খুবই সফল নীতি কেভিন রুড পাল্টিয়েছেন আর এর ফলে দুই হাজার বেআইনি অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ার ভূমিতে আসতে পেরেছে।

…কি রসিকতা।

‘সব থেকে কঠোর সিদ্ধান্তের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে একটা ফোন ছাড়া আর কিছুই নেই। রুড প্রস্তুত না হাওয়ার্ড সরকারের করা কঠিন সিদ্ধান্ত গুলো করতে, যেসব সিদ্ধান্ত মিডিয়া আর বিশিষ্ট মন্তব্যকারীদের মধ্যে সেটাকে খুবই অ-জনপ্রিয় করে তুলেছিল, কিন্তু যে সিদ্ধান্ত আসলেই বেআইনী অভিবাসীদের আসা বন্ধ করেছিল আর সমুদ্রে মানুষের মারা যাওয়া রোধ করেছিল।

বেআইনিদের সাথে কঠোর? কাকে তিনি বোকা বানাতে চাচ্ছেন?

গাই বেরেস তার নিজের নামের ব্লগে বিষয়টি উপস্থাপন করেন এইভাবে: ‘সামাজিক গণতন্ত্র, অর্থনীতি, মিডিয়ার ব্যাপারে চিন্তা আর অশোধনীয় হতাশার যুগে ঘুরপাক খাওয়া। এই ব্যাপারে দীর্ঘ আর প্রবাল অনুরাগ দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন আর তর্ক করেছেন:

বিরোধী দল মনে হচ্ছে মরিয়া ভাবে চাচ্ছে আশ্রয়প্রার্থী বিষয়ে তাদের নিজেদের ঐতিহাসিক অবস্থানের সাথে রুড সরকারের কিছুটা নমনীয়, আর একটু মানবিক পদক্ষেপ এর সাথে তুলনা করতে। আগের সরকারের বাধ্যতামূলক আর সীমাহীনভাবে আশ্রয়প্রার্থীদের ধরে রাখার যে বাজে ব্যাপারটি ছিল তা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়ে, বিরোধীদল আমাদের মনে করাতে চাচ্ছেন যে নৌকা মানুষদের প্রতি তারা ‘কঠোর’ ছিলেন, আর লেবার ‘তত কঠোর না’। এই ধরনের আক্রমণের সাথে তাল মিলিয়ে, কলম্বো বা অন্য কোথাও থেকে থেকে যে কয়টা ভাঙ্গা নৌকা বের হয় অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে মন হয় হাওয়ার্ড সরকারের বিস্তৃত রেকর্ডের তুলনায় রুড সরকারের নীতির বিফলতাই তুলে ধরে।

নৌকা মানুষের ফারপি* আবার শুরু হয়েছে।

* ঘটনাক্রমে ফারপি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান একটা শব্দ যা মিথ্যা রিপোর্টের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

তবে এইসব শ্রীলংকার আশ্রয়প্রাথীদের কাছ থেকে আরও কিছু শোনা বাকী আছে যারা এখন খাওয়া বন্ধ করে বসে আছে:

গত রাতে যে ২৫৫ জন শ্রীলংকার আশ্রয়প্রার্থী ভুখ হরতাল করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে তারা তাদের নৌকা ছেড়ে আসবেন না বা পানিও খাবেন না, প্রচণ্ড গরম থাকা সত্ত্বেও।

একটা অল্প বয়সী মেয়ে যে তাদের পক্ষ থেকে আশ্রয়ের আবেদন করেছিল এখন ব্যক্তিগত আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে:

এর মধ্যে শ্রীলংকার হাই কমিশনার, সেনেকা ওয়াল্গাম্পপায়া, নৌকায় থাকা নয় বছরের মেয়ে বৃন্দার বর্ণনার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, যে তামিলদের সাহায্য করার জন্য আবেদন করেছিল। “সে কেঁদে কেঁদে বলেছে,’ আমরা এক মাস জঙ্গলে ছিলাম’, তিনি বলেছেন। কিন্তু সে বেশ পুষ্ট ছিল আর ভালো ইংরেজী বলে। সে অবশ্যই শ্রীলংকান না।“

অবস্থান ধর্মঘটে নৌকার লোকেরা দানাপানি নিচ্ছেন না

এই লাগাতার টানাটানিতে মনে হয় না কেউ নিরপরাধ আছেন। এটা এমন ব্যাপার না যে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এবিসি) সংবাদের ওয়েবসাইটে গেলেই এটা নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে। রিফিউজি ট্যাগে ক্লিক করলে সাম্প্রতিক কয়েক ডজন সংবাদ উঠে আসে অস্ট্রেলিয়াকে ঘিরে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .