পাকিস্তান: তালিবানকে প্রতিরোধ করা

পাকিস্তানের সরকার দেশে আর বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হচ্ছে তালিবানদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেয়ার জন্যে। এই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মহামারির মতো অনেক দিন ধরে পাকিস্তানে বিস্তার লাভ করছে। তালিবান বিদ্রোহীরা বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমের সীমান্ত এলাকায় তৎপর আর সোয়াত উপত্যকা এলাকায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। পাকিস্তান সেনা বাহিনী আর তালিবানপন্থী দলের মধ্যে সহিংস যুদ্ধের পরে গত মাসের তালিবানদের সাথে শান্তি চুক্তি ছিল উত্তেজনা কমানোর একটা উদ্যোগ। কিন্তু এই চুক্তি অনেক বিতর্কিত হয়েছে কারন তালিবানপন্থী দলগুলোকে কট্টর ইসলামিক শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য এতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এই শান্তি চুক্তি এলাকায় সংঘর্ষ বন্ধ করবে এমন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এটা ভুল প্রমানিত হয়েছে যা পাক টি হাউস জানিয়েছেন:

ইসলামপন্থীদের দাবীর কাছে নতি শিকারের দুই সপ্তাহের মধ্যে আর সোয়াত উপত্যকাব্যাপী শরিয়া আইন প্রণয়নের পরে, জেলার রাজধানীতে সশস্ত্র জঙ্গীরা রাস্তায় মহড়া দিচ্ছে আর বাইরের জেলাগুলোতে মুখোশ পরা বন্দুকধারীরা টহল দিচ্ছে। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করছে আর মেয়েদের স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য করছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী তালিবানের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যুদ্ধ শুরু করে আর এর পর থেকে যুদ্ধ বিস্তৃত হচ্ছে। চৌরঙ্গী জানিয়েছে:

সেনা অভিয়ান চলছে তিনটা জেলায় যা প্রায় ৪০০ বর্গ মাইল (১০৩৬ বর্গ কিলোমিটার ) এলাকা জুড়ে, কিন্তু বেশীরভাগ যুদ্ধ হচ্ছে প্রধান শহর মিঙ্গোরাতে, যা তিন বছর আগের অভ্যুত্থানের আগে প্রায় ৩৬০০০০ জন লোকের আবাসস্থল ছিল। সেনারা দাবী করেছে সোয়াত আর কাছের বুনার এলাকায় ১৪৭ জনের বেশী জঙ্গীকে হত্যার। কর্মকর্তারা জনসাধারণের নিহত হওয়ার কোন কথা জানাননি। কিন্তু যারা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে তারা পুরো পরিবার দিকভ্রষ্ট শেলের আঘাতে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।

প্রায় পাঁচ লাখ পাকিস্তানী এই যুদ্ধের কারনে স্থানচ্যুত হয়েছে আর এটা একটা মানবিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আর এটা সহজে শেষ হবে না। আফগানিস্থান, পাকিস্তান আর আমেরিকার মধ্যের সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় আলোচনা পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শপথ নেয় জঙ্গীদের শেষ করার, যা চুপ! চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান জানিয়েছে

তবে পাকিস্তান সেনার দাবি ১০০% সত্যি নাও হতে পারে। তিথ মায়েস্ট্রো বুনার থেকে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে খবর দিয়েছে:

সেনারা জনসাধারণকে নিশানা করছে জঙ্গীদের ঘাটির বদলে যার ফলে নিহতের সংখ্যা ১০০র বেশী হয়েছে। আইএসপিআরের রিপোর্ট মিথ্যা। তাদের ৮০ জন তালিবানকে হত্যার দাবী ভিত্তিহীন। সব সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। সাংবাদিকদের এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয়না আর স্থানীয় সাংবাদিকরা হয় পেশওয়ারে বসে আছে আর না হলে সত্যি লিখছে বা বলছে না তালেবান আর সেনাদের ভয়ে।

এর ফলে প্রশ্ন ওঠে যে “কে যুদ্ধে জিতছে?”

এইবারে তালিবানদের জন্য জনগণের কম করুণা আছে। কিন্তু অল থিঙ্গস পাকিস্তানের আদিল নাজাম জানিয়েছে:

এটা অবাক হওয়ার মতো হবে না, যে অন্তত কেউ কেউ, হয়তো অনেকে, আর সম্ভবত বেশীরভাগ, “অনুদার, ‘অসম্ভ্রান্ত”, পাকিস্তানী মুসলিমরা তালিবানদের আর তাদের কর্মকান্ডকে সমর্থন করবে না যা তারা পাকিস্তান, পাকিস্তানী, বিশেষ করে পাকিস্তানী মুসলিমদের বিরুদ্ধে করছে। তবে দু:খজনক হলো অনেক পাকিস্তানী তালিবানের বিস্তৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ আর আরো বেশী পরিমানে ভীত বা চাচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে।

অল থিঙ্গস পাকিস্তান আরো বলেছে যে “তালিবানরা মূল বিষয় না। কাযর্কর নিরাপত্তা আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মূল সমস্যা”:

আমাদের এনডাব্লুএফপি তে যুদ্ধ করতে হবে। তবে কিভাবে জিততে হবে এটা ঠিক না করে যুদ্ধ করতে চাওয়া বিলাসিতা। তালিবানদের নিয়ন্ত্রণ করলেই পাকিস্তানের মানুষের কষ্টকে কমিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট করা যাবে এটা ভাবা বোকামি।

জাহানে রুমি তালিবানদের সম্পর্কে কিছু গুজবে উন্মোচিত করেছে যাতে মানুষ সত্যের মুখোমুখি হতে পারে:

পাকিস্তানে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলছে তা জিহাদ না বা শরিয়া প্রতিষ্ঠার জন্যেও না। এগুলো অপরাধ্মূলক সংঘাত যা হাজার হাজার নিরাপরাধ নাগরিক আর পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে হত্যা করছে আমাদের দেশের উপরে নিয়ন্ত্রণ আর ক্ষমতা দখলের জন্য।

একই পোস্টে পাকিস্তানের আমাঙ্কার তেহরিক (শান্তি প্রক্রিয়া) সংস্থার কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে:

  • সেনা সহ সকল সরকারী ডিপার্টমেন্ট পরীক্ষা করা উচিত যারা সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে এমন মানুষ বেছে বাদ দেয়ার জন্য নাহলে কোন সরকারী নীতি ঠিকমত কার্যকর হবে না।
  • যদিও আমেরিকা আর তাদের মিত্ররা এই সমস্যা মূলত তৈরি করেছে, কিন্তু বর্তমানে সরকারের উচিত এই সন্ত্রাসীদের সাথে আলোচনা করার সময়ে পাকিস্তানের আর মানুষের স্বার্থ আগে দেখা।
  • আমরা, মানুষরা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় আর সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকারকে সমর্থন করতে চাই। আমরা সরকার আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তাদের অঙ্গীকার দেখাতে আর সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করতে তাদের পরিষ্কার মনোভাব দেখাতে।
  • আমরা মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি সন্ত্রাসীদের ‘ইসলামের সেনা বা স্বাধীনতা যোদ্ধা’ হিসাবে না দেখাতে আর সাধারণ মানুষের আর পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি তাদের নৃশংসতার কথা তুলে ধরতে।

এখন প্রশ্ন হলো ”পাকিস্তানের পুরোন বহুমুখী সংস্কৃতি কি পারবে তালিবানদের আগ্রাসন রোধ করতে?”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .