অস্ট্রেলিয়া: ক্রিকেট সন্ত্রাসের উপর প্রতিক্রিয়া

বৃটিশ উপনিবেশিকতার যে ঐতিহ্য তার উপনিবেশগুলো প্রায় সবাই বহন করে তার নাম ক্রিকেট। লাহোরে শ্রীলংকার ক্রিকেটারদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর অস্ট্রেলিয়ান ব্লগগুলোতে ক্রিকেট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ।

প্লানেট ইর্ফ-এর ইরফান ইউসুফ বিষয়টি দেখছেন এভাবে:

পাকিস্তান নিজেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচয় দিতে পারে কিন্তু সকল পাকিস্তানীদের মধ্যে যা সত্যিকারের ধর্মের মত তা হল ক্রিকেট। পাকিস্তান এক ক্রিকেট পাগল জাতি। আমি পাকিস্তানে থাকার সময়টা স্মরণ করতে পারি: যখন একটি বিদেশী দল পাকিস্তান সফরে এসেছিল, তখন জনাকীর্ণ রাস্তা প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। সে সময় রাস্তার দোকানগুলো খোলা ছিল কিন্তু দোকানদারদের চোখ খদ্দেরদের বদলে টিভি সেটের সামনে আঁঠার মতো আটকে ছিল।

১৯৯০ এর দশকে একজন পাকিস্তানী মুফতি হাসির পাত্রে পরিণত হন যখন তিনি ফতোয়া দেন যে ক্রিকেট খেলা হারাম (ধর্মীয় আইনে নিষিদ্ধ)। এই ফাতোয়া প্রদানের কারণ? তার দাবী মোতাবেক যারা ক্রিকেট খেলা দেখে তারা আসলে নামাজ পড়ার জন্য খুব কমই সময় দেয় (নামাজ মুসলিমদের জন্য অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য, দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তে হয়) এবং পাকিস্তানী মেয়েরা পাকিস্তানী বোলার যেমন ইমরান খান-এর বল নিয়ে শরীরের বিশেষ এলাকায় ঘষার কারনে উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারে।

সম্ভবত ইসলাবাদরে ম্যারিয়ট হোটেলের বোমা বিস্ফোরণ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের একটা ধাক্কা দেয়, কিন্তু ক্রিকেট পাকিস্তানে এমন এক বিষয় যা সকল শ্রেণীর মানুষ উপভোগ করে। এখানে বস্তির মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদের জন্য নির্মিত প্রাইভেট স্কুলের টার্ফের তৈরী পীচেও ক্রিকেট খেলা হয়। ক্রিকেটার, সে পাকিস্তানী কিংবা বিদেশী যেই হোক না এই ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মের একজন সাধু হিসেবে তাদেরকে বিবেচনা করা হয়। আম্পায়াররা (যখন তারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত দেয় সে সময় ছাড়া) এখানে যেন এক উঁচু মার্গের সন্ন্যাসী।

অন্যদের সন্দেহমূলক দাবীর পরিপেক্ষিতে তিনি প্রশ্ন করছেন:

এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী কে? মুসলিম সন্ত্রাসবাদী? তামিল টাইগার?

পাকিস্তান : লাহোর বিস্ফোরণের উপর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য—–

মেলবোর্নের হেরাল্ড সান পত্রিকার বির্তকিত সাংবাদিক এবং ব্লগার এ্যান্ড্রু বোল্ট মূল ব্যাপারটি এড়িয়ে যাবার বিষয়টি পছন্দ করছেন না:

ক্রিকেটার শটস

আমি মনে করি, ক্ষমা চাওয়ার অধিকারও শেষ হয়ে আসছে। আমেরিকা, আমরা বলছি তোমার আগ্রাসী মনোভাবই ৯-১১ মতো ঘটনাকে টেনে এনেছে। আমেরিকার পক্ষ অবলম্বন করে, আমরা অস্ট্রেলিয়ানরা, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের বোমা বিস্ফোরণকে আহবান করেছি। মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে মুম্বাই- আক্রমণের মতো ঘটনায় উৎসাহ দিয়েছে ভারত। কিন্তু শ্রীলংকা? পৃথিবীতে কোন উন্মাদ রয়েছে যে এর জন্য তাদের অভিযুক্ত করবে? এখন আমরা কি ‘বর্ণবাদী’ পরিচয় না শুনেই রাজনৈতিক সংঘাতে ইসলামের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করতে পারি?

একজন নিয়মিত রাজনৈতিক ব্লগার ডাকপন্ড। তার ক্রিকেট টীম এ্যাটাকড পোস্টে তিনি শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ায় খুব জনপ্রিয় ব্যাক্তি যিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও পরবর্তীতে রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন সেই ইমরান খানকে দিয়ে:

ইমরান খান ক্রিকেটের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তিনি বলেছেন, শ্রীলংকান ক্রিকেট দলের জন্য পাকিস্তান সরকার যে স্তরের নিরাপত্তা দিয়েছিল তা একটা কেলেংকারিপূর্ণ ব্যাপার। তিনি জানান, পাকিস্তান সরকার নিরাপত্তার বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে অথবা বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা প্রদানে অযোগ্য। তিনি পাকিস্তানের স্থিতিশিলতার ব্যাপারে চিন্তা ব্যক্ত করেছেন।

পাকিস্তানের সামরিক শাসন ইতিহাসে সংবাদপত্রে সর্বোচ্চ প্রচারণা পাওয়ার জন্য কোন বিশেষ নরম লক্ষ্যবস্তুর উপর সংঘবদ্ধ আক্রমনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। পশ্চিমের সমর্থনপুষ্ট বিশেষ করে আমেরিকার সমর্থন লাভ করা পাকিস্তানে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কারনে এবং পরমাণু শক্তি অর্জনের ফলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসছে না।
কিন্তু তিনি এই আক্রমণকে, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।

সাত বছর আগে আফগানিস্তানের উপর আক্রমণ-এর মধ্যে দিয়ে ধরে নেওয়া হয়েছিল সন্ত্রাসকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার এটা এক সমাধান। এই ধরনের সমাধান সম্ভব হয়েছিল এন্টিগুয়া বা পানামার ক্ষেত্রে। কিন্তু যেমনটি ভাবা হয়েছিল আসলে তাই ঘটেছে। এই এলাকা সমন্ধে সামান্য জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও বুঝতে পারছে যে এই পদক্ষেপ স্থিতিশীলতা আনতে অক্ষম হয়েছে যদি তাকে ধবংসাত্বক নাও বলি।

স্কেপটিকলইয়ারও যথারীতি ইমরান খানের উদ্ধৃতি তুলে ধরে আরো নেতিবাচকভাবে তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন:

পাকিস্তান শিটস ইন ক্রিকেটিং নেষ্ট

ইমরান খান বারবার আশ্বস্ত করেছিলেন যে যে সন্ত্রাসীরা কখনও পাকিস্তানে ক্রিকেটারদের উপর আক্রমন করেনি (তালেবানরা এই খেলার উপর তাদের ভ্রুকুটি প্রদর্শন করা সত্বেও)। তারপরেও লাহোরে শ্রীলংকার ক্রিকেট টীমের বাসের উপর সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষণ করে। তারা বেশ কয়েকজন পুলিশকে হত্যা করে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে আহত হয়, যার মধ্যে দুজনের অবস্থা ছিল খুবই শংকাজনক। বলার অপেক্ষা রাখে না চলতে থাকা এই টেস্টটি এই ঘটনায় বাতিল হয়ে যায়। শ্রীলংকার খেলোয়াড়রা বিমানে করে তাদের দেশে ফিরে যায়। এবং সারা বিশ্বের ক্রিকেট প্রেমী এখন হতাশ।

এই সন্ত্রাসী হামলার খবর অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রের প্রথম পাতা জুড়ে প্রকাশিত হয় এবং সেখানকার ইলেকট্রনিক প্রচারমাধ্যমে এই হামলা প্রধান খবর হিসেবে প্রচারিত হয়েছে।

হালনাগাদ সংবাদ :

মারডকের পত্রিকার জন্য যিনি ব্লগ লিখেনে সেই জ্যাক দি ইনসাইডার নামের অস্ট্রেলিয়ান এখন পাকিস্তানের স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তিত:

নিউ থিয়েটার ইন ওয়ার এগেইনষ্ট টেরোরিজম

পাকিস্তানের অন্যান্য এলাকার মতোই দেশটির শহরগুলো যেমন, লাহোর, করাচি এবং রাজধানী ইসলামাবাদ এক যুদ্ধ এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখানে চিৎকার এবং রক্তপাত দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। পাকিস্তানের একেকটা শহর যেন একটা বন্দী নগরী। এখানে একজন ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য এক সামরিক চেক পয়েন্ট থেকে আরেকটি চেক পয়েন্ট ভ্রমন করে। এখানে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ যেন সারা শহরে ছড়িয়ে আছে। এই ধরনের বোমা বিস্ফোরণ নিত্যদিনের ঘটনা।

এখন থেকে ঠিক দশ বছর আগে পাকিস্তানের সবচেয়ে উত্তরের শহর পেশোয়ারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনাক মার্ক টেইলর অপরাজিত ৩৩৪ রান করেছিল। এখন এই শহর তালেবানদের দখলে এবং পশ্চিমের কোন নাগরিক ভয়হীন ভাবে এখানে ভ্রমণ করার কথা বিবেচনা করতে পারে না।

এটা কোন বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে পাকিস্তানের জাতীয় খেলা এবং সারা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লোকের প্রিয় এই খেলাটি সংঘাতের কারনে বিপদে পড়ে গেল। বিশ্বের এখন লক্ষ্য করা উচিৎ যে এই হামলা আসলে যুদ্ধের ডাক। আইনের শাসন পাকিস্তানে হুমকির মুখে এবং ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। পরমাণু শক্তিধর এই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবার অবস্থা তৈরী হয়েছে।

উপরের পোস্টগুলতে করার ফাঠকদের নানা চিন্তার উদ্রেক করা মন্তব্যগুলো তাদের বৈচিত্র্যর জন্য পাঠ করা উচিত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .