নেপালে প্রচার মাধ্যম আক্রমণের শিকার

নেপালে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হলেও, দেশের প্রচার মাধ্যম আগের মত ভয় আর হুমকির পরিবেশের মধ্যে এখনো কাজ করছে । সাংবাদিক আর প্রকাশকের উপর জঘণ্য হামলা ইদানিং সাধারণ ঘটনায় পরিণত হচ্ছে।

২১ ডিসেম্বর, শাসক মাওবাদি দলের কর্মীরা হিমাল মিডিয়ার অফিসে হামলা করে। এই প্রকাশনা হাউজ থেকে হিমাল আর ওয়েভ ম্যাগাজিন, নেপালী টাইমস আর হিমাল দক্ষিণ এশিয়া ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়।

ইউনাইটেড উই ব্লগ এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন:

“মাওবাদী ক্যাডাররা ললিতপুরের হাতিবানে হিমাল মিডিয়ার অফিসে ভাংচুর চালায় আর কর্মীদের উপর হামলা করে। আক্রান্তদের মধ্যে ছিলেন প্রকাশক আর নেপালি টাইমসের সম্পাদক কুন্দা ডিক্সিট, সিইও আশুতোশ তিওয়ারি, এক্সিকিউটিভ সম্পাদক কিরন নেপাল আর সিনিয়র প্রতিনিধী দাম্বার কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠা এবং আরও অনেকে।”

এই উদ্ধত আচরণ সকল রাজনৈতিক দল, আন্তর্জাতিক মুক্ত প্রেস সংস্থা আর জাতিসংঘ থেকে কঠোর সমালোচনার ঝড় তুলেছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, মাওবাদী দলের নেতৃত্ব এই ব্যাপারে চুপ আছে।

সাম্প্রতিক হিমাল মিডিয়ার উপরে মাওবাদী দলের হামলা নেপালের মুক্ত প্রেসের বিরুদ্ধে এই দলের উদ্বেগের দীর্ঘ ইতিহাসে আর একটা সংযোজন। সামুদায়া.অর্গ এর কাশিশ, যিনি হিমাল মিডিয়ার সাথে ২০০০ থেকে যুক্ত, সংঘর্ষের ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন:

“ওয়েবসাইট আইএফজে.অর্গ (সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন) এ ‘নেপাল’ দিয়ে সার্চ দিলে বা গুগলে ‘মাওবাদীদের দ্বারা হত্যা করা সাংবাদিক’ কীওয়ার্ড দিয়ে খুঁজলে দেখা যাবে নেপালে মাওবাদীদের মিডিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের হিংস্র ইতিহাসের বিস্তারিত। এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় রাশিয়ার সাংবাদিকদের কথা যারা সাম্প্রতিক সময়ে ‘রহস্যজনক’ ভাবে মারা গেছেন। নেপালে অবশ্য এটা কোন রহস্য না; মাওবাদীরা হয় এর কৃতিত্ব নিয়েছে বা তাদেরকে দায়ী করা গেছে এইসব আক্রমণ আর হত্যার জন্য।”

হিমাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণের কারন ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে মাওদের সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়নের কাজ নিয়ে একটা রিপোর্ট, যা নেপালী ভাষার পাক্ষিক ম্যাগাজিন হিমালে প্রকাশিত হয়।

চেন্জইনকেইউ এই ঘটনাকে অন্যভাবে দেখেন:

“হিমাল মিডিয়া দাবি করেছে যে মাওবাদিরা তাদেরকে আক্রমন করেছে তাদের একটা রিপোর্টের জন্য যা স্বদেশীয় সাপ্তাহিকি ‘হিমাল’ এ প্রকাশিত হয়েছিল। একই সময় এটা সবার জানা কথা যে হিমাল মিডিয়া চাকুরিচ্যুত করছে লোককে। তাই একজন পক্ষপাতহীন নেপালী যাকে তার জীবনধারনের জন্য সংবাদপত্রে লিখতে হয়না, তার জন্য এটা ঠিক করা খুবই কঠিন যে কে ঠিক আর কে ভুল। এটা হতেও পারে যে ম্যানেজমেন্ট নিজে এই ধরনের আক্রমন চালিয়েছে অফিসকে তাড়াতাড়ি বন্ধ করার জন্য যাতে চাকুরিচ্যুতিকে স্থায়ী করা যায়।”

আক্রমণের পিছনে কারন যাই থাকুক না কেন, এর ফলে নেপালী সরকারের প্রেসের স্বাধীনতা বিষয়ে তাদের দায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক এসোসিয়েশন একই প্রশ্ন তুলেছিল আর রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারের রিপোর্ট অর্ন্তভুক্ত করেছিল নেপালী প্রেসের বিরুদ্ধে হুমকির ব্যাপারে:

“এলাকায় সন্ত্রাস আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদর্শন এখনো বেশ হয়ে থাকে। সাংবাদিকরা হুমকির সম্মুখীন বেশী হন বিশেষ করে দক্ষিণের তেরাই অঞ্চলে, যেখানে অস্ত্রধারী দল আছে আর প্রায় কোন পুলিশ নেই।”

ফটোব্লগ মাইরিপাব্লিকা তে বিজয় রায়ের তোলা বেশ কিছু ছবির সংগ্রহ আছে যেখানে হামলার পরে আহত সাংবাদিক আর ক্ষতিগ্রস্ত অফিস দেখা যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .