লেবানন: ইজরায়েল হুমকি দিচ্ছে আর সিরিয়া অস্ত্র কিনতে চাচ্ছে

“কি হচ্ছে?” এটি মনে হয় লেবাননের লোকদের মনে জাগা সাধারণ একটি প্রশ্ন যা উদ্ভূত হয়েছে ইজরায়েলের পরিবেশ মন্ত্রী গিডিওন এজরার কয়েকদিন আগে দেয়া বক্তৃতা আর সাম্প্রতিক রাশিয়ান- সিরিয়া অস্ত্র চুক্তির পর। গত সপ্তাহে মন্ত্রী এজরা বলেছেন যে লেবাননকে আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করা হবে যদি তারা হেজবুল্লাহকে বৈধতা দেয় (যা লেবানীজ সরকার দিয়েছে)। অন্য দিকে, রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে যে তারা সিরিয়ার কাছে নতুন অস্ত্র বিক্রি করতে প্রস্তুত। অবশ্য এই ধরনের সংবাদ অত্র এলাকা আর বিশেষ করে ইজরাইলের জন্য ভীতিকর। এই নতুন অগ্রগতিগুলো নিয়ে চারিদিকে ব্যাপক গুজব রটছে।

এক্রস দ্যা বে এর টনি বে সংক্ষিপ্তভাবে পূর্বের অনুরুপ একটি ঘটনা বলেছেন যে ২০০৫ সালে মস্কো সিরিয়ার কাছে একধরনের মিসাইল বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল:

২০০৫ সালে ইজরায়েলিরা পুটিনের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল অস্ত্র চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করার জন্যে বিশেষভাবে (সিরিয়ার কাছে) এই সব (মিসাইল) সিস্টেম বিক্রি বন্ধ করার জন্য। রাশিয়া এস -৩০০ আর ইস্কান্দার (মিসাইল) বিক্রি অবশ্য বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু তারা সিরিয়ানদের কাছে স্ট্রেলেট মিসাইল বিক্রি করেছিল, যার মধ্যে ছিল যানে নেওয়া উপযোগী ইগলা, তবে আমেরিকা আর ইজরায়েলের প্রতিবাদের মুখে মানুষ পরিবহন যোগ্য প্লাটফর্ম তারা বাদ দিয়েছিল।

বে এই অস্ত্র চুক্তির সাথে হেজবুল্লাহকে জড়িত করেছেন:

সিরিয়ানরা মানব পরিবহন যোগ্য (বা যান-পরিবহন যোগ্য) এন্টি এয়ারক্রাফট সিস্টেম যেমন কাঁধ থেকে ক্ষেপণ যোগ্য ইগলা পাচার করবে এ নিয়ে সবার চিন্তা হবে এটিই বোধগম্য। সিরিয়া যে এখনো এগুলো খুঁজছে এটাই দেখিয়ে দেয় তাদের সম্ভাব্য ইচ্ছা এটা হেজবুল্লাহর হাতে তুলে দেয়ার।

আন্তুন ইসার বিশ্লেষনটি রাশিয়া-সিরিয়া অস্ত্র চুক্তি নিয়ে দুই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরে; পুন:জাগ্রত রাশিয়ান শক্তি আর এলাকায় সম্ভাব্য যুদ্ধের ব্যাপারে সিরিয়ার ভবিষ্যৎবাণী:

দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার ভূতপুর্ব সোভিয়েত স্যাটেলাইট বেজগুলোতে মিসাইল বেজ স্থাপন করার পরিকল্পনা আর এর মাধ্যমে নিজের দেশকে (আমেরিকার মিসাইলের জালে) ঘিরে ফেলার সম্ভাবনার বিরোধীতা করছে রাশিয়ানরা।

ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্ক সব থেকে উত্তেজনাকর অবস্থায় মোড় নিয়েছে, আসাদ আশা করছে যে মস্কো সিরিয়ার সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করবে আমেরিকা পোল্যান্ডে যেমন মিসাইল বেজ পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া দামাস্কাসকে তেমন বেজ উপহার দিয়ে।

ইজরায়েলের সাথে বা ইজরায়েল আর ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনার কারনে দামাস্কাসে গভীর যে নিরাপত্তাহীনতা অনুভুত হয় তারই প্রতিফলণ হচ্ছে রাশিয়ার সাথে মিলিটারি সংশ্লিষ্টতা বাড়ানোতে আসাদের আগ্রহ।

বেইরুত স্প্রিং এর মুস্তাফা অস্ত্র চুক্তির উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করেছে দুটি প্রশ্ন দিয়ে যেটা সে মনে করে সম্পর্কিত:

প্রশ্ন ১# আপনি যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতেন আর আমেরিকাকে বেশী বিরক্ত না করে আমেরিকা আর ইজরায়েলকে শাস্তি দিতে চাইতেন জর্জিয়ার সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তাহলে আপনি কি করতেন?

প্রশ্ন ২# আপনি যদি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হতেন যে ইজরায়েলের সাথে আলাপ করছে দুর্বল অবস্থান থেকে, তাহলে সমতা পাওয়ার জন্য আপনি কি করতেন?

যদি আপনার মনে হয় যে উপরের দুই প্রশ্ন যুক্তিগতভাবে একে অপরের সম্পুরক তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে কেন ইজরায়েল আর আমেরিকা মধ্য প্রাচ্যে বদলী ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য ভীত…

ফিরাস মাকসাদ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইজরায়েলী ভাষ্যে, যেখানে বলা হয়েছে যে সব লেবানীজ জনগণ যুদ্ধের লক্ষ্য এবং যুক্তি দেখিয়েছেন যে সব লেবানীজ হেজবুল্লাহ পন্থী না বা রাজনীতি করে না। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে ইজরায়েলের এই ধরনের কাজের কারনে লেবানীজদের জনগণের এই অংশের মনে ভীতি আসলে তাদের হেজবুল্লাহকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় থাকবে না:

১০ লাখের বেশী লেবানীজ আছে যারা ২০০৫ সালে সেডার অভ্যুত্থানের সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নেমেছিল হেজবুল্লাহ, সিরিয়া আর ইরানের বিরোধীতা করার জন্য। তারা একই লোক যারা সরকারকে এই বছরের প্রথমে সমর্থণ করেছিল যখন তারা হেজবুল্লাহর মুখোমুখী হয়েছিল এই সংগঠনের দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য আর বৈরুত বিমানবন্দর থেকে হেজবুল্লাহপন্থী নিরাপত্তা প্রধানকে সরানোর জন্য।

ইজরায়েল হেজবুল্লাহকে অকার্যকর পন্থা অবলম্বন করে হারাতে পারবে না যা লেবানীজ সমাজকে বাধ্য করবে তাদের নিরাপত্তার একমাত্র উপায় হিসাবে জঙ্গীবাদী এই দলকে সমর্থন করার। ইজরায়েলের কেবিনেটের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুরো লেবানীজ সমাজকে হেজবুল্লাহর সাথে একভাবে দেখছে আর সম্মিলিত শাস্তির ভয় দেখাচ্ছে। এর ফলে লেবানীজদের কোন উপায় থাকবে না অসন্তোষ নিয়ে হেজবুল্লাহর পিছনে দাঁড়ানো ছাড়া যেমন গতমাসে তারা বাধ্য হয়েছিল করতে যখন সামির কুন্তার আর অন্যান্য লেবানিজ বন্দীদেরকে ইজরায়েল মিলিটান্ট এই দলের কাছে ফেরত দিয়েছিল লেবানীজ রাষ্ট্রের কাছে না দিয়ে।

ইজরায়েলী এই হুমকির খবর শুনে নাউ লেবানন উদ্ধৃতি দিয়েছে আলী হাসান খলিলের প্রতিক্রিয়া :

উন্নয়ন আর স্বাধীনতা ব্লক এর এমপি আলী হাসান খলিল শনিবার বলেছেন যে লেবাননের ‘শক্ত জাতীয় সমর্ধনের কেবিনেট আছে যারা রাজনৈতিক আর সামরিকভাবে নিরাশাগ্রস্ত ইজরায়েলের মুখোমুখি হচ্ছে।’

ওডিসেহ দক্ষিনের গ্রামের এক অনুষ্ঠানে খলিল যোগ করেছেন, ”এখন লেবানন যেহেতু তার প্রতিরোধ আর বিজয়ে শক্তিশালি হয়েছে তাই তার আর ইজরায়েলকে ভয় করার কিছু নেই।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .