বাক স্বাধীনতাঃ তুরস্ক, রাশিয়া, পাকিস্তান, ভারত

১) তুরস্কে ইউ টিউব আবার আটকে দেয়া হয়েছে । ২) রাশিয়ার লাইভ জারনাল ব্যবহারকারী কাল্পনিক গল্পের জন্য জেলে যেতে পারে। ৩) পাকিস্তানে আবার ব্লগস্পট ডট কম নিষিদ্ধ । ৪) মুম্বাই পুলিশ সাইবার কাফেতে কিস্ট্রোক লগার বসানোর পরিকল্পনা করছে ।

তুরস্কে ইউ টিউব আবার বন্ধ

বছরে দ্বিতীয়বারের মত একটি কোর্ট ১৮ সেপ্টেম্বর ইউটিউব ডট কম এর তুরস্কে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে কারন তারা মনে করে এতে দেশের নেতাদের অপমান করার মত ভিডিও আছে।

এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যখন পূবের শহর সিভাস থেকে একজন অভিযোগ করেন যে এতে এমন ভিডিও আছে যাতে তুরস্কের স্থপতি পিতা মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক, প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল, প্রধান মন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান আর সামরিক বাহিনীকে অপমান করা হয়েছে।

তুরস্কে এখন ইউটিউবের জন্য একটি বিক্ষোভপূর্ণ সময়। সমালোচনার ঝড় তুলেছে সেখানে পোস্ট করা একটি অতি জাতীয়তাবাদী ভিডিও যাতে তুর্কী-আমেরিকান সাংবাদিক হারান্ট ডিঙ্ক এর হত্যাকে প্রশংসা করা হয়েছে এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদপত্র আর কোর্টে এই খবর পৌছে গেছে। টার্কিশ ডেইলি নিউজ অনুসারে ডিঙ্কের আইনজীবী বলেছেন যে এই ভিডিও “মানুষকে উৎসাহিত করবে জাতি আর ধর্মের ভিত্তিতে ঘৃনাজনিত অপরাধ করতে আর হত্যাকারীকে প্রশংসা করতে।” আইনজীবীরা একটি অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এক কোর্ট আদেশের পর এই বছর মার্চে দেশের সব থেকে বড় টেলিকম্যুনিকেশন কোম্পানি তুর্ক টেলিকম দুই দিনের জন্য ইউটিউবের সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল কারন অভিযোগ ছিল ওখানে প্রদর্শিত ভিডিওতে তুরস্কের পিতা কামাল আতাতুর্ক আর তুর্কি লোকদের অপমান করা হয়েছে।

আগস্ট ১৭, ২০০৭ এ তুর্কি ফাতিহ দ্বিতীয় সিভিল কোর্ট সমস্ত ওয়াডপ্রেস ডট কম ডোমেন বন্ধ করে দেয় যখন তুকি ইসলামিক ক্রিয়েশানিস্ট আদনান ওক্তার ওরফে হারুন হাইয়া এর আইনজীবি আভিযোগ করেন যে ওয়াডপ্রেস ডট কমে হোস্ট করা একটি ব্লগে তাদের মক্কেলের কুৎসা রটনা করা হয়েছে।

রাশিয়ার লাইভজারনাল ব্যবহারকারী কাল্পনিক গল্পের জন্য জেলে যেতে পারে

২৩ বছরের ডিমিত্রি সিরিঙ্কেন নামক রাশিয়ান ব্লগার যে ভারজিনিয়া টেক শুটিং দারা অনুপ্রানিত হয়ে তার ব্লগে একটি কাল্পনিক গল্প লিখেছিল , তার এখন ৩ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে (বিস্তারিত পড়ুন)। ডিমিত্রি সিরিঙ্কেন “টেট্রাওক্স” নামে লাইভ জারনাল প্লাটফর্মে একটি ব্লগ চালাচ্ছিল আর তাতে একটি লোকের কথা লিখেছিল যে বন্দুক কিনে শহরের কলেজে বেশ কয়েকজনকে মেরে ফেলে। তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে মিথ্যা সন্ত্রাসী আক্রমনের ভয় দেয়ার জন্য

রাশিয়া টুডে জানিয়েছে “বিচারকের অফিস তার ব্লগ দেখে এই সিদ্ধান্তে পৌছেছে যে সে এক ডজন লোককে মারতে চেয়েছিল”। সিরিঙ্কেন এর উকিল একজন ভাষা বিশেষজ্ঞকে চেয়েছেন যে এই লেখা সম্বন্ধে তার মতামত দেবে। সেপ্টেম্বার ২০ পযন্ত বিচার স্থগিত আছে।

রাশিয়া টুডের সাথে এক সাক্ষাতকারে (উপরের ভিডিও দেখুন) ডিমিত্রি সিরিঙ্কেন বলেছেন যে, “আমি বুঝতে পারিনি যে একটা ছোট লেখা নিরাপত্তা দপ্তর থেকে এতো সাড়া পাবে। তারা আমাকে জেরা করেছে যে আমার বন্দুক কই, কিন্তু তা তো আমার কখনো ছিলনা।”

রাশিয়া টুডে অনুযায়ী বিচারের আগেই ডিমিত্রি বেশ জনপ্রয় ছিল কারন ওই এলাকার সেরা ব্লগারের পুরষ্কার সে পেয়েছিল। রাশিয়ার ব্লগাররা মনে করে যে তার ঘটনা দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটা খারাপ নজির হয়ে থাকবে।

আরেকজন রাশিয়ান লাইভজারনাল ব্লগারকে ১০০,০০০ রুবেল বা ২ বছরের জেল দেয়া হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘৃনা ছড়ানোর জন্য। কমির স্থানীয় আইনজীবি জানাচ্ছেন ২১ বছরের সাব্বাহ তেরেন্তিয়েভ যে লেখা তার সাইট থেকে পরে মুছে ফেলেছে তাতে সে “সরাসরি ডাক দিয়েছে ঘৃনা আর সহিংসতার এবং একটি বিশেষ সামাজিক গোষ্ঠি – পুলিশেরর সম্মানহানি করার জন্য।”

পাকিস্তানে আবার ব্লগস্পট ডট কম নিষিদ্ধ

ডোন্ট ব্লক দ্যা ব্লগে লেখা হয়েছে যে জনপ্রিয় ব্লগিং প্লাটফর্ম ব্লগস্পট ডট কম যা গুগলের মালিকানাধীন তা আবার পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়েছেঃ

প্রায় ৪ মাস হলো গুগল তার ব্লগস্পট সারভারের ঠিকানা পাল্টিয়েছে। নতুন আইপি ঠিকানা পাকিস্তান ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জে রাখা সেন্সরশিপ ফিল্টারে নিষিদ্ধ হিসাবে রাখা হয়নি। আজকে কোন কারনে গুগল তার পুরনো ঠিকানায় ফিরে গিয়েছিল, যেটি মাচ ২০০৬ থেকে ব্লক লিস্টে ছিল। এর ফলে ব্লগস্পট ডট কম ডোমেনে সব ইন্টারনেট ব্যবহার ব্লক করা হয়েছে। লাখ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারি এখন ব্লগ পড়তে পারছেনা।

মাচ ৩, ২০০৬ এ পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটির ব্লগস্পট কম এর উপর নির্বিচারে ব্যান দেয়ার কারনে ডোন্ট ব্লক দ্যা ব্লগ প্রচারনা শুরু হয়। এর সহ- প্রতিষ্ঠাতা ওমর আল্ভির সাথে আমাদের আগের সাক্ষাৎকার পড়ুন যেখানে এই নিষেধাজ্ঞা আর অনলাইনে বাক স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারনা নিয়ে কথা হয়েছে।

মুম্বাই পুলিশ সাইবার কাফে মনিটর করবে

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমর্থনে ভারতের মুম্বাই পুলিশ সাইবার ক্যাফেতে কিস্ট্রোক লগার বসানোর পরিকল্পনা করছে। ফাউন্ডেশন ফর ইনফরমেশন সিকিউরিটি এন্ড টেকনলজির প্রেসিডেন্ট ভিজয় মুখি জানাচ্ছেনঃ

পুলিশের এমন প্রোগ্রাম বসানো প্রয়োজন যেটি নিয়মিত বিরতিতে প্রত্যেকটি কি স্ট্রোক শনাক্ত করতে পারবে, যা একটি সার্ভারে পাঠানো হবে যেখানে সব ডাটা লগ করা হবে। এর ফলে সন্ত্রাসীরা যেখান থেকেই কাজ করুক না কেন পুলিশ তাদের খোঁজ রাখতে পারবে। একমাত্র এই ভাবে নেট পাহারা দেয়া যায় আর ই-যুগের পুলিশ ইনফরমাররা এমন হবে।

নতুন মনিটরিং সফটওয়্যার , সাইবার এক্সেস রিমোট মনিটরিং সিস্টেম যা মুম্বাই পুলিশ ৫০০ টা সাইবার কাফেতে বসাতে চাচ্ছে, তা প্রত্যেক ব্যবহারকারীর কি স্ট্রোক ধরে তা সরকারের কাছে পৌছে দেবে – খুব কম সময়ের মধ্যে শুনে যা মনে হয় – বললেন ভারতীয় সাংবাদিক অমিত ভার্মা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .