গাজায় আরেকটি যুদ্ধ বিরতির সমাপ্তি, নিহতের তালিকা বেড়ে ২,০০০ ছাড়িয়েছে

BvdN4gFCUAAQDvg

গাজার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা একটি শিশু। গত ১৯ আগস্ট তারিখে ছবিটি আপলোড করেছেন টুইটার ব্যবহারকারি @থিসিসগাজা।  

আরেক দফা ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েক ডজন গাজাবাসী নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল এবং হামাসের মাঝে শান্তি সমঝোতা হওয়ার পর যুদ্ধে ক্ষত বিক্ষত দেশটিতে ইসরায়েল আবারও এই হামলা চালায়। হামাস দলটিগত সাত বছর ধরে ইসরায়েলি অবরোধের অধীনে থাকা গাজাকে ২০০৭ সাল থেকে শাসন করে আসছে। যদিও এখন ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙ্গে পরেছে।

হামাস এবং ইসরায়েল তাদের মাঝে হওয়া “শান্তি” আলোচনা বিফল হওয়ার কারন হিসেবে এখনও আবার একে অন্যকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে। গাজা থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ার শেভার কাছে বিস্ফোরিত হয়েছে। তবে এ বিস্ফোরণে কোন ক্ষতি হয়নি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। 

গাজার নিকটবর্তী যেসব এলাকাতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে খান ইউনুস, বেইত হানুন এবং শুজাইয়া। কয়েক দিন আগে আমেরিকান সাংবাদিক ম্যাক্স ব্লুমেনথাল বেইত হানুন পরিদর্শনে এসেছিলেন। শুজাইয়া সে স্থান যেখানে গত ২০ জুলাইয়ের গণহত্যায় কমপক্ষে ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

৮ জুলাই তারিখ থেকে ইসরায়েল গাজার উপর আক্রমণ চালানো শুরু করেছে। সেদিন থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছেন এবং এ পর্যন্ত ইসরায়েল এবং হামাস ছয়বার যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথম তিনটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতিটি পাঁচদিন স্থায়ী হয়েছিল। এটিই সামরিক আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজাবাসীর পাওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতি। 

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আরেক দফায় আলোচনা করতে এবার কায়রোতে মিলিত হয়েছে। হামাস চায় ইসরায়েল তাদের উপর থেকে সাত বছরের অবরোধ তুলে নিক। তারা আরও চায় ইসরায়েলি সামরিক কারাগারে বন্দী প্রায় ১২৫ জন রাজনৈতিক বন্দীকে তারা মুক্তি দিক। আর অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করা হোক, গাজার বেসামরিকীকরণ করা হোক এবং হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা হোক।

যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গের জন্য ইসরায়েল যখন হামাসকে দোষারোপ করছে ঠিক তখন হামাসও মা’আন সংবাদ সংস্থাকে বলেছে, “ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে। যদিও হামাসের এ সম্পর্কে কোন তথ্য জানা নেই”। উল্লেখ্য মা’আন একটি ফিলিস্তিনি স্বাধীন সংবাদ প্রচারকারী ওয়েবসাইট। তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন এই যুদ্ধে জড়িত অন্যান্য ফিলিস্তিনি চক্রান্তকারী সামরিক গোষ্ঠী হয়তবা এই তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।

সমঝোতা আলোচনা শেষ হওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে গাজা নগরীর পার্শ্ববর্তী শেখ রাদোয়ান এলাকার আল-দালু বাড়িতে একটি ইসরায়েলি বিমান আঘাত হানে। হামাসের দাপ্তরিক মুখপাত্র মুসা আবু মারজুক রয়টার্সকে বলেছেন, গুপ্তহত্যা চালানোর উদ্দেশ্যে আল-দালু বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। কেননা গাজাতে অবস্থিত হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশেম ব্রিগেডের প্রধান মুহাম্মাদ দেইফ বাড়িটিতে বসবাস করেন। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে ফক্স নিউজ হামলার পরপরই দাবি করেছে যে দেইফ মারা গেছেন। তাৎক্ষনিকভাবে হামাসের আল-আকসা রেডিও এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। দেইফের বাড়িতে চালানো বিমান হামলাতে দেইফের স্ত্রী এবং বাচ্চা মারা গেছে। গাজাতে ২০১২ সালে ইসরায়েলের চালানো আক্রমণের সময়ে বাড়িটিকে উদ্দেশ্য করে হামলা করা হয়েছিল। এ হামলায় ১২ জন মারা যায়।

এই পোস্ট লেখার সময়, গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৩৯ জনে, যাদের মধ্যে ৫৪০ জন শিশু। ইসরাইল গত ৮ জুলাই তারিখ থেকে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় স্ট্রিপে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যার ফলে ৬,৭৮০ জনেরও অধিক মানুষ আহত হয়েছে। স্কুল, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এবং শরণার্থী শিবিরে ইসরাইল বোমাবর্ষণ করেছে। গাজায় নিহত চার জনের মধ্যে তিন জনই বেসামরিক নাগরিক। ২৮ জুলাই তারিখে ইসরাইল গাজার একমাত্র পাওয়ায় প্ল্যান্টটি আক্রমণ করে, যার ফলে ১.৮ মিলিয়ন মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ স্ট্রিপটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।   

কায়রো শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার কারন হিসেবে ইসরায়েল হামাসের সন্ত্রাসী আচরণকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলেছে। মা’আন সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, “সমঝোতা আলোচনাতে অংশ নেয়া ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা বার বার দাবি করেছেন যে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের আট বছরের দীর্ঘ অবরোধ তুলে নেয়ার মাধ্যমেই কেবল দীর্ঘস্থায়ী একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব”। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই অবরোধ একেবারেই অবৈধ বলে বিবেচিত। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির উদ্ধৃতি দিয়ে তারা বলেছেন, “নির্বিচারে সকলের উপর শাস্তি আরোপ করা আন্তর্জাতিক মানবতা আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতার স্পষ্ট লঙ্ঘন”।  

গত ছয় বছরের মধ্যে গাজায় এটি ইসরাইলের তৃতীয় সামরিক হামলা। ইসরায়েল গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ব্যপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, তাই অধিকাংশ বিশ্ববাসী এবং জাতিসংঘ স্থানটি ইজরায়েল দ্বারা “দখল” বলে বিবেচনা করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .