ভারতের ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতাবাদও প্রযুক্তিকে বরণ করে নিচ্ছে

A sadhu in India goes hi-tech with a mobile camera. Image by utilitarian via Flickr. CC BY-NC

ভারতের একজন সাধু মোবাইল ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। ইউলিটেরিয়ানের ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে। সিসি বিওয়াই-এনসি।

গত একহাজার বছর ধরে ভারতের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে অসংখ্য ধর্ম আর আধ্যাত্মিকতাবাদের বসবাস। তাই একুশ শতকে এসে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা এদেরকে যে টার্গেট করবেন, তাদের ভিতরে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষুধা জাগিয়ে তুলবেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

মন্দিরে ধর্মকর্ম পালন আর ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য প্রতিবছর ভারত ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে। তবে যারা মন্দিরে ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে যান, তারা তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সবসময়ে খুশি হতে পারেন না। কারণ মন্দিরে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে, কিছু প্রতারকও থাকে। এতে করে তারা তাদের ধর্মীয় কর্ম ঠিকঠাকমতো সম্পাদন করতে পারেন না। পারেন না আর্শীবাদের প্রসাদ সংগ্রহ করতে। তবে তাদের পাশে আছেন ২৫ বছর বয়সী তরুণ গুঞ্জন মল। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন অনলাইন প্রসাদ ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ মন্দিরে না গিয়েও সেখানকার প্রসাদ সংগ্রহ করতে পারেন। এলএএমএনড.কম-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে গুঞ্জন মল তার এই নতুন ব্যবসা শুরুর কথা জানিয়েছেন:

তিনি বলেন, আমার ধারণা ছিল, ধর্মকে একটু সহজ করে নেয়া গেলে একে আরো ছড়িয়ে দেয়ার কাজে প্রযুক্তি খুব ভালো একটা উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। একে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি বেইন অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র অ্যানালিস্টের পদ ছেড়ে দেন। কিছু নগদ টাকা জোগাড় করে ওয়েবসাইটটি চালু করেন। আজ তার ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি ভিজিটর আসেন। তাদের কাছে তিনি ভারতের ৫০টিরও বেশি মন্দিরের প্রসাদ বিক্রি করেন। তাছাড়া তার প্রতিষ্ঠানটি পুজা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তাছাড়া নানা ধরনের ধর্মীয় পণ্যও বিক্রি করেন।

হায়দ্রাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেস-এর বিপণন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিদ্ধার্থ এস সিং এই ধরনের অনলাইন পোর্টালের স্ফীতি সম্পর্কে বলেন:

The dot-com bust of the early 2000s affected many online businesses. There were fewer consumers transacting online. That has now changed. Now, the potential to grow is good.

একুশ শতকের শুরুতে ডটকম বাণিজ্যের স্ফীতি দেখা গিয়েছিল। তবে সেটা অনলাইন ব্যবসায় তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি। তখন খুব কম মানুষই অনলাইনে বাণিজ্য করেছেন। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে গেছে।

শুধু যে ধর্ম অনলাইন দুনিয়া খুঁজে পেয়েছে, তা নয়। ইয়োগা, মেডিটেশনও অনলাইন দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছে। গত কয়েক বছরে অনলাইনে ধ্যানের শিক্ষা এবং যোগ ব্যায়ামের প্রোগ্রাম অনেক বেড়ে গেছে।

Screenshot of Isha Kriya Website

ইশ ক্রিয়া ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট।

২০১১ সালে ইশ ক্রিয়া নামে নির্দেশনামূলক ওয়েবসাইটটি চালু হয়। এখন এটা মেডিটেশনের ওপরে সবচে’ জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর একটি। ব্যবহারকারীরা এখানে প্রায়ই তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। টুইটারেও নিয়মিতভাবে আপডেট প্রকাশ করা হয়। মাউরা মানজো একজন ইয়োগা শিক্ষক। তিনি ইয়োগা হোম স্টুডিও “বিয়ন্ড আসানা”র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি ইশ ক্রিয়া-তে কিছুদিন অনুশীলন করেছিলেন। টুইটারে সেই অনুশীলনের অভিজ্ঞতার বয়ান তুলে ধরেছেন:

সাধুগুরুজেভি'র মাধ্যমে ইশ ক্রিয়া মেডিটেশন অনুশীলন করলাম। আপনিও এখান থেকে এটা বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

এদিকে প্রাউড উমাহ্ নামের আরেকটি ওয়েবসাইট রয়েছে যারা মুসলিমদের হজ এবং উমরাহ করতে যাওয়ার সময় নানা ধরনের সেবা দেয়। গুগলের সাবেক কর্মী আবিদ খান এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওয়েবসাইটটি হজ এবং উমরাহ্ করতে যাওয়ার সময়ে দরকারি ২৫টি পণ্যের একটি প্যাকেজ বিক্রি করে। তারা হজ যাত্রীদের জন্য এক জায়গায় সবকিছু আছে এমন একটা অবস্থান গড়ে নিয়েছে।

Screenshot of the Proud Ummah Website

প্রাউড উম্মাহ্ ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট।

মানুষ নতুন এই ওয়েবসাইটগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বিরূপ মন্তব্যও করেছেন। ইনা বানসাল নামের একজন যোগাযোগ ও পি আর ম্যানেজার টুইট করেছেন:

অনলাইন প্রসাদ, প্রাউড উম্মাহ্'র মতো ধর্মীয় ই-কমার্স ব্যবসা বাড়ছে। একদিন ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ কি আসবে? সম্ভবত।

এই ওয়েবসাইটগুলো সেইসব ক্রেতাদের টার্গেট করেছে, যারা বিদ্যমান প্রথা'র বিকল্প খুঁজছিলেন। আয়েশা ফাতিমা নামের একজন গৃহিনী ২০১৩ সালে হজ্ব করেছেন। তিনি প্রাউড উম্মাহ্'র খুব প্রশংসা করেছেন:

I found the information I needed and also saw the kit, now I don't have to go to multiple shops to get everything.

হজ্ব করতে যাওয়ার সময়ে আমি যেসব তথ্য জানতে চাইছিলাম, তা এখানে পেয়ে গেছি। তাছাড়া এখানে একটি কিটও পেয়েছিলাম। তাই আমাকে হজ্বের সবকিছু গোছগাছ করতে অন্য কোথাও যেতে হয়নি।

অন্য একজন ব্লগার প্রসাদ অনলাইন এবং এ ধরনের আরো যেসব ওয়েবসাইট রয়েছে, সেগুলো নিয়ে জনগণের মধ্যে যে আলোচনা চলছে, তার একটা উপসংহার তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যাপারটা নিয়ে খুব উৎসাহ প্রকাশ করলেও কিছু সতর্কবাণীও দিয়েছেন:

I do like the idea of taking care of the prasad and pooja online. However, I do hope that these entrepreneurs not forget that ethics are more important than just profits and cash flow. In a way, these businesses are marketing “God’s” products, and no one is really comfortable bargaining with a god or temple. So I hope these enterprising people do not take undue advantage of this fact and go overboard.

প্রসাদ এবং পুজা অনলাইনের মাধ্যমে ধর্মীয় ব্যাপারে যত্ন নেয়ার আইডিয়া আমার খুব পছন্দ হয়েছে। যদিও আমি আশাবাদী, এইসব ওয়েবসাইটের ব্যবসায়ীরা নৈতিককা ভুলে গিয়ে মুনাফার পিছনে ছুটবেন না। কারণ, এইসব ঈশ্বরিক পণ্যের দাম-দর নিয়ে বচসা করতে কেউ-ই ভালো বোধ করবেন না। তাই আমি আশা করবো ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এই সুযোগটা নিবেন না।

গত কয়েক বছর ধরে ভারতের শহর এবং গ্রামে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেট এবং অনলাইন ব্যবসাও অনেক বেড়ে গেছে। ভারতে ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতাবাদের জনপ্রিয়তা থাকায় এই ধরনের ই-কমার্স ব্যবসা কোথায় গিয়ে পৌছাবে তা কেউ-ই বলতে পারে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .