অনলাইনে গোপনে কিন্তু প্রকাশ্যে ইরানি নারীরা তাদের হিজাব ত্যাগ করছে

Unveiled at the sea

আমার গোপন স্বাধীনতা ফেসবুক পাতার একটি ছবি। ক্যাপশনে লিখা আছেঃ “আমি ৩৩ বছর পর আমার দেশে খুব সামান্য সময়ের জন্য এই স্বাধীনতা উপভোগ করেছি। ফার্সি উপসাগর। স্কার্ফ এবং চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দিলেও আমি একজন নারীই থেকে যাব। আমার চোখের ব্যাপারে তখন আপনি কি উদ্যোগ নিবেন ? সেগুলো ভালোবাসায় পূর্ণ এবং জীবন্ত”

গত কয়েক দশক ধরে মাথায় হিজাব পড়তে অথবা মুখে মুখবন্ধ পড়তে জোর করা হলেও বর্তমানে কয়েক হাজার ইরানি নারী ইন্টারনেটের সুবাদে হিজাব ছাড়া তোলা তাঁদের নিজেদের ছবি শেয়ার করেছেন। জোর করে পর্দা করানোর প্রকাশ্য প্রতিরোধ হিসেবে তারা অনলাইনে এই মাধ্যমটি বেঁছে নিয়েছেন।  

ইরানি সাংবাদিক মাসিহ আলিনেজাদ গত ৩ মে তারিখে একটি ফেসবুক পেজ চালু করার পর থেকে “ইরানি নারীদের গোপনীয় স্বাধীনতা” শিরোনামে একটি অনলাইন প্রচারাভিযান খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে।

এই পেজটির ৩ লক্ষ ৩ হাজারেরও বেশি সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। অনুসারীরা এখানে কয়েক শত নারীর হিজাব খোলা ছবি পোস্ট করেছেন। বিদ্যালয়ের মাঠে, সমুদ্র সৈকতে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এবং ইরানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে হিজাব খুলে নিজেদের ছবি তুলে তারা পেজটিতে সেই ছবিগুলো আপলোড করেছেন।

#মাইস্টিলদিফ্রিডম অথবা ফার্সী ভাষায় #آزادی‌یواشکی  শিরোনামের হ্যাশট্যাগটিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে এসব ছবি শেয়ার করা হয়েছে।

এই সাহসী ভদ্রমহিলা মহান আয়াতুল্লাহর এক অফিসের সামনে তার হিজাব সরিয়ে ফেলেছেন।

এখন যদিও মাসিহ আলিনেজাদ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। কিন্তু ইরানে থাকার সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের হিজাব খোলা ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি হিজাব বিরোধী নন। কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, একজন নারী হিসেবে আপনি যখন বিশ্বাস করবেন না এটা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিৎ, তখন আপনি কিছু “গোপনীয় স্বাধীনতা” সৃষ্টি করে নেবেন। দমননীতি মূলক শাসনের এই বোঝাকে ধ্বংস না করেই আপনি নিজের জন্য একটি “গোপনীয় স্বাধীনতা” তৈরি করে নেবেন।  

আমার হিজাব আমার মাথা নয়, বরং আমার চিন্তা, কথা ও কাজকে আবৃত করেছে …

Cool breeze blowing through my hair

আমার গোপন স্বাধীনতা ফেসবুক পাতায় শেয়ার করা একটি ছবি 

প্রচারাভিযানটির ফেসবুক পেজে একজন নারী তাঁর একটি ছবি এবং ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেনঃ 

আমরা নাউরুজের (ফার্সী নতুন বছর) ছুটি উপভোগ করছিলাম। আমরা ছুটি কাটাতে আবাদানে যাই। সেখানে প্রচন্ড গরম সহ্য করতে না পেরে নিজের অবচেতন মনেই আমার হিজাবটি খুলে ফেলি। ভ্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সে অবস্থাতেই আমি অনেকগুলো ছবি তুলি।

তখন এমনকি আমার চুলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসের চেয়েও আরেকটি জিনিস আমাকে বেশি আনন্দ দিচ্ছিল। আর তা হল, আমার পাশ দিয়ে ছুটে চলা গাড়িগুলোর ছন্দময় হর্নের শব্দ (যেন তাকে উৎসাহ দিচ্ছে) এবং আমার ভ্রমণ সঙ্গীদের খুশীতে উত্তেজিত মুখগুলো।   

যদিও বিপুল সংখ্যক ইরানি সক্রিয়কর্মী এই প্রচারাভিযানটিকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে কেউ কেউ আবার এই প্রচারাভিযানটির সমালোচনাও করেছেন। কিছু লোক মনে করেন, বাধ্যতামূলক হিজাব পরার বিষয়টি ইরানি নারীদের প্রাথমিক রাজনৈতিক উদ্বেগের কোন বিষয় হওয়া উচিৎ নয়। পাশাপাশি কারও কারও কাছে “গোপনীয়” শব্দটি নিয়ে একটু আপত্তি আছে।

ইরানে বসবাসকারী একজন ইরানি সাংবাদিক জিলা বানিয়াঘুব লিখেছেন, “কোন গোপনীয় বিষয়কে কখনও স্বাধীনতা বলা যেতে পারে না। আমাদের যদি মনে হয় আমরা আমাদের এই গোপনীয় স্বাধীনতা নিয়েই খুশী তবে কেউ আর স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাড়া অনুভব করবে না।”

ভার্চুয়াল বিশ্বে বিরাজমান ইরানিদের মাঝে বৃহৎ আকারে একটি বিতর্ক তৈরির পাশাপাশি প্রচারাভিযানটি বিদেশী প্রচার মাধ্যমেরও  দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিদেশী প্রচার মাধ্যমগুলোতে এই প্রচারাভিযান সম্পর্কে এবং ইরানে নারীদেরকে নিষ্ঠুর শাসন দিয়ে দমিয়ে রাখা সম্পর্কে অগণিত নতুন নতুন সব গল্প প্রকাশ করা হচ্ছে। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .