বাংলাদেশ: গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দশকোটির কাছাকাছি। এর একটা বড়ো অংশ হলেন নারীরা। তাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নারীদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশে সম্প্রতি চালু হয়েছে ‘আপনজন’ সেবা। মোবাইল অ্যালায়েন্স ফর ম্যাটারনাল অ্যাকশনের (মামা) পৃষ্ঠপোষকতায় ‌’আপনজন’-এর মাধ্যমে গর্ভবতী মা ও এক বছর বয়সের নীচে শিশুর মায়েরা প্রতি সপ্তাহেই স্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার যাবতীয় পরামর্শ পাবেন। স্বল্পমূল্যে এই সেবা পাওয়া যাবে। তবে গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ বিনামূল্যে এই সেবা পাবেন।

মামার গ্লোবাল পার্টনারশীপ ডিরেক্টর কার্স্টেন গ্যাগনেয়ার লিখছেন:

আপনজন লোগো। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা, লোগোর মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে।

‌আপনজন, যার মানে হচ্ছে “বিশ্বস্ত বন্ধু, হচ্ছে মোবাইল অ্যালায়েন্স ফর ম্যাটারনাল অ্যাকশন (মামা) এর অংশীদারগণ কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি সেবা। এটি গর্ভবতী ও সদ্য জন্মানো শিশুদের মাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিশু এবং মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্যে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকে। আপনজনের বিশেষত্ব হচ্ছে যে এই তথ্যগুলো বিশেষ করে “অভিভাবক বা কাছের লোকদের” লক্ষ্য করে তৈরি যাতে তারা মা, শিশু ও পরিবারের সেবা এবং খরচের ব্যপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাংলাদেশে প্রসূতি নারীদের এই সব স্বজনরা সাধারণত স্বামী, মা বা শ্বাশুড়ি, বোন-ননদ বা পরিবারের অন্য কেউ হন। তাদের কাছে দেওয়া তথ্যগুলো বেশী কার্যকরী হয় কারন গর্ভাবস্থা, শিশুজন্ম এবং শিশুদের বেড়ে ওঠায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ৪টি জেলার ১৩টি জায়গায় ১২০০ গ্রাহক নিয়ে প্রাথমিক ভাবে ‘আপনজন’ সেবা চালু হয়। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হওয়ার পর বর্তমানে জাতীয় পরিসরে চালু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০১৫ সাল নাগাদ ২০ লাখ প্রসুতি, নতুন মা ও তাদের পরিবারের কাছে এই সেবা পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশে মা ও শিশু স্বাস্থ্য চিত্র

বাংলাদেশে মা ও নবজাতকের মৃত্যু’র হার অনেক বেশি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রসবকালীন জটিলতায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একজন মায়ের মৃত্যু হয়। আবার প্রতি ৪ মিনিটে এক মাসের কম বয়সী একটি শিশু মারা যায়, কারণ তাদের মায়েরা জন্মপরবর্তী যে পরিচর্যা দরকার, তারা সেগুলো পান না বলে। যদিও, গত কয়েক বছরে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়ার কারণে মা ও নবজাতকের মৃত্যু’র হার অনেক কমেছে। ১৯৯০ সালে যেখানে নবজাতক শিশুর মৃত্যু’র হার ছিল প্রতি হাজারে ৯৭ জন। ২০১১ সালে এটা এসে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ৩৭ জনে। একই সময়ে ৫ বছর কম বয়সী শিশুর ৬৭ শতাংশ থেকে কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

সাফল্যের গল্প

আশা রাণী, আপনজন মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। ছবি আপনজন ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

আশা রাণীর বয়স ২৪। দুই সন্তানের মা। শাশুড়িকে নিয়ে বাস করে ঢাকার ভাষানটেক বস্তিতে। দ্বিতীয় বাচ্চা জন্মদানের পর এক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে শুনে সে “আপনজন” সেবা নিয়েছিল। সে এই সেবা নিয়ে খুশি:

সত্যি বলতে কি, এখন আমি জানি, বাবুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পর ওকে কয়েক মিনিট কাঁধে রাখতে হবে। তাহলে সে আর কখনোই বমি করবে না। তাই এখন আমি দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারি। বাবুর বেড়ে ওঠার সময়ে ওকে কীভাবে য্ত্ন নিতে হবে, তা ‘আপনজন’ সেবার মাধ্যমে জানতে পারি। তাছাড়া, আমার নিজের স্বাস্থ্যের জন্য কী করা উচিত, তাও জানতে পারছি।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বেশ প্রসার ঘটেছে। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। তাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয়া এখন অনেক সহজ। ডা. ফিদা মেহরান বিষয়টি নিয়ে বলেন:

কয়েক বছর আগেও ভাবা যেতো না, মোবাইল ফোন মানুষের কাছে একটি সাধারণ পণ্য হয়ে উঠবে। এমনকি যে দারিদ্র সীমার নিচে রয়েছে, সেও এখন মোবাইল ফোন কিনতে পারে। কিভাবে ফোনে কথা বলতে হয়, তাও জানে। ক্ষুদে বার্তা পড়তে এবং লিখতেও জানে। মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ায়, এবং দেশের বিস্তৃত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক কাভারেজ থাকায় দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এর মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভবপর হয়েছে। তাছাড়া তথ্য ছড়িয়ে দিতে এবং সচেতনতা তৈরিতে মোবাইল ফোন সবচেয়ে ভালো মিডিয়া পরিণত হয়েছে।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .