কিরগিজস্তান: বেশ কিছু র‍্যালির মধ্যে ব্লগাররা স্থিতি খুঁজছেন

“কিরগিজস্তানে মানুষ, জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন!’ – এমনই বলেছিলেন কিরগিজস্তানি ব্লগার কাদাম গত ১৫ই মে। তার দেশে লাগাতার র‍্যালি আর পাল্টা র‍্যালি হচ্ছে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে, যা শুরু হয় বিশকেকের [কিরগিজস্তানের রাজধানী] ভূতপূর্ব মেয়র নারিমান তুলিভের সমর্থনে র‍্যালির মাধ্যমে। উৎখাত হওয়া প্রেসিডেন্ট কুর্মানেক বাকিয়েভের সমর্থকরা অল্প সময়ের জন্য ক্ষমতা দখলের ফলে কিরগিজস্তানের দক্ষিণের তিনটি শহরের রাজধানীতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে।

তুলিভের ক্ষেত্রে এটা উল্লেখ করতে হয় যে তিনি খুব কম কয়েকজন রাজনীতিবিদদের মধ্যে পড়েন যারা বিশকেকে পূর্ণ সমর্থন ভোগ করেন। গত ৩০শে এপ্রিল এর একটি পোস্টের উল্লেখ করে এলিটা এই ভূতপূর্ব মেয়রের উক্তির উল্লেখ করেন যা তার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বলেছেন, যেখানে তিনি কিরগিজস্তানি নাগরিকদের দেশ না ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান:

“হ্যাঁ, দেখা যাচ্ছে যে একটি কার্যকর শক্তি আছে যারা আমাদেরকে উত্তর দক্ষিণের উপরে ভিত্তি করে বিভক্ত করতে চাচ্ছে। গোত্রের ভিত্তিতে আমাদের ভাগ করতে চাচ্ছে, দুটি ক্যাম্পে আমাদের ভাগ করে দুর্বল করতে চাচ্ছে…আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, নিজের ভিতরে আশা আর সুমতি খুঁজে নেন…কেবলমাত্র একত্র থেকে, ইটের উপরে ইট দিয়ে, আমরা একটা আসল গণতান্ত্রিক আর অর্থনৈতিকভাবে উন্নত নতুন জাতি গঠন করতে পারবো যেখানে আইন শৃঙ্খলা থাকবে…আর যেখানে কিরগিজস্তানের বহুজাতিক মানুষের পরিচয় হারাবে না।

“যদি শুধু কুর্মানেক বাকিয়েভ তার দেশের প্রতি এমন ভালবাসা দেখাতে পারতেন,” দু:খ ভরে এই ব্লগার শেষ করেছেন।”

তুলিভের সমর্থকরা তাদের নেতাকে ৭ই এপ্রিল এর অভ্যুত্থানের পরে কম জনপ্রিয় ইসা ওমুরকুলোভ দ্বারা প্রতিস্থাপনের জন্য আঞ্চলিক সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানাতে দশ দিন ধরে রাস্তায় থেকেছেন। একই দিনে আলমাজবেক আতাম্বায়েভের একটা র‍্যালিতে যদিও অনেক লোক হয়েছিল, এটা পরিষ্কার যে তুলিভ, যিনি শহরের মেয়র হিসাবে ২ বছর ছিলেন, সমবেদক ছাড়া নেই।

তবে বেশীরভাগ মানুষ এইসব বিক্ষোভকে বাড়তি আর অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা হিসাবে দেখেছেন যখন মনে হচ্ছিল যে অন্তবর্তীকালীন সরকার সারা দেশে কিছু স্থিতি এনেছে। এর মধ্যে ছিল মধ্য এশিয়ায় আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় (এইউসিএ) এর ছাত্ররা, যাদের কেউ কেউ চুড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছিল যখন বিক্ষোভের কারনে তাদেরকে পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

তবে এই সব বিক্ষোভ কেবলমাত্র অন্তবর্তীকালীন সরকার আর বের হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট বাকিয়েভের সমর্থকদের মধ্যকার তীব্র সংঘর্ষের প্রস্তুতি যা বাতকেন, জালাল-আবাদ আর ওশে ছড়িয়ে পড়ে। এইসব মিটিং এর ফলে তিনটা আঞ্চলিক প্রশাসনিক অফিস অস্থায়ী দখলে চলে যায় কুর্মানবেক বাকিয়েভের সাময়িক শাসনের সময়কার গভর্নরদের আর বেশ কিছু তরুণদের হাতে যারা খেলাধুলার পোশাক পরে ঘুরছিল।

দারতার লিখেছেন যে এই সংঘাতে উজগেন রায়ট ঘটনার রেশ আছে। ওশের বাইরে এই জাতিগত দাঙ্গা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগের গ্রীষ্মে ঘটেছিল। অন্যদের সাথে তিনিও যোগ দেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বৈধতা প্রসঙ্গে:

“তারা বলছেন যে আমাদের দেশে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। তারা “জনগনের বিপ্লব” নামে নতুন একটা কথাও খুঁজে পেয়েছেন একটি অভ্যুত্থানকে ব্যাখ্যা করার জন্য। কিন্তু এই বিপ্লব কি জনগন ঘটিয়েছে? এটা একটা অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ আর রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নষ্ট করার দায়িত্ব জনগনের নামে চালিয়ে দেয়া কিছু নির্দিষ্ট মানুষের বদলে।“

এই ব্লগার আরও জানিয়েছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট বাকিয়েভের সমর্থক না, কিন্তু পুরো জাতি বিস্তৃত দুর্নীতি আর নির্বাচনের কারচুপির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার জন্য দোষী। তিনি শেষে বলেছেন যে, ”প্রত্যেক জাতি সেই নেতা পায় যে তাদের যোগ্য।“

১৪ই মে'র মধ্যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার অশান্তির জন্য দায়ী হিসাবে ইশাক মাসালিয়েভ আর উসেন সিডিকোভকে গ্রেপ্তার করে দেশের দক্ষিণে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে। সংঘাতের শীর্ষ সময়ে স্থানীয় নাগরিক মিডিয়া ওয়েবসাইট ক্লুপ.কেজির নেয়া জনমত জরীপ অনুযায়ী দেশে স্বল্প সময়ের স্থিতি আনার ব্যাপারে জনগণের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে সাময়িক প্রশাসনের ক্ষমতার উপরে।

ভালো কথা হচ্ছে গুজব যেটা শোনা যাচ্ছিল যে ১৭ই মে সোমবার রাজধানীতে অশান্তি হবে তা ব্যর্থ হয়েছে। নতুন সপ্তাহ শুরু হয় গত ৭ই এপ্রিল বিশকেকে যারা মারা গেছেন তাদের জন্যে একটা স্মরণ সভা করে, আর জালালাবাদ এর দস্তুক এ জাতিগত বাছবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .