জাপানের “দয়াবান মুষ্টিযোদ্ধা” ফিলিপাইনের দরিদ্র মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও আশা প্রদান করছে

Japanese trainor Eiji Yoshikawa (right) and Cirilo Espino (left) who won a boxing championship in Mindanao Island in the Philippines

জাপানের মুষ্টিযোদ্ধা প্রশিক্ষক এইজি ইয়োশিকাওয়া (ডানে) এবং সিরিলো এসপিনো (বামে), যে ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপের এক বক্সিং প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়লাভ করেছে।

জাপানের এক চলচ্চিত্র নির্মাতা, যিনি “দয়াবান মুষ্টিযোদ্ধা” নামে পরিচিত, তিনি ফিলিপাইনের গরীব আন্ডারডগ বা তুলনামূলক ভাবে দুর্বল কিন্তু লড়াকু মুষ্টিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদান করেন এই আশায় যে এই উৎসাহ একদিন তাদের ফিলিপাইনের প্রবাদ প্রতীম মুষ্টিযোদ্ধা মানি পাকুইয়ার মত বিজেতায় পরিণত করবে।

ফিলিপাইনে সংগ্রাম রত বক্সারদের সাথে সাক্ষাৎ-এর পর, এইজি ইয়োশিকাওয়া তাদের পরিস্থিতি দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং তাদের জন্য এক পেশাদার প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু নিজের দক্ষতা তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও তিনি একই সাথে তার কিছু বন্ধু এবং জাপানী মুষ্টিযোদ্ধাদের ফিলিপিনো মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং পরিবারকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের আহ্বান জানান। দুই বছর পর এইজি দুইজন মুষ্টিযোদ্ধাকে সফল ভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন, যারা জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে।

গ্লোবাল ভয়েসেসকে এইজি জানান, তিনি মনে করেন যে মুষ্টিযুদ্ধ তার শিক্ষার্থীদের দারিদ্র্যের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে:

মুষ্টিযোদ্ধা হওয়ার জন্য কোন ডিগ্রি অথবা সনদের প্রয়োজন নেই। আপনি হয়ত কোন কিছু নাও পড়তে পারেন, কিন্তু আপনি লড়তে পারেন। মুষ্টিযুদ্ধের জন্য যে বৃত্ত, তার ভেতরে ধনী ও দারিদ্র্যের মাঝে কোন ব্যবধান নেই। যদি আপনি আপনার দক্ষতাকে শানিত করেন, তাহলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন মানি অথবা ননিটো [ ফিলিপাইনের শিরোপা বিজেতা মুষ্টিযোদ্ধা]।

নিঃসন্দেহে খুব কম ব্যক্তি বিশ্বের সেরাদের একজন হতে পারে, কিন্তু একজন মুষ্টিযোদ্ধা বিশেষ করে লড়াই-এ পরাজয়ের পর নিজেকে চেনা, নিজের সামর্থ্য এবং দুর্বলতা সম্বন্ধে জানার মত জীবনের এই সকল বিষয় সম্বন্ধে অনেক বেশী শিক্ষালাভ করে।

বিজেতার শিরোপা চিরদিনের নয়, কিন্তু আত্ম উপলব্ধি এবং পৃথিবী সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ কেবল দীর্ঘমেয়াদি বিষয় নয়, সময়ের সাথে এই শিক্ষা ক্রমশ আরো পরিমিত ও আরো উন্নত হতে থাকে।

কিন্তু তিনি তার প্রশিক্ষণার্থীদের প্রায়শ স্মরণ করিয়ে দেন মুষ্টিযুদ্ধকে কেবল দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে দেখলে হবে না। আর এ কারণে তিনি তার মুষ্টিযোদ্ধাদের বিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করতে উৎসাহ প্রদান করেন। মুষ্টিযোদ্ধারা যে তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, এইজি এই বিষয়টিকেও সমর্থন করেন।

One of Eiji's Filipino players in a boxing match in Tokyo

এইজির অন্যতম এক ফিলিপিনো ছাত্র টোকিওর এক মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগিতায় লড়ছে।

ফিলিপিনো মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের মাঝে দারিদ্র্য বিষয়ক প্রচারণার চালানো নিয়ে এইজির অভিজ্ঞতা এক তথ্যচিত্রের বিষয়ে পরিণত হয়েছে যার শিরোনাম “জঙ্গলে থেকে আসা গর্জন”। নিচে এই তথ্যচিত্রের ট্রেলার বা প্রচারণার জন্য তৈরী করা সংক্ষিপ্ত ভিডিওটি দেখুন :

এইজি, জাপানের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এই তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করেছেন আর বিষয়টির প্রতি ছাত্ররা দারুণ ইতিবাচক সাড়া প্রদান করছে। অনেকে এই সকল দরিদ্র মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের সমর্থনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

মুষ্টিযোদ্ধা হতে ইচ্ছুক এমন সম্প্রদায়ের মাঝে ক্রীড়া বিষয়ক এক ব্যায়ামাগার গড়ে তোলার মত একটি উদ্যোগ সত্যিকার অর্থে উক্ত সম্প্রদায়ের মাঝে এক পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, আর তা সম্ভব হয়েছে এইজি ও তার বন্ধুদের শুরু করা অর্থ সংগ্রহের মত এক প্রচারণার মাধ্যমে।

Building a boxing gym in a Philippine community through a fundraising effort in Japan

জাপানের এক তহবিল সংগ্রহ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফিলিপাইনের সম্প্রদায়ের মাঝে মুষ্টিযুদ্ধ বিষয়ক এক ব্যায়ামাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

ফিলিপাইনে মুষ্টিযুদ্ধ খেলাটি জনপ্রিয় এবং অনেক তরুণ বিশ্ব মুষ্টিযোদ্ধা শিরোপা বিজেতা মানি পাকুইয়ার পেশাদারী পথ অনুসরণ করতে চায়। কিন্তু সকলে পাকুইয়া হতে পারে না, কিন্তু হাজার না হোক ফিলিপাইনে শত শত অপেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা রয়েছে, যারা গরীব অবস্থায় রয়ে যায় এবং ঠিকমত প্রশিক্ষণ পায় না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এইজির মত “দয়াবান মুষ্টিযোদ্ধা” রয়েছে, যারা কেবল দরিদ্র মুষ্টিযোদ্ধাদের পরিস্থিতি তুলে ধরছে না, একই সাথে এই সমস্ত ক্রীড়াবিদ এবং তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য জাপান এবং ফিলিপাইনের নাগরিকদের উৎসাহিত করছে।

সকল ছবি ইজি ইয়োশিকাওয়ার, অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .