২১ মিশরীয় কপ্ট নাগরিক হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে আইএসআইএস দখলকৃত লিবীয় অংশে মিশরের বোমা বর্ষণ

Egypt today bombed sites in Derna, Libya, allegedly belonging to the ISIS. Photo credit: @FreeBenghazi (Twitter)

আজ লিবিয়ার দেরনা এলাকায় মিশর বোমা বর্ষণ করেছে, ধারণা করা হয় যা আইএসআইএস নামক সংগঠনের দখলে রয়েছে। ছবির কৃতিত্ব @ফ্রিবেনগাজি (টুইটার)-এর।

একদিন পূর্বে লিবিয়ায় কর্মরত ২১ জন মিশরীয় কপ্ট খৃষ্টান নাগরিকদের নির্মম ভাবে শিরশ্ছেদের প্রতিশোধ হিসেবে মিশর আজ ভোরে লিবিয়ায় আইএসআইএস-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করেছে।

এই জঙ্গি সংগঠন ইউটিউবে একটি ভিডিও তুলে ধরে যেটিতে মিশরীয় এই কর্মীদের শিরশ্ছেদের দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে, যাদের এক মাস আগে অপহরণ করা হয়েছিল, যা মিশরে প্রচণ্ড এক ক্ষোভের আওয়াজ সৃষ্টি করেছে। যখন আইএসআইএস-এর হাতে আটক এই ২১ জনের শিরশ্ছেদের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে তখন শোক, সহানুভূতি, আর ক্রোধের বার্তায় টুইটার ভরে যায়। এই ক্ষেত্রে বর্তমান মিশর সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি নির্দেশ করে টুইটারে অজস্র সমালোচনা করা হয়।

সংবাদ সূত্র অনুসারে এই সকল হামলার মধ্যে আটটি হামলা দেরনার আইএসআইএস-এর সাথে যুক্ত সংগঠনের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির এবং গোলাবারুদ সংরক্ষণ কেন্দ্রে চালানো হয়, লিবিয়ার যে অংশ এখন থেকে এক বছর আগে এই সংগঠনটি দখল করে নিয়েছে।

লিবিয়া অবজারভার, তার টুইটার একাউন্টে সংবাদ প্রদান করেছে :

লিবিয়ার বেনগাজি থেকে বিমান বাহিনী প্রধান জানিয়েছে যে মিশর দেরনায় সেই সব এলাকায় সমন্বিত বিমান হামলা চালিয়েছে যা তার ভাষায় আইএসআইএস-এর দখলে।

ফ্রি বেনগাজি ছবি টুইট করেছে ,ধারনা করা হচ্ছে তা দেরনা থেকে করা হয়েছে যেখানে এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে:

দেরনায় বাস করা আমার বন্ধুরা জানিয়েছে যে মিশরীয় এই বিমান হামলা তিনটি যুদ্ধ বিমান অংশ নেয় এবং ৯০ মিনিট ধরে চলা এই হামলায় আটটি ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানা হয়।

আর স্বয়ং দেরনা থেকে তাকি আল শালাউয়ি এই ছবিটি প্রদর্শন করেছে:

প্রথম ছবি

সে বিমান হামলার পর-এর দ্বারা সাধিত ধ্বংসলীলার দৃশ্য তুলে ধরার জন্য ইউটিউবে এই বিষয়ে তৈরী ২০ সেকেন্ডের এক ভিডিও প্রদর্শন করেছে :

আজ সকালে দেরনায় এক বিমান হামলার পর যে ধ্বংসলীলা সাধিত হয়, লিবিইয়াতানা (আমাদের লিবিয়া) ইউটিউবে সে বিষয়ে এক ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিও তুলে ধরেছ:

এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনসমূহ, যা এক আবাসিক এলাকায় অবস্থিত, সে সব ভবন থেকে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে।

লিবিয়ার বিষয়ক সাংবাদিক এবং বিশ্লেষক ম্যারি ফিটজিরাল্ডের মতে, দেরনা হচ্ছে পূর্ব লিবিয়ায় সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি:

পূর্ব লিবিয়ার দেরনা শহরে আজ মিশরীয় বিমান বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে যার এক জঙ্গিবাদী ইতিহাস রয়েছে। এটি আল কায়েদা সহযোগী দল, সাথে আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট দলের ঘাঁটি।

কিন্তু অন্য এক টুইটে সে উল্লেখ করেছ:

মিশর পূর্ব লিবিয়ার দেরনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে আইএসআইএস-এর ভিডিও-তে উল্লেখ করা “ওয়ালিয়াত ট্রাবুলাস” ধারণা দিচ্ছে যে মিশরের কপ্ট নাগরিকদের শিরচ্ছেদ পশ্চিম লিবিয়া সংঘঠিত হয়েছে।

এবং আল রাই –এর প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা এলিজাহ জে. ম্যাগনিয়ের-এর মতে:

লিবিয়ায় অবস্থিত আইএস-এর ঘাঁটিতে মিশর সমন্বিত এক বিমান হামলা চালিয়েছে। এই বিমান হামলা আইএস-এর পাঁচ অধিনায়কের বাসগৃহ এবং “আইএস ইসলামিক আদালত”-এ আঘাত হেনেছে।

মিশরীয় সামরিক বাহিনীর ফেসবুক পাতায় লিবিয়া চালানো নিজেদের যুদ্ধ বিমানের হামলার এই ভিডিও দৃশ্য তুলে ধরেছে।

আইএসআইএস-এর পরিকল্পনায় খেলা করা:

টুইটারে অনেকের মতে, লিবিয়ায় কর্মরত ২১ জন কপ্ট মিশরীয় খৃষ্টান নাগরিকের শিরশ্ছেদে মাধ্যমে এই এলাকায় চলা সংঘর্ষে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে টেনে আনার আইএসআইএস পরিকল্পনা কাজ করেছে।
ফিলিস্তিনি নাগরিক আইয়াদ এল- বাগদাদি তার ৩৮,৪০০ টুইটা অনুসারীকে বলছে:

আঞ্চলিক শক্তিগুলোর প্রভাব ক্রমশ কমিয়ে আনার জন্য ঠিক যে ধরনের ( যেমনটা অনুমান করা যায়) প্রতিক্রিয়া এবং পরিকল্পনা করা উচিত, এসআইএস ঠিক তাই করছে।

এবং সে আরো ব্যাখ্যা করেছে:

প্রতিশোধমূলক বিমান হামলা আইএস-এর জন্য কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নয়। এই হামলায় যৌথ ভাবে সাধারণ নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।(পড়ুনঃ মৃত শিশুর ভিডিও)।

প্রাউড লিবিয়ান বলছে গৃহযুদ্ধে খণ্ডবিখণ্ড লিবিয়ায় এই হামলা কেবল আইএস-এর প্রতি সমর্থন বাড়িয়ে তুলবে:

কাকে ও কোথায় এবং কিসের উপর আঘাত হানা হয়েছে আমাদের মাঝে তা এক প্রভাব তৈরী করে? সীমান্ত পার হয়ে এসে মিশরের এই হস্তক্ষেপ আরো ধ্বংস এবং আইএসআইএস-এ নাগরিকদের যোগ দেওয়ার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেবে।

দোহায় বাস করা ব্রুকিং দোহা সেন্টারের সদস্য চার্লস লিস্টার এতে সুর মিলিয়েছে এভাবে :

আইএসআইএস আশা করছিল যে মিশর লিবিয়ার অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালাবে-এই অঞ্চলে সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তোলার তার পরিকল্পনা দারুণ ভাবে মিলে গেছে।

এবং ম্যাগনিয়ের সাথে যোগ করেছে:

এ সকল হচ্ছে আইএসআইএস-এর ইরাক এবং সিরিয়ায় তার বিরুদ্ধে লড়াই প্রচেষ্টা বিভক্ত করা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ানের মনোযোগ বিভিন্ন দিকে প্রদানে বাধ্য করার কৌশল।

এই ঘটনায় লিবীয়রা কি বলছে?

লিবীয় নাগরিকদের কাছে, এই হামলা আরো মারাত্মক এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

টুইটারের লিবিয়া লিবার্টিতে লিবীয়-আমেরিকান মাইক্রোব্লগার হেন্ড তার ৩৮,৬০০ জন অনুসারীদের বলছে :

আইএসআইএস হুমকি এবং বিদেশী হামলার বিরুদ্ধে লিবীয় নাগরিকরা এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা মাধ্যমে উদ্দীপ্ত হয়ে এসেছে-এবারও কি তারা তা হবে?

প্রাউড লিবিয়ান তার স্বদেশী পুরুষ ও নারীকে এই উপদেশ প্রদান করেছে:

লিবীয় নাগরিকেরা জেগে ওঠ! তোমাদের স্বদেশ সিরিয়া ও ইরাকের মত আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে যাচ্ছে, আর তোমাদের রাজনীতিবিদেরা ঝগড়াটে ছাড়া আর কিছু নয়।

এই টুইটার ব্যবহারকারী, যার ৫,০০০ অনুসারী রয়েছে, সে এর সাথে যোগ করেছে:

এই জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় পরিপূর্ণ ভাবে এক জাতিগত সংযুক্তি এবং ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। আমরা ২০১১ সালেও এই কথা বলেছি এবং এখন আরো একবার এই কথা উচ্চারণ করলাম এবং ভবিষ্যতেও তা বলতে থাকব।

এবং উকাওয়াস তার ৩,০০০ অনুসারীকে বলছে:

আমাদের হাতে আর সময় নেই। আমাদের বেছে নেওয়া সুযোগ খুব সীমিত এবং আমাদের সামনের দিগন্ত ক্রমশ সংকীর্ণ হয় আসছে। লিবীয় নাগরিকদের উচিত তাদের একগুঁয়ে মনোভাব এবং শত্রুতা পরিহার করা এবং এক হওয়া, তা নাহলে আমাদের চিরতরে ভুলে যেতে হবে যে লিবিয়া নামে একটা দেশ ছিল


এই বিষয়ে আরো পাঠের জন্য :

আরবী ভাষার #ضد_التدخل_العسكري_المصري_في_ليبيا এই হ্যাশট্যাগটি অনুসরণ করুন যার মানে হচ্ছে, মিশরের হামলার বিরুদ্ধে লিবিয়ার প্রতিরোধ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .