অস্ট্রেলিয়ার দুই মাদক পাচারকারীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিতে শেষ মূর্হুতের প্রাণভিক্ষা আবেদন

Keep Hope Alive

আশাকে বাঁচিয়ে রাখ- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার সৌজন্যে।

মাদক পাচারের অভিযোগে দোষী সব্যস্ত হওয়া অস্টেলিয়ার দুই নাগরিক মায়ুরান সুকুমারান এবং এ্যান্ড্রে চ্যানের জন্য সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, যারা ইন্দোনেশিয়া প্রাণদণ্ডের মত শাস্তির মুখে দাঁড়িয়ে। তারা হচ্ছে বালিনাইনের (বালির নয়জন) এক অংশ যাদের ২০০৫ সালে ডেনপাসার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা এবং বিচারের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রত্যাখান করা হয়েছে।

জাকার্তা পোস্টের সংবাদ অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি এ্যাবোট বলেছেন তিনি তাদের প্রাণদণ্ড রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন কিন্তু “মেগাফোন কূটনীতিতে” [যখন সংবাদ সম্মেলন এবং ঘোষণার মাধ্যমে দুটি দেশ আলোচনা চালিয়ে যায়] জড়াবেন না। অনেকে এতে আশ্বস্ত হতে পারেনি :

আপনার নিজের নাগরিকদের প্রাণদণ্ডে কোন আপত্তি নেই, স্বয়ং মেগাফোন ধরনের কূটনীতিতেও অনিচ্ছুক।

অস্ট্রেলিয়ায় এই বিষয়ে মতামত গ্রহণে এক জরিপ করা হয় যা বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসে। যেখানে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অন্য আরেক দেশে মাদক পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়, আপনার মতে তাহলে কি উক্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত? ফোনের মাধ্যমে চালানো এই জরিপে শতকরা ৫২ জনের উত্তর ছিল “হ্যাঁ”। যে পরিমাণ নমুনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এতে যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে তা সমালোচিত হয়েছে।

এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা এবিসি নামক রেডিও স্টেশন এই ট্রিপল যে জরিপের কারণে সমালোচিত হয় :

ডেইলি মেল এতে খানিকটা যোগ করেছে যে ট্রিপল জে–এর চালানো জরিপ সুকুমারান এবং চ্যানের প্রাণদণ্ডকে বাস্তবায়নের দিকে ঠেলে দেবে।

ইন্দোনেশীয় সরকার তাদের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণে এই জরিপটি ব্যবহার করছে:

ইন্দোনেশিয়া বালি নাইন-এর অপরাধীদের প্রাণদণ্ডের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণে ট্রিপল জে-এর এই জরিপ ব্যবহার করছে।

এই ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরে নাগরিকদের মতামত দ্বিধাবিভক্ত। শিল্পী বেন কুয়িল্টি এই দুই জনের প্রাণদণ্ডের বিরদ্ধে সবাইকে সংগঠিত করছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়া বিশপকে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন:

জুলিয়া বিশপ,দয়া করে বালি গমন করুন।

রেডিওর উপস্থাপক গ্যারি লিননেল ২৯ জানুয়ারি তারিখে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং এর সমর্থকদের বিরোধীতা করেছেন:

“বালি নাইনঃ এই ঘটনায় অভিযুক্ত সুকুমারান এবং চ্যানের জন্য কেন আমি মোমবাতি জ্বালাবো না”-গ্যারি লিননেল এর সাহসী লেখা।

শিক্ষাবিদ প্যাট্রিক স্টোক বালি নাইন-এর ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তির পক্ষে এবং বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং কেন মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নিজে কোন যুক্তি উপস্থাপন করেননি , তিনি এর উপসংহার টেনেছেন এভাবে:

বালির গভর্নর মাদে মানগাকু পাস্তিকা বলেছেন যে- তাদের মৃত্যুদণ্ড অবশ্য কার্যকর হতে হবে- তবে সেটা বালিতে নয়। মনে হচ্ছে যে এ রকম একটা ঘটনার ক্ষেত্রে এটা ঠিক আছে, যেহেতু লম্বা একটা সময় ধরে এই ধরনের ঘটনা এখানে ঘটেনি, যেখানে আমরা এক পরিপূর্ণ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি যে কখন রাষ্ট্র জীবনের এক ইতি টানবে, যা অনেকটা খুঁটিতে বাঁধা এক ব্যক্তিকে গুলি করা

বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে অনেক অস্ট্রেলীয় নাগরিক এতে একমত।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী এ্যাবোট নতুন তথ্য ধারণ আইনের সমর্থনে ঢোল পিটিয়েছে যাচ্ছেন, অন্যদিকে ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষকে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলীয় কেন্দ্রীয় পুলিশের (এএফপি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে:

যেখানে এ্যাবোট বিপর্যস্ত জনসংযোগ-এর ঘটনায় দেশের কেন্দ্রীয় পুলিশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তার বিপরীতে বালি নাইনের বেলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘটনায় এএফপির তদন্তকারীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন না তোলা বিস্ময়কর

টুইটার হ্যাশট্যাগ আইস্ট্যান্ডফর মার্সি অনলাইনে তাদের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত সমর্থন করার প্রতি সমর্থন জোটানোয় মনোযোগ প্রদান করেছে:

আমি ও আমার মেয়ে ক্ষমা প্রার্থনায় মোমবাতি প্রজ্বলন করছি।

অপরাধী যত বড় অপরাধ করে থাকুক না কেন, তার জন্য সে মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তি পেতে পারে না।

এই দুই অস্ট্রেলীয় নাগরিককে রক্ষার প্রচারনার সমালোচনাকারীদের সমালোচনায় কোন কোন টুইটার ব্যবহারকারী বিস্মিত এই কারণে যে এতে সম্ভাব্য বর্ণবাদের উপাদান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। :

আমি এই ভেবে বিস্মিত হই যে যদি বালি নাইন-এর অপরাধীরা শ্বেত বর্ণের কোন মানুষ হত তাহলে তাদের মৃত্যুদণ্ডকে কোন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা হত?

এদিকে এই বিষয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি চলছে:

মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তি বিলুপ্ত করা এবং আশাকে প্রজ্বলিত রাখার দাবীতে আজ রাতে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে আমাদের সাথে যোগ দিন।

এই ঘটনায় সিডিনির মার্টিন প্লেস নামক স্থানে এক র‍্যালির আয়োজন করা হয়েছে যে স্থানে সম্প্রতি নাগরিকদের জিম্মি করা হয় এবং সেখানে হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .