সমৃদ্ধ মস্কো লাইব্রেরিতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

Screen capture from video of the fire at the Russian Academy of Sciences’ Institute of Scientific Information on Social Sciences library. January 30, 2015. YouTube.

রুশ বিজ্ঞান একাডেমির সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুষদে সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডের ধারণ করা ভিডিওর স্ক্রিনশট। ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫ ইউটিউব।

এই সপ্তাহের সাপ্তাহিক ছুটির সময়ে মস্কোর সর্ববৃহৎ লাইব্রেরিতে ২৭ ঘন্টা ধরে আগুনে জ্বলতে থাকে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ বই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শুক্রবার ৩০ জানুয়ারি তারিখ সন্ধ্যায় এই আগুন লাগে এবং পরের দিন মধ্যরাতের পূর্ব পর্যন্ত তা পুরোপুরি আয়ত্বে আনা সম্ভব হয়নি। যে স্থানটিতে আগুন লেগেছিল সেটি রাশিয়ার বিজ্ঞান একাডেমির সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক বৈজ্ঞানিক তথ্য বিভাগ, যা তার নামের আদ্যক্ষর “ইনইওন” নামে পরিচিত।

“ইকো অফ মস্কো” নামক রেডিও স্টেশনের সংবাদ অনুসারে ইনইওন-এর সমগ্র সংগ্রহশালার এক বৃহৎ অংশ, যার মধ্যে ১৬শ শতকের দূর্লভ স্লাভ ভাষার পুস্তকসমূহ অর্ন্তভুক্ত ছিল, সে সব ভস্মীভূত হয়ে গেছে।

টুইটারে কেউ কেউ রসিকতা করে বলছে যে “বই পুড়ে যাওয়া” রাশিয়ার রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বেশ মানানসই, সমালোচকেরা অনেক সময় দেশটিকে অনেক সময় বিংশ শতকের কর্তৃত্বময় রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করছে:

যে দেশটি দাবি করে যে তারা বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে বেশী “পাঠ করে”, তাদের ক্ষেত্রে এটা একটা প্রতীকী বিষয়। রুশ বিজ্ঞান একাডেমির লাইব্রেরি পুড়ে ছাই।

মস্কোতে এক লাইব্রেরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, ক্রেমলিনের ফ্যাসিস্টরা এই আগুন লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কাজে তাদের আর প্রকাশ্যে বই পোড়াতে হচ্ছে না।

আরেকটি সাধারণ রসিকতা যা পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে তৈরি করা হয়েছে, ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে যে এই যুদ্ধে রুশ-পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মস্কোর পাঠানো সামরিক সাহায্য এবং সহায়তা লাভ করছে :

প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে যে ইউক্রেনের এক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মস্কো লাইব্রেরিতে আগুন ধরে যায়।

অন্যেরা টুইটারে এই বার্তা প্রদান করে যে অনেকের ভাবনায় বই মাত্রাতিরিক্ত টিভি দেখা এবং তার সঙ্গী হিসেবে “মগজ ধোলাই”-এর প্রতিষেধক-সেই বই এত বিপুল পরিমাণে ধ্বংস হয়ে যাওয়ায়–এমনকি আরো অনেক বেশী নাগরিক তাদের টিভির দিকে মনোযোগী হবে:

রাশিয়ার বিজ্ঞান একাডেমির লাইব্রেরি আগুনে পুড়ে গেছে। এক কোটি ৩০ লক্ষ বইয়ের এক লাইব্রেরি। বেশ, এখন আগের চেয়ে আরো বেশী নাগরিক কেবল টিভি দেখতে থাকবে।

জরুরী বিভাগের কর্মীরাও অনলাইনে সক্রিয় ছিল, এমনকি যখন অগ্নি নির্বাপক দল যখন আগুনের শিখা নির্বাপিত করার লড়াই-এ ব্যস্ত ছিল, তখনও তারা এই বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল থেকে–এর ছবি প্রদর্শন করছিল:

আজ ইনইওন লাইব্রেরির ভেতরের অবস্থা। ছবি জরুরী বিভাগের কর্মীরা।

যারা সাম্যবাদী সময়ের স্মৃতিকাতর, তাদের কথা বিবেচনা করলে ঐতিহাসিক সংগ্রহশালার সম্ভাব্য যে ক্ষতি, তা বেদনাদায়ক:

এখানে উক্ত লাইব্রেরির অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে এক কৌতূহল তৈরি করা লেখা রয়েছে:

  • আমি নিজে এই লাইব্রেরি ব্যবহার করতাম। এই গতকাল আমি সোভিয়েত ইউনিয়ানের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার [গসপ্লান] সংগ্রহশালার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি। প্রাথমিক নথির তালিকা ছিল, সোভিয়েত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা: লেলিন যুগ [তড়িৎ পরিকল্পনা এবং নতুন অর্থনৈতিক নীতি), এবং স্ট্যালিন যুগ [প্রথম পঞ্চ- বার্ষিকী পরিকল্পনা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন এবং তৎপরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে সংগঠিত করা, ব্রেঝনভের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন [অসুস্থ]।
  • বর্তমান এই উদারনৈতিক বিশৃঙ্খলার সময়ে শিক্ষামূলক কাজ এবং পরিসংখ্যানগত তথ্য কেবল পাল্টা প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, একই সাথে যখন দেশ উন্নয়নের সঠিক পথ এগিয়ে যেতে শুরু করে তখনও তা প্রয়োজনীয়, যেখানে [রাষ্ট্র যা থেকে নেয়] একে অন্যের যোগ্যতা অনুসারে এবং [আর প্রদান করে] একে অন্যের প্রয়োজন অনুসারে তা দরকার।
  • আমি কেবল এই বাস্তবতাকে বিবেচনা করছি যে সোভিয়েত যুগের সমাজ এবং ইতিহাসকে সরকারের অস্বীকারের এক প্রচেষ্টা থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত

যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে তারপরেও অনেকের চোখ স্যোশাল মিডিয়ায় আটকে ছিল, যে অগ্নিকাণ্ড অনেকটা সাধারণভাবে রুশ নাগরিকদের পাঠ অভ্যাস এবং বিশেষ ভাবে এই লাইব্রেরির ক্ষেত্রে এক দারুণ সামাজিক তাৎপর্য প্রদর্শন করেছে।

সাম্প্রতিক এক সংবাদ অনুসারে, ধারণা করা হচ্ছে যে এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ লিখিত কাজ ছাই হয়ে গেছে, যা ইনইওন-এর মোট সংগ্রহশালার প্রায় ২০ শতাংশ। তবে, তদন্তকারীরা এখনো অগ্নিকাণ্ডের কারণ নির্ধারণ করতে পারেনি, তবে প্রাথমিক প্রমাণে ধারণা করা হচ্ছে যে ভবনের ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .