অনেক বেশী পরিমাণ তথ্য কি ভারতের সবর্শেষ বন্য বাঘেদের রক্ষা করতে পারবে?

Analyzing 25,000 individual observations, wildlife managers in India find clues to help stop tiger poachers in their tracks. Photo by The Belurs (Flickr | Creative Commons)

২৫,০০০ ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন বিশ্লেষণ, ভারতের বন্যপ্রাণী পরিদর্শকদের নজরে থাকা চোরাই বাঘ শিকারী বন্ধে সাহায্য করবে। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী বেলুরসের, সিসি-বাই-এনসি-এসএ ২.০।

এই পোস্টটি রজার ডোরোইনের যা এনশিয়া.কমে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, উক্ত পত্রিকা আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিষয় সমস্যা সমাধানের কাজে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে এবং প্রবন্ধ বিনিময় চুক্তি অনুসারে এই প্রবন্ধ এখানে প্রকাশ করা হয়েছে।

ছোট্ট এক যাযাবর দল হিসেবে পরিভ্রমণ করা, সাথে চাকু, কুঠার এবং স্টিলের ফাঁদ বহন করা, ভারতের অবৈধ বাঘ শিকারীরা তাদের তুলনায় অনেক বেশী সুবিধা পায়, যারা এই বড় আকারের বেড়ালকে রক্ষার চেষ্টা করছে। অবৈধ বাঘা শিকারিরা এই প্রাণীর হাড়ের চাহিদার কারণে বাঘ শিকারে উৎসাহিত হয়, যা মূলত চীনে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই সব অবৈধ শিকারীরা প্রতি দুই থেকে তিন বছর পরপর সেই এলাকায় ফিরে আসে, যে সব এলাকাকে তারা জানে “ এসব এলাকার প্রতিটি ঝর্ণা এবং বের হয়ে আসা পাথরের ভাজকে তারা চেনে” এবং তারা বাঘের চলার পথে অথবা যে সব গর্তে পানি জমে থাকে তার কাছে বাঘ শিকারের ফাঁদ পেতে রাখে, এই বিষয়গুলো জানান বেলিন্ডা রাইট, যিনি ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই সব অবৈধ শিকারীরা খুব কমই ধরা পড়ে।

রাইট বলেন “অবৈধ শিকারীদের এই বিষয়ে জ্ঞান অবিশ্বাস্য এবং জঙ্গলের প্রতিটি কোনা তাদের পরিচিত, বইয়ের সকল কৌশল তারা ব্যবহার করে”।

কিন্তু গত আগস্টে প্রকাশিত রাইট, পরিবেশবিদ কৌস্তভ শর্মা এবং তাদের সহকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত এক সমীক্ষা, ভারতের অবৈধ বাঘ শিকারের প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিষয়টি পাল্টে ফেলতে সাহায্য করতে পারে, উল্লেখ্য যে ভারত বিশ্বের মোট বাঘের অর্ধেকের আবাসস্থল।

জার্নাল বায়োলজিক্যাল কনভারসেশন-এ এই সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা এবং তা চিহ্নিত করার এক নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, এরপর এর মাধ্যমে ভারতের ৭৩ প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক বেশী অবৈধ ভাবে বাঘ শিকার করা হয় এবং বাঘের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাচার করা হয়, এর লেখকদের মতে, পরিবেশবিদ, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং বনরক্ষী যারা বাঘ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে তাদের এই কাজে কোথায় শক্তি বৃদ্ধি করা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সে বিষয়ে ক্ষমতা প্রদান করে বিষয়টি আরো কার্যকর ভাবে অবৈধ বাঘ শিকার বন্ধ করতে পারে এবং এভাবে সকল জটিলতা সত্ত্বেও ভারতের রাজকীয় এই জাতীয় প্রাণী রক্ষা করার বিষয়টির উন্নতি ঘটানো সম্ভব।

বিগত কয়েক বছর ধরে, উর্ধ্বতন আঞ্চলিক পরিবেশবিদ শর্মা স্নো লেপার্ড ট্রাস্টের একজন প্রতিবেশবাদী এবং নেচার কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের এক বৈজ্ঞানিক, তার দল কম্পিউটার কোড লেখে এবং ২৫ হাজার ডাটা পয়েন্ট বিশ্লেষণ করেছে– যা ১৯৭২ সাল হতে শুরু এবং ভারতের ৬০৫টি জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়- অবৈধ বন্যপ্রাণী শিকারের মত অপরাধের ক্ষেত্রে তারা এই সকল ডাটা সংগ্রহ করে, যার মধ্যে রয়েছে নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করা অবৈধ বাঘ শিকারের স্থান এবং তার সে সমস্ত এলাকা থেকে বাঘের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জব্দ করা হয়েছে সে সব এলাকা। শর্মা বলেন এই তথ্য চক্র এত বিশাল যে যখনই আমি এর বিশ্লেষণ চক্র পরিচালনা করি, তখন প্রতিটি মডেলের জন্য ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে”।

রাইট বলেন, “বাঘ এবং অন্য বন্যপ্রাণী হত্যার মত সংঘঠিত অপরাধ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি ইনটেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”। এটি আরো বুদ্ধিমত্তার সাথে ঘটনাস্থলের বিষয়ে উত্তম তথ্য প্রদান করবে এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটাবে। একই সাথে এর অর্থ হচ্ছে এর মাধ্যমে পর্যায়ে কোন এলাকাকে লক্ষ্য করে পাহারা দিতে হবে এবং বনরক্ষীদের কার্যক্রম জানা যাবে। শর্মা বলেন” এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অবৈধ শিকারীদের শিকারের কৌশল পাল্টে গেছে ফলে অপরাধের ধরনও পাল্টে গেছে, আর সে কারণে সেগুলো জানাও জরুরী। আর এ কারণে গবেষকরা মডেলকে একটা সুত্রে ফেলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, যা নিয়মিত রূপে তাজা রাখা সম্ভব।

শর্মা বলেন, “দিনের শেষে আমাদের অপরাধীর চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকার চেষ্টা করতে হবে, ইনস্যুরেন্স এবং ব্যাংক কোম্পানিগুলো এই কাজটি করার চেষ্টা করে। তারা মডেল তৈরী করে এবং ধারণা তৈরী করে এবং বিনিয়োগ করে। আমাদের উভয়ের কাজে একই রকম মিল রয়েছে। আমাদের মডেল এবং ধারণা রয়েছে, এখন সেই অনুসারে আমাদের কাজে বিনিয়োগ করতে হয়”।

শর্মা আরো বলেন, “এই গবেষণায় চিহ্নিত হওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ স্থান যা অবৈধ ভাবে বাঘ শিকার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র, সেগুলো গবেষকদের বিস্মিত করেছে এবং সেখানে এই কাজে শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে হয়ত এক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। যেমন এর এক উদাহরণ হচ্ছে নেপাল-ভারত সীমান্ত, অন্য অনেক এলাকার চেয়ে এখন এখানে আগের অনেক কম আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ রয়েছে। এই গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে যে, এই অঞ্চল অবৈধ শিকার বৃদ্ধির মত এক চাপের মুখে রয়েছে, যার কারণ স্থানীয় পর্যায়ে বাঘের সংখ্যায় বৃদ্ধি এবং চীনে বাঘের হাড় পাচারের ক্ষেত্রে এই অঞ্চল এক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়া। তিনি আরো বলে এটা হচ্ছে এমন এক এলাকা যাকে আমরা অবৈধ বাঘ শিকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বা হট স্পট বলে উল্লেখ করেছি এবং নীতি নির্ধারকদের এক্ষেত্রে অবশ্যই কাজে নেমে পড়তে হবে”।
.

বর্তমান এবং পরিবর্তিত বাঘ শিকারের কেন্দ্র গণনার ক্ষেত্রে যে ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়েছে, ইতোমধ্যে ভারত জুড়ে অভিযুক্ত অবৈধ বাঘ শিকারদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। একই সাথে এই গবেষণা এই প্রমাণ পাওয়া গেছে যে অবৈধ শিকারিরা রেলে ভ্রমণ পছন্দ করে, যেখানে খুব সহজেই তারা প্রতিদিন ভ্রমণ করা লক্ষ লক্ষ যাত্রীর সাথে সহজেই মিশে যেতে পারে। বাঘ বাস করে এমন বন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ১৭টি জেলা, যার মধ্যে দিল্লি এবং ইন্দোরও রয়েছে, সেখানেও বাঘ বিষয়ক অপরাধ অনেক বেশী, কারণ এসব জায়গা বাঘের শরীরের বিভিন্ন উপাদান কেনাবেচার কেন্দ্র।

বর্তমান এবং পরিবর্তিত বাঘ শিকারের কেন্দ্র গণনার ক্ষেত্রে যে ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়েছে, ইতোমধ্যে ভারত জুড়ে অভিযুক্ত অবৈধ বাঘ শিকারদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সেপ্টেম্বরে, শর্মা গবেষণার এই সমস্ত কাগজ রাজেশ গোপালের কাছে পাঠান, যিনি ভারতের জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ বিভাগ নামক সংস্থার সদস্য সচিব, তিনি এই সকল আবিষ্কারের তথ্য বন্য বাঘ পর্যবেক্ষণ এবং সংরক্ষণ এলাকা ও সীমান্তের নিরপেক্ষ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় পরিচালকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শর্মা পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি ব্যবহার করে সম্মিলিত ভাবে স্থানীয় পর্যায়ে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে চিতাবাঘ থেকে বনরুই পর্যন্ত সকল ধরনের অবৈধ বন্যপ্রাণী হত্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

রাইট উচ্চারণ করেন “আমাদের যা প্রয়োজন তা হচ্ছে উন্নতমানের ভাল প্রযুক্তি ঘটনাস্থলে যারা আইন প্রয়োগ করবে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করা। তবে এক্ষেত্রে দুই পা, দুই হাত এবং মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে পারে এমন কারো কোন বিকল্প নেই”।

রবার্ট ডোরোইউন পরিবেশ বিষয়ক এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও লেখক। তিনি প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে সংবাদ প্রদান করে থাকেন, যার মধ্যে বাদুড় থেকে তুষার চিতা এবং জ্বালানির মত বিষয় রয়েছে। তার লেখা সায়েন্টিফিক আমেরিকা, ইয়েল এনভায়রমেন্ট ৩৬০, মাদার জোনস এন্ড গ্রিস্ট.অর্গে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি এখানে ব্লগ লিখে থাকেন এবং @রজাররিয়েল থেকে টুইট করে থাকেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .