মূল চীনা ভূখণ্ডের নাগরিকদের বিদেশে ‘বাজে আচরণ’ স্বদেশে সফলতার এক কৌশল

A viral photo circulated on Chinese social media on  a brawl among four women on a flight from mainland China to Hong Kong. Photo from Weibo.

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি যা চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শিত হয়েছে যেটিতে মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে হংকং যাবার পথে চারজন নারীর হাতাহাতির দৃশ্য ধরা পড়েছে।

বিশ্বের সংবাদপত্রের কাছে মূল চীনের ভাবমূর্তি আরো একবার ক্ষতিগ্রস্থ হল যখন মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে হংকং-এ আসা পথে এক শিশুর চিৎকারের কারণে চারজন নারীর মধ্যে হাতাহাতি ঘটনা ঘটে, যার ফলে ১৭ ডিসেম্বরে ওই বিমান তার যাত্রা বাতিল করে প্রায় আগের যাওয়ার ফিরে যাওয়ার মত উপক্রম হয়েছিল, সংবাদ অনুসারে এই তথ্য জানা গেছে।

দুই নারী তাদের পেছনের সারী থেকে আসা এক শিশুর কান্নায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং প্রতিহিংসার্থে তাদের সিট পেছনের দিকে হেলানো দেওয়া অবস্থায় করে রাখে। এই নিয়ে তর্ক শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই হাতাহাতি আরো কিছু সময় চলত, যদি না কেবিন ক্রু ঘটনাস্থলে এসে হস্তক্ষেপ করে এই বলে তাদের সতর্ক না করত যে, যদি তারা মারামারি না থামায়, তাহলে বিমান তার পুরোনো গন্তব্যস্থলে ফিরে যাবে।

এই ঘটনার মাত্র একদিন আগে চীনের এক বিমানের থাইল্যান্ডের যাত্রার সময় সিটে বসা নিয়ে এক চীনা নারী একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে গরম নুডুলসের এক কাপ দিয়ে আঘাত করে এবং তার ছেলেবন্ধু বিমানটিকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে।

একটি কঠোর বিবৃতিতে চীনের জাতীয় পর্যটন বিভাগ বলছে যে পর্যটকেরা এই যাত্রায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে, অন্য যাত্রীদের আঘাত করেছে এবং “চীনের নাগরিকদের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ভয়াবহ রকম ক্ষুণ্ণ করেছে”

এই ধরনের দুর্ঘটনা এমন এক সময় ঘটল যখন চীনের নাগরিকেরা আরো বেশী করে ভ্রমণ করছে, কিন্তু একই সাথে খারাপ আচরণের কারণে তারা দুর্নাম অর্জন করছে। এ বছর চীনের প্রায় ১০ কোটি মানুষ বিদেশ ভ্রমণ করেছে, যা বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে বেশী।

স্বদেশে আয় বাড়ার কারণে, এখন অনেক বেশী পরিমাণ চীনা নাগরিক এই প্রথম নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশ অভিযাত্রায় বের হয়েছে, বিদেশে বিশাল পরিমাণ বিলাস দ্রব্য ক্রয়ে অর্থ ব্যয় করার কারণে চীনা পর্যটকেরা সুনাম অর্জন করেছে, যার ফলে কিছু খুচরা বিক্রেতা ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলতে পারে এমন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে, যাতে তারা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। অনেক রাষ্ট্র একই সাথে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করছে এই আশায় যাতে দেশসমূহ আরও বেশী চীনা পর্যটককে আকর্ষণ করতে পারে।

একই সাথে বিদেশে চীনা পর্যটকের কারণে চীন দুর্নাম অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মিশরের এক প্রাচীন স্থাপনায় গ্রাফিতি আঁকা,তাদের সন্তানদের প্রকাশ্যে মলত্যাগে অনুমতি প্রদান করা এবং ঝগড়া ও হাতাহাতি করা।

সিঙ্গাপুরের সংবাদ ওয়েবসাইট জাওবাও.কম “কাপ নুডুলস ঘটনার পর একটা প্রবন্ধ পোস্ট করেছে ‘ যেটিতে চীনা পর্যটকদের রুঢ় আচরণকে স্বদেশে সফল হওয়ার এক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছে। যখন আপনি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবেন, তখন আপনি আপনার কাজ আদায় করতে পারবেনঃ “চীনে বাস করা যেন সেখানকার রাস্তা পার হওয়ার মত, যেখানে অল্প কয়েকজন চীনা নাগরিক আইন মেনে চলে করে। কাজে কিছু সময় কোন কিছু যাতে ঠিক মত ঘটে, তার জন্য আপনাকে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে হবে। বলা হয় যে, কোন কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য হয় আপনার কাছে টাকা অথবা ক্ষমতা থাকতে হবে,নতুবা সে ক্ষেত্রে আপনাকে রুঢ় হতে হবে, সংঘর্ষ না বাড়ালে আপনি কোন সাড়া পাবেন না।

চীনের এক জাতীয় সংবাদপত্র, দি ন্যাশনাল বিজনেস নিউজ এর উপসংহার টেনেছে, যা জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট সিনা ওয়েবোতে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে এটি মূল চীনা ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের গুণগত মান এবং চরিত্র নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের সৃষ্টি করে। এটা হাজারের মত মন্তব্য পেয়েছে এবং হাজার বারের মত এটি পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে।

ইয়ে তান এক অতি পরিচিত অর্থনীতি বিষয়ক মন্তব্যকারী, যে বিশ্বাস করেন, এই য অবাধ্য আচরণ মূল চীনা সংস্কৃতি থেকে উদ্ভুত:

恐惧文化,越凶越有人害怕,一村人全怕升级为村级恶霸,一县人全怕就是县级恶霸,以此类推,可得出黑社会运作规律。

চীনে যে ভয়ের সংস্কৃতি রয়েছে, এটি সেখান থেকে উদ্ভুত, যার মানে হচ্ছে যত আপনি নিষ্ঠুর হবেন তত লোকজন আপনাকে ভয় পাবে। যে মানুষটির ভয়ে গ্রামের সকল ব্যক্তি অস্থির সে গ্রামের সেরা ব্যক্তি; যে মানুষটি দেশের সকলকে ভীত করে রাখতে, সে দেশের সেরা ব্যক্তি, আর এভাবে অপরাধ জগৎ পরিচালিত হয়।

মিস্টার_ মেক_দি_চেঞ্জ নামক ব্যক্তি বিদেশে বাস করা এক চীনা নাগরিক, সে সিঙ্গাপুরের সংবাদপত্রের মন্তব্যের স্বরে প্রতিধ্বনি করেছে:

回国一段时间就深深体会到这一点、要么有权、要么有钱、没权没钱的就必须凶恶、不然客客气气谨守规则的基本办不了事,要么就会被人当SB耍!

যখন কিছু দিনের জন্য আমি চীনে ফিরে আসি, তখন আমি বিষয়টি গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছি যে আপনার কাছে ক্ষমতা বা অর্থ না থাকে, তাহলে যদি আপনি কোন কাজ করিয়ে নিতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই উগ্র। যদি আপনি বিনয়ী এবং আইন মেনে চলেন, তাহলে হয় আপনি কিছু পাবেন না, অথবা অন্যেরা আপনাকে বোকা হিসেবে বিবেচনা করবে!

মারিও ক্লারিয়ে এবং এলির প্রাবন্ধিক ‘আই এম মিস নান’, আরো বিস্তারিত ভাবে বাস্তবতাকে বর্ণনা করেছে:

这个倒是有可能,好好说话没人理。以前我一个朋友从悉尼回来,在上海好几次吃饭遇到好好说话没人理,得粗声粗气才上菜的遭遇。后来回悉尼也这么说话,一下子自己被自己吓到了说:啊我现在在悉尼啊,我不用这么说话了。我可以友善了!

যখন আপনি বিনয়ী, তখন আপনি কোন ভাল সেবা পাবেন না। আমার এক বান্ধবী যে এর আগে সিডনি থেকে এখানে এসেছে, সে আবিষ্কার করল যখন সে সাংহাই-এর এক রেস্তোরাঁয় বিনয়ী আচরণ করল, তখন সে কোন সেবা পেল না। যখন সে রাগ করা শুরু করল, তখনই কেবল সে তার টেবিলে তার নির্দেশীত খাবার পেল। যখন সে সিডনিতে ফিরে গেল, তখন সে আতঙ্কিত হয়ে উঠল যে এখানেও রেস্তোরাঁয় সে খারাপ আচরণ করে ফেলতে পারে। তখন সে নিজেকে বলল, আমি এখন সিডনিতে আর আমার এই রকম আচরণ করার দরকার নেই। আমি এখনো ভদ্র হতে পারি।

‘হাইপার_ইমোশন’ বিশ্বাস করে যে মূল চীনা চরিত্রের এই বিকৃতি, এর রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে এসেছে :

中国就是这样 丛林法则社会 低级社会的特点 就是暴力最强者得逞 规则都是狗屁 遵守规则的 诚信的人就吃亏 野蛮的低素质垃圾就得势 中国这个社会就是劣币驱良币的典型 终究到底 是无产阶级革命的恶果 影响至少几百年

চীনে এমন এক সমাজ বিদ্যমান যেখানে জঙ্গলের নিয়ম চালু রয়েছে। সমাজের নিম্নস্তরের এই আইন এখানকার চরিত্রে পরিণত হয়েছে যে, সবচেয়ে উগ্র শক্তি এখানে জয় লাভ করে। এই আইন হচ্ছে এক অতীব বাজে বিষয় । যারা এখানে নিয়ম মেনে চলে অথবা সৎ মানুষেরা হেরে যাবে, যারা বর্বর তারা এখানে অর্জন করবে। চীনের সমাজে সাধারণত “ খারাপ, ভালোদের তাড়িয়ে দেয়”। যা সর্বহারা বিপ্লবের ফসল এবং দেশটিকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাবিত করে যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .