আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করা কুর্দি নারীতে মুগ্ধ পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম

Two armed female members of the YPJ, a group affiliated with the People's Protection Units (YPG), walks around the base near Ras al-Ayn, a Kurdish town located in northern Syria. 11 October 2013. Photo by Younes Mohammad. Copyright Demotix

ওয়াইপিজি-এর সশস্ত্র দুই মহিলা সদস্য, ওয়াইপিজি নামক দলটি পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট (ওয়াই পিজি)-এর অঙ্গ সংগঠন, উক্ত দুই নারী রাস আল আইন নামক ঘাঁটির কাছে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আর আল আইন কুর্দিস্তানের এক শহর যা উত্তর সিরীয় সীমান্তে অবস্থিত। ১১ অক্টোরব ২০১৩। ছবি ইউনেস মোহাম্মদের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের।

ইরাকের অন্যতম এক বড় শহর মোসুলের এক উল্লেখযোগ্য অংশ আইএসআইএস এর যোদ্ধারা দখল করে নেওয়ার পর এবং তুরস্কের সীমান্তের কোবানী প্রদেশের স্বায়ত্ত্বশাসিত এক কুর্দি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই-এর ঘটনায় সশস্ত্র কুর্দি সেনাদের সাথে লড়াইরত নারীরা আলোচনায় উঠে আসে।

আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম এবং একটিভিস্টরা একই ভাবে তাদের সংবাদে এবং সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কিং সাইটে পেশমার্গ নারী যোদ্ধাদের ছবি প্রকাশ করছে। আর এই চিন্তাটি হচ্ছে সামরিক পোষাক পরিহিত নারী, ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, নির্ভয় এবং পুরুষদের পাশাপাশি লড়াই করছে দৃশ্যত যা আকর্ষণ করছে, সম্ভবত এমনকি তা চিত্তাকর্ষক কারণ এটা আইএসআইএস-এর উত্থানের প্রেক্ষিতে সামাজিক দ্বন্দ্বের এক অন্যতম বার্তা হিসেবে অনুভূত হয়েছে, যে কুখ্যাত নির্মম এই দলটি আলকায়েদার এক অঙ্গসংগঠন, যা গণ হারে ইরাকি, সিরীয় সেনা, ত্রাণকর্মী, সাংবাদিক হত্যার জন্য দায়ী এবং তারা নারী অপহরণ, ধর্ষণ, তাদের জোর বিয়ে করার মত ঘটনায় জন্য দায়ী। এই সংগঠনের মোসুলভিত্তিক প্রচারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে আইএসআইএস চায় নারীরা ঘরে বন্দী হয়ে থাকুক, যদি না খুব জরুরী কোন প্রয়োজন দেখা দেয়।

ঘটনাক্রমে মনে হয় এমন কোন দিন নেই যেদিন এই সমস্ত নারী যোদ্ধাদের ছবি প্রকাশ হয় না। কিন্তু হঠাৎ করে এত মনোযোগ লাভের বিপরীতে সত্য হচ্ছে, যুদ্ধক্ষেত্রে কুর্দি নারীরা নতুন নয়। যৌক্তিক ভাবে বলা যায়, ঐতিহাসিক ভাবে কুর্দিরা যতগুলো লড়াই লড়েছে তার সবগুলোতে পুরুষের পাশে নারীরা উপস্থিত ছিল, এবং/অথবা হয় তাদের কাজের সহযোগী হয়ে যেমন বাড়ি সামলানো, নতুন প্রজন্মকে বড় করে তোলা, ঘরের কাজের দেখাশোনা, জীবিকার ব্যবস্থা করা এবং এ রকম আরো অনেক কিছু।

নাহিদা আহমেদঃ আমরা এই বার্তা প্রদান করার জন্য পেশমার্গে যোগ দিতে চাই যে নারী এবং পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

কিরকুকে, নারী যোদ্ধার পিকেকে-এর সেনাদের দেখাচ্ছে কি ভাবে একে ৪৭ রাইফেল চালাতে হয়

আইএসআইএস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পেশমার্গ সেনাদের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কুর্দি নারীরা যে দায়িত্ব প্রদর্শন করেছেন তা দেখতে ভাল লাগছে।

নারীদের হাতে আইএস-এর যোদ্ধারা পিষ্ট হচ্ছে, যাদের তারা ঘরে বন্দী দেখতে চায়, আর এটি দারুণ আনন্দ দিচ্ছে।

আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে নারী যোদ্ধাদের প্রতি যে মুগ্ধতা মনে হচ্ছে দ্বৈত চিন্তার ক্ষেত্রে এটি এক সূচনা। পেশমার্গের নারী সেনারা আইএসআইএস-এর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং মর্যাদা অনুসারে পুরুষের সাথে সমানতালে অবস্থান গ্রহণ করেছে যা ঘটনাক্রমে মধ্যপ্রাচ্যে একেবারে অস্বাভাবিক এক ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

387px-Maggi_George-2

মার্গারেট জর্জ শেলো। পাবলিক ডোমেইন।

তবে এমন ডজন ডজন উদাহরণ রয়েছে যা তুলে ধরছে নারী যোদ্ধারা নতুন নয়, বরঞ্চ তারা ঐতিহাসিক ভাবে কুর্দি সম্প্রদায়ের মাঝে বিদ্যমান ছিল। যেমন এর এক উদাহরণ হিসেবে মার্গারেট জর্জ শেলোর এই ছবিটি খেয়াল করুন, পেশমার্গের যোদ্ধাদের সাথে যে সমস্ত নারীরা প্রথমে পাহাড়ে গিয়েছিল, ছবির এই মেয়েটি তাদের একজন এবং সে কুর্দি সংগ্রামে নারী অংশগ্রহণকারীদের এক প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

তুরস্কে বসবাসরত কুর্দিদের এক সংগ্রামের মধ্যে যেতে হচ্ছে, যার ফলে ৭০-এর দশকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি নামের সশস্ত্র (পিকেকে) দলের উদ্ভব ঘটে, যেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারী এবং পুরুষ উভয়ে রয়েছে। অন্য কথায় কুর্দিস্তানে নারী যোদ্ধারা নতুন নয়, কিন্তু স্বায়ত্তশাসন (এবং স্বাধীনতার দাবীতে) জন্য সংগ্রামরত কুর্দিস্তানের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে মূলধারার প্রচার মাধ্যম অনেক বেশী লিঙ্গীয় অবস্থান ভেদে ছবি ছাপে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .