আইস ওয়াটার –এর কথা ভুলে যান, তার বদলে নিন আদিবাসী ভাষার চ্যালেঞ্জ

Screenshots from some of the participants of the Indigenous Language Challenge

আদিবাসী ভাষার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা কয়েকজন অংশগ্রহণকারীর ভিডিওর স্ক্রীনশট

বিষয়টিকে হয় ভালবাসুন, অথবা ঘৃণা করুন, আর বছরের শুরুতে শুরু হওয়া আইস ওয়াটার বাকেট চ্যালেঞ্জ অনলাইনে আলোচনার সৃষ্টি করে, যা এ্যামোট্রফিক ল্যাটেরাল স্কোলোরিস (এএলএস) নামক রোগ সম্বন্ধে আরো বেশী সচেতনতার সৃষ্টি করেছে। এতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মাথায় বরফ শীতল ঠাণ্ডা পানি ঢালে এবং অন্য এক ব্যক্তিকে একই কাজ করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় অথবা এই দুরারোগ্য রোগের আরোগ্য লাভের জন্য পরিচালিত গবেষণায় কিছু অর্থ দান করতে বলে।

এখন আদিবাসী ভাষার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একই ধরনের এক চিন্তা ইন্টারনেটে তৈরী হয়েছে। আদিবাসী ভাষার চ্যালেঞ্জ-এর ক্ষেত্রে যিনি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, তিনি একটি আদিবাসী ভাষায় কথা বলে তা ভিডিওতে ধারণ করেন এবং অন্য একজনকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানান। এর ফলাফল হচ্ছে বিশ্বে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নাগরিকদের তৈরী ভিডিও, যাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার প্রথম বার সেই ভাষায় কথা বলেছে, তারা তাদের ভাষাকে গর্বের সাথে অনলাইনে তুলে ধরার এক উপায় হিসেবে একে বেছে নিয়েছে এবং অন্যদের একই কাজ করতে আরো বেশী উৎসাহিত করছে।

ফেসবুকে একটি দল তৈরী হয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে এ সংক্রান্ত ভিডিওর লিঙ্ক সংগ্রহ করা, যেখানে নাগরিকরা তাদের উৎসাহ প্রদর্শন করতে পারে এবং এই চ্যালেঞ্জ অংশ নেওয়া অন্যদের সাথে যুক্ত হতে পারে। অনেকে তাদের ভিডিও সরাসরি ফেসবুকে আপলোড করার বিষয়টি বেছে নিয়েছে। যেখানে কেউ একজন কাওক’ওয়ালা এবং লাকোটার মত উত্তর আমেরিকার ভাষা, সাথে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাষা, যার এক উদাহরণ হচ্ছে মিরিওয়ং-এর ভিডিওর বাক্য শুনতে পাবে।

ঠিক কোথা থেকে এই চ্যালেঞ্জের শুরু, সেই উৎসের অনুসন্ধান চলছে, কিন্তু উক্ত গ্রুপের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরে মতে, প্রথম অংশগ্রহণকারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন জেমস গেনশাও, যিনি ইয়ুরুক ভাষায় কথা বলেছেন।

কারা এর অংশগ্রহণকারী? আর কেন এই কার্য এত গুরুত্বপূর্ণ? আর্লিংটনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের আমেরিকার আদিবাসী ভাষার পরিচালক কোলেন ফিটজেরাল্ড তাঁর চিন্তা হাফিংটন পোস্ট পত্রিকায় তার নিজের ব্লগে তুলে ধরেছেন:

এই সমস্ত ভিডিওর অনেকগুলো এসেছে সেই সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের কাছ থেকে যারা এখন দ্বিতীয় ভাষা শিখছে। অনেক বছর আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার উভয় দেশের সরকার পরিচালিত বোর্ডিং স্কুল আদিবাসী পরিবারের কাছ থেকে তাদের শিশুদের গ্রহণ করেছে। আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় বেড়ে উঠতে পারলে বিষয়টির প্রভাব হত অপরিসীম। বোর্ডিং স্কুলে বেড়ে ওঠার ফলে শিশুরা বছরের পর বছর ঘরোয়া পরিবেশে বাবা মা ও দাদা দাদির সাথে নিজেদের ভাষায় কথা বলে কাটানো অমূল্য সময়টুকু হারিয়েছে। ঘর হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে শিশুদের ভাষার গঠন তৈরী হয় এবং সেখানে সমৃদ্ধি লাভ করে থাকে, এবং এখানে শিশুরা ভিন্ন ভিন্ন বাক্য গঠনের দক্ষতা অর্জন করতে শেখে, যা তার মানবিক অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করতে শেখায়। তাহলে আদিবাসী শিশুদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেল কি? হারিয়ে গেল অনেক কিছু, প্রতিদিনের ভাষার মাধ্যমে প্রদান করা নির্দেশনা, কৌতুক বলা, কিংবা কোন রন্ধন প্রণালী শেখা, প্রার্থনা, অনুষ্ঠানের ভাষণ, কিংবা পুর্ব পুরুষের গল্প বলা।

এখানে এই চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারীদের মাঝ থেকে দুটি উদাহরণ গ্রহণ করা হয়েছে, যারা ইউটিউবে তাদের ভিডিও আপলোড করেছে। জ্যাকিলিন সেইচার কথা বলছে নু চা নুলাথ ভাষায়, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পর সে এই বাক্যগুলো সবার মাঝে তুলে ধরে।

মোনিকা পিটার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করেছে যাতে সে কানিএনকেহা ভাষায় করা তার অনুবাদের কাজ প্রদর্শন করতে পারে। এরপর সে “কানিএনকেহা ভাষাকে শক্তিশালী করতে থাকা” ফেসবুক দলের সদস্য, সম্প্রদায়ের নেতা এবং শিক্ষক ও ছাত্রদের চ্যালেঞ্জ করেছে যারা এই ভাষায় কথা বলা শিখছে।

নিউজ ফ্রম নেটিভ ক্যালিফোর্নিয়া ব্লগ থেকে সংগৃহীত অন্য ভিডিও এখানে তুলে ধরা হল

মারিওন ডেলারোন্ডে কোনওয়েননেনহোনও, তার ভিডিও কানিএকেহা (মোহাক) ভাষায় কথা বলা নাগরিকদের দলে পোস্ট করেছে। কেহতে ডিয়ারের প্রদান করা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার পর তিনি উৎসাহ ভরে এতে অংশ গ্রহণ করেছেন এবং নিজের ভিডিও আপলোড করার পর তার ভাবনা এতে প্রকাশ পেয়েছে:

ইতোমধ্যে আমি চিন্তা করেছি যে আমি ভিন্ন ভিন্ন জাতির সকল ভাষা শুনেছি। আপনাদের সকলকে আমার বলার আছে যে আপনাদের সকলের ভাষা খুবই সুন্দর। যদি পারেন তাহলে আপনার নিজের ভাষায় কথা বলুন। এটা আশার সঞ্চার করে। আমি আপনাদের সকলকে ক্রমশ শেখার জন্য, অন্যদের শিক্ষা প্রদানের জন্য এবং সত্যিকার অর্থে এতে জীবন উৎসর্গ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতে চাই। আমি সত্যি খুব আনন্দিত যে আমি মোহাক ভাষায় কথা বলতে পারি। আমি অনর্গল এই ভাষায় কথা বলতে পারি না,এখনো অনেক অনেক জড়তা রয়েছে, কিন্তু আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ প্রদান করতে চাই যারা এই চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেদের কথা রেকর্ড করেছে, কারণ আপনারা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .