হংকং এ প্রতিবাদকারীরা সত্যিকার গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। শহরটিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময়ে তাদেরকে পুলিশের লাঠি চার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং পিপার স্প্রে’র শিকার হতে হয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে হংকং পুলিশ এবং প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। গণতন্ত্র সমর্থনকারী বিক্ষোভকারীরা ভালোবাসা এবং শান্তি দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নিয়েছেন। দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে তারা একটি গণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন। কেন্দ্রে অবস্থান নেয়ার পরের দিনেই তারা চীনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে এই কর্মসূচী পালন করেন। হংকং এর শীর্ষ নেতা পদে মনোনীত হতে হলে বেইজিং সমর্থক একটি বৃহৎ নির্বাচন কমিটির সংখ্যা গরিষ্ঠের ভোট পেতে হয়। এ নিয়মটি বাতিল করতেই তারা চীনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছেন।
হাজার হাজার প্রতিবাদকারী ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে রাজপথ দখল করলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে দাঙ্গা পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। আর সন্ধ্যা ৬ টায় তারা প্রতিবাদকারীদের উপর কাঁদুনে গ্যাস এবং মরিচের স্প্রে নিক্ষেপ করে। এ কলামটি প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্রের কাছে দাঙ্গা পুলিশের মুখোমুখি হয়েও তারা এখনও রাজপথে অবস্থান করছেন।
পুলিশ বাহিনীর অগুনিত সদস্য প্রতিবাদকারীদের উপর রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। প্রতিবাদ কর্মসূচীর প্রধান প্রধান আয়োজকেরা রাত ১০টা নাগাদ প্রতিবাদকারীদের প্রতি আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চীন হংকংকে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীনের কাছ থেকে হংকং কিছু নির্দিস্ট ক্ষেত্রে স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার পেতে যাচ্ছে। ফলে ২০১৭ সালে প্রধান নির্বাহী নির্বাচিত করতে একটি সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে গনতন্ত্রপন্থী সক্রিয় কর্মীরা মনে করেন, নেতা নির্বাচক কমিটি হংকং এর জনগণকে তাদের নেতা বাছাই করার অধিকারকে খর্ব করছে।
সরকারি বিভিন্ন সদর দপ্তরে ঢোকার পথ এবং রাস্তাগুলো অবরোধ করে রাখার কারণে হংকং পুলিশ এই অবস্থান কর্মসূচীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। হারকোর্ট এবং কন্নট মহাসড়ক পেড়িয়ে নৌ-বাহিনীর সদরদপ্তর এবং কেন্দ্রীয় জেলার চারপাশে আরও লোকজন পৌঁছেছে এবং আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পরেছে। ফলে দুপুর ৩ টা নাগাদ অর্থনৈতিক জেলার কেন্দ্রের দুইটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইং বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বেইজিং এর নির্ধারিত অবকাঠামোর মতে হংকং এর নির্বাচনী সংস্কার সম্ভব নয় এবং এ সকল অবৈধ প্রতিবাদ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নৌ-বাহিনীর সদরদপ্তর এবং কেন্দ্রীয় জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সরকারি সদরদপ্তরের চারপাশে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী জড়ো হয়েছেন। তারা বেশকিছু রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশ এসব প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কমলা রঙের একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছে। তাতে লেখা আছে, “স্থান ত্যাগ কর নতুবা গুলি করা হবেঃ”
Never seen such a clampdown in #HongKong – police flash warning to protesters ‘DISPERSE OR WE FIRE’ h/t @george_chenpic.twitter.com/Wy3Lun1NEC
— Anuj Chopra (@AnujChopra) September 28, 2014
হংকং এ এমন শক্ত হাতে সরকারি দমন আগে কখনও দেখা যায়নি – পুলিশ সতর্ক করে দিয়েছে “স্থান ত্যাগ কর নতুবা গুলি করা হবে”
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দাঙ্গা পুলিশ প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া শুরু করে।
অনেক টুইটার ব্যবহারকারীই এই সহিংস আক্রমণের ছবি আপলোড করেছেন। @ইমরিকা১৮৭৪ একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ছবিটিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য করে দাঙ্গা পুলিশকে অস্ত্র তাক করে রাখতে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে প্রতিবাদকারীদের হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছেঃ
This is #HongKong !!!! Please share to the world!!!!! #hk926#hk928#HKDemocracy#HKStudentStrikepic.twitter.com/lLy2sf8FD8
— Rika (@imrika1874) September 28, 2014
এটা হংকং !!!!! দয়া করে সাড়া পৃথিবীতে এটি ছড়িয়ে দিন !!!!!
@জেরোমিউ এই দৃশ্যটি পোস্ট করেছেনঃ
[urgent] plz viral: brutal HK police fire #Teargas to peaceful protestors, threaten to shoot them!!! #hk926pic.twitter.com/gLx3KLohy9
— Jeromy-Yu Chan (@jeromyu) September 28, 2014
[জরুরী] দ্রুত ছড়িয়ে পড়া খবর: শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের পাশবিক হংকং পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে, তাদের গুলি করারও হুমকি দিয়েছে!!!
সাংবাদিক এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা পুলিশের মরিচের স্প্রে আক্রমণের শিকার হয়েছেনঃ
Hong Kong's most recognizable face pic.twitter.com/nRl1d17a5T
— edde (@Edourdoo) September 28, 2014
হংকং এর সবচেয়ে চেনা মুখ
@USADHK@GlobalSolidHK HK police grabs elderly protester, turns her+pepper sprays in the face: http://t.co/o6aFXLzUE3 Outrageous conduct!
— cayenneleung (@cayenneleung1) September 28, 2014
হংকং পুলিশ বৃদ্ধ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে এবং তাঁর মুখে মরিচ স্প্রে প্রোয়গ করেছে
প্রতিবাদস্থল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে জনগণ কিছুটা সময়ের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছেন। তবে তারা আরও ভাল কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে ফিরে এসেছেন। তারা রেইনকোট, গ্যাস মাস্ক এবং রোদ চশমা নিয়ে আবার হাজির হয়েছেনঃ
Students getting ready for the night.Stunning organization #Hongkongprotests#occupyAdmiralty#hk926pic.twitter.com/7y56TxYzDz
— Violeta Camarasa (@VioletaCamarasa) September 28, 2014
নাইট ডট স্টানিং প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাত্ররা প্রস্তুত হচ্ছে
RT @kathy_gao: Crowds become agitated as more police arrive! Shouting “police leave!” #HongKong#OccupyCentralpic.twitter.com/kWntxzTH8y
— W. (@_wli) September 28, 2014
আরো পুলিশ আসার পর জনতা বিচলিত হয়ে পড়ে! তাঁর চিৎকার শুরু করে “পুলিশ স্থান ত্যাগ কর!”
এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি পুলিশ মেট্রো কোম্পানিকে নৌ-বাহিনীর সদরদপ্তর বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা চালাতে আরও বেশি সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ জড়ো করতে পারে। তবে পুলিশকে আটকাতে পাতাল পথগুলোর প্রবেশমুখ প্রতিবাদকারীরা বন্ধ করে দিয়েছেঃ
Chu Hai College students took shot of #Police deploying MTR trains to deploy more policemen #OccupyAdmiraltypic.twitter.com/OIT8F0pONB
— Galileo Cheng (@galileo44) September 28, 2014
চু হ্যায় কলেজ ছাত্রদের সরিয়ে দিতে অতিরিক্ত পুলিশ স্থাপন করা হয়েছে
Admiralty MTR station blockage #HK926pic.twitter.com/fDOPHKDSld
— Kris Cheng (@krislc) September 28, 2014
নৌসেনা বিভাগ এমটিআর স্টেশন অবরোধ
পুলিশ সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেশনের ছাত্র ইউনিয়ন এ সপ্তাহে লাগাতার ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হংকং ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। হংকং এর পেশাদার শিক্ষক ইউনিয়ন এবং হংকং এর সমাজ কল্যাণ কর্মীদের সাধারণ ইউনিয়নও শিক্ষক ধর্মঘট শুরুর ডাক দিয়েছে।