প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের “শান্ত” হতে বলছেন আফগানিস্তানের আইস বাকেট চ্যালেঞ্জাররা

Screenshot from video uploaded onto.

“শান্ত হোন” ফেসবুক পাতায় আপলোড কৃত ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট। 

‘শান্ত হোন’ নামের একটি পাবলিক ফেসবুক গ্রুপ গত ৩০ আগস্ট তারিখে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওটিতে রাজনৈতিক শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে বিস্ময়কর আইস বাকেট বা বরফ বালতি চ্যালেঞ্জে দুই জন আফগান নাগরিক সম্পন্ন করেছেন।

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এবং আশরাফ গনি গত ৭ জুলাই তারিখ থেকে দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন। ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগের মধ্য দিয়ে গনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে জিতে যাওয়ার সময় থেকে এই অচলাবস্থার শুরু হয়। রাজনৈতিকভাবে বেশ ঘোলাটে একটি পরিস্থিতিতে ভোটের শুদ্ধতা পরীক্ষা করে বরফ ডুবানোর প্রতিযোগীরা উভয় রাজনীতিবিদের প্রতি ভোটের শুদ্ধি পরীক্ষার ফলাফল মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফলাফল যাই হোক না কেন – প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে রাজনৈতিক ক্ষমতা এই প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রে রূপ নেয়া নিশ্চিত করতে এবং স্থিতিশীলতার নামে এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই খেলার ভিডিওটি একশ বারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে।   

ভিডিওটি থেকে নেওয়া আরও একটি স্ক্রিনশট। স্ক্রিপ্টে লিখা আছে, “মহামান্য আফগানরা, শান্ত হোন!!!” 

ওয়াহিদ রাহিমদিলের লেখা নিচের দীর্ঘ এবং গুরুগম্ভীর খোলা চিঠির পরে গ্রুপের পেজে ভিডিও ক্লিপটি মুখবন্ধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছেঃ 

আমাদের দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে আমরা বেশ বিরক্ত হয়ে পড়েছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য আমাদের নেতাদের প্রতি আমরা দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সকল আফগানকে আমরা এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি। আমরা তাদের একই দাবি জানাতে উদ্বুদ্ধ করেছি! আমরা আশা করি, বরফ বালতি চ্যালেঞ্জে আমাদের এই অর্জন আপনাদের ভালো লেগেছে! ওয়া হামেশা খুনসার্দ বাশেদ! আপনারা উপভোগ করুন!  

ওয়াহিদ রাহিমদিলের পোস্ট করা ভিডিওটি অন্যান্য আফগানদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আদায় করতে সমর্থ হয়েছেঃ 

শান্ত হোন ওয়াহিদ জান। জন কেরি’কে আবার আসতে হবে না। আমি আশা করি তারা [আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এবং আশরাফ গনি]  আপনার কথা শুনবেন। 

মাসুদ বাবাক মন্তব্য করেছেনঃ 

রাহিমদিল সাইবের ভাবনাটি দারুণ। “খুনসার্দ বাশিদ” যার অর্থ “শান্ত হোন” একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশ। এটির মধ্য দিয়ে তিনি নেতৃত্বের মূল বিষয়গুলো তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন।  

এই খেলার কিছু সমর্থকেরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাদের উৎসাহে একেবারে বরফ ঢেলে দিয়েছেন। সাইদ ওসমানি লিখেছেনঃ  

اين كارها ديوانه كي است اين چي كار است كه شما انجام ميديد

এই খেলাগুলো বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। 

মির হাসিবুল্লাহ তাঁর কথার জবাবে বলেছেনঃ 

!!خونسرد باش برادر عزیز

শান্ত হোন, আমার ভাই!! 

তারেক ওসমানি এই উদ্যোগের সমালোচনা করে পোস্ট করেছেনঃ 

বাহ, এটি ছিল এএলএস’এর বরফ বালতি চ্যালেঞ্জ। আপনি যখন এএলএস পাবেন তখন আপনার কেমন লাগবে সে অনুভূতিকে ধোঁকা দেয়ার জন্য ছদ্মরূপ ধারণ করাই চ্যালেঞ্জটির আসল উদ্দেশ্য। এটি কোন রক্ত শীতলকারী চ্যালেঞ্জ নয়। বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।  

আমানুল্লাহ নুরিস্তানির যুক্তি খন্ডনঃ 

জনাব তারেক ওসমানি, এটি কোন এএলএস এর বরফ বালতি চ্যালেঞ্জ নয়। এটি আমাদের নিজস্ব বিষয় প্রসঙ্গে একটি স্থানীয় সংস্করণ। আমরা জনগণকে “শীতল-রক্ত বিশিষ্ট” হতে বলছি না। আমরা তাদেরকে শান্ত হতে বলছি। এটি একেবারেই ভিন্ন একটি বিষয়। এএলএস ফাউন্ডেশনের প্রতি আপনার সমর্থনের জন্য আপনাকে আমি সম্মান করি। তবে এর চেয়েও অনেক বড় বড় বিষয় রয়েছে যেগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন। খুনসার্দ বাশেদ! [শান্ত হোন!]   

সম্প্রতি আবদুল্লাহ আব্দুল্লাহ’র শিবির থেকেই এই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ানো হচ্ছে। সাবেক ডাক্তার এবং উত্তরাঞ্চলীয় জোটের এই যোদ্ধা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটে প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা ভোটে প্রথম স্থান থেকে নেমে দ্বিতীয়তে চলে আসেন। তাঁর দল ২৭ জুন তারিখে একটি ধারনকৃত ভিডিও প্রকাশ করে। তারা ভিডিওটিতে বলেছেন দ্বিতীয় দফায় ভোট প্রদানের সময় আবারও গনির পক্ষে ভোট কারচুপি করা হয়েছে তা প্রমাণিত। জাতিসংঘ এই ভোটের স্বচ্ছতা পরীক্ষা করে দেখছে। আবদুল্লাহ বর্তমানে এই চলমান স্বচ্ছতা যাচাই পরীক্ষা বর্জন করেছেন। তাঁর দল এই স্বচ্ছতা যাচাই পরীক্ষাকে “দন্তহীন” বলে অভিযোগ করেছেন। যাচাই প্রক্রিয়া বর্জনের সে মূহুর্ত থেকেই উত্তেজনা বেড়ে যেতে শুরু করেছে। এমন এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেই শান্ত হোন চ্যালেঞ্জটি ত্বরান্বিত হয়েছে।        

কারজাই ইতোমধ্যে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখনও কোণ উত্তরাধিকার তাঁর দায়িত্ব বুঝে নেননি। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জন কুবিসের ভাষ্য মতে, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .