ব্রাজিলের ফরতালেজার দু'টি বিশ্বকাপের গল্প

"Enough with evictions. We want housing", says the yellow banner by MCP. Photo shared on Twitter by Jornalismo B profile (@jornalismob).

“বাস্তুচ্যুতি অনেক হয়েছে। এবার আমাদের ঘরবাড়ি দাও” লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদে নামে মুভমেন্ট অব পিপলস কাউন্সিল। ছবিটি টুইটারে শেয়ার করেছেন জার্নালিসমো বি প্রোফাইল (@jornalismob)।

জুন মাসের ১৭ তারিখের কথা। সেদিন স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল আর মেক্সিকোর মধ্যে খেলা। খেলা হবে ফরতেলেজা শহরে অ্যারেনা ক্যাসতেলাও স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামে দু'দলের সমর্থকরা ভুভুজেলা বাজাচ্ছেন। বর্ণিল ব্যানার, সাজগোজ আর চিত্কারে মাতিয়ে রেখেছেন পুরো স্টেডিয়াম। কিন্তু কান পাতলে স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদী গর্জনও শোনা যাচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকেই চলছে বিক্ষোভ মিছিল। তাই ব্রাজিলের মানুষ এটার সাথে পরিচিত হয়ে গেছেন। কিন্তু মেক্সিকানরা সেদিনই পরিচিত হলেন। খেলা দেখতে স্টেডিয়ামের ঢোকার আগে রাস্তায় দেখলেন বিক্ষুদ্ধ মানুষের মুখ।

বিশ্বকাপ আয়োজন করতে ব্রাজিল বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। নতুন নতুন স্টেডিয়াম বানিয়েছে। হোটেল, অবকাশকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অনেক মানুষ। অন্যদিকে সামাজিক খাতে সরকারের বিনিয়োগ একদম শুন্যের কোঠায়। এজন্য সরকার এবং ফিফা'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই ব্রাজিলের বহু মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন।

প্রায় এক বছর আগে কনফেডারেশন কাপে ফরতেলেজায় দু'দল আরো একবার মুখোমুখি হয়েছিল। সেবার ব্রাজিল মেক্সিকোকে দুই গোলের ব্যবধানে হারায়। সেই খেলার দিনও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী স্টেডিয়ামের বাইরে আলবার্তো ক্র্যভেইরো এবং পাউলিনো রোচা অ্যাভিনিউতে জড়ো হয়েছিলেন। তারা অবকাঠামো নির্মাণের অজুহাতে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং জনগণের অর্থের অপব্যয়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। সে সময়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করে।

তবে এবারের খেলায় ব্রাজিলের ভাগ্য প্রসন্ন ছিল না। তারা মেক্সিকোর সাথে ড্র করে। আর মাঠের বাইরে বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল আলবার্তো ক্র্যভেইরো অ্যাভিনিউতে মিলিটারি পুলিশের স্পেশাল বাহিনী নিয়োজিত করতে হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা স্টেডিয়ামের চারপাশ ঘিরে রাখে।

ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিজম কালেক্টিভ নাইজেরিয়া তাদের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, তরুণ, ছাত্র, নারীবাদী সংগঠনের কর্মীদের বিক্ষোভে যোগ দিতে আসার ছবি প্রকাশ করেছেন।

Protesters start to gather in Alberto Craveiro Avenue, before one the police blockades around Arena Castelão stadium. Photo by Nigéria Collective, published on Facebook, June 17.

বিক্ষোভকারীরা আলবার্তো ক্র্যাভেইরা অ্যাভিনিউতে জড়ো হচ্ছেন। ছবি নেয়া হয়েছে নাইজেরিয়া কালেক্টিভের ফেসবুক পেজ থেকে। ১৭ জুন ২০১৪।

Heavily armed police form a double blockade to prevent protesters from getting closer to the stadium. Photo by Nigéria Collective, published on Facebook, June 17.

পুলিশ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দু'স্তরে ব্লক করেছে, যাতে বিক্ষোভকারীরা স্টেডিয়ামের দিকে যেতে না পারে। ছবি নেয়া হয়েছে নাইজেরিয়া কালেক্টিভের ফেসবুক পেজ থেকে। ১৭ জুন ২০১৪।

রণপ্রস্তুতি নেয়া পুলিশের পোশাকে কোনো ব্যাজ ছিল না। তারা বিক্ষোভকারীদের তল্লাশি করে। তল্লাশি করার কারণ প্রসঙ্গে তারা মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম অন দ্য স্ট্রিট-এর একজন সদস্যকে জানায়, “আমরা আমাদের কাজ করছি। সন্দেহভাজন সবকিছু্ই পরখ করে দেখছি। বিশেষ করে কেউ মলোটোভ ককটেল বহন করছে কি না।” উল্লেখ্য, অন দ্য স্ট্রিট বিক্ষোভ চলাকালে ফরতেলাজায় মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

Heavily armed and unidentified police officers search protesters in Fortaleza before the game. Photo shared by platform Na Rua on Facebook.

খেলা শুরুর আগে ফরতেলাজার বিক্ষোভকারীদের তল্লাশি করে পুলিশ। ছবি তুলেছেন নাতাশা ক্রুজ। না রুয়া'র [অন দ্য স্ট্রিট] ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে।

স্টেডিয়ামের আশেপাশে কিংবা কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকরা বিক্ষোভে যোগ দিলে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এমনকি বিশ্বকাপের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদেরও বিক্ষোভ কর্মসুচীতে যোগ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ তাদেরকে এক্সপ্রেস হাইওয়ের একপাশে আটকে রেখেছিল। সেখান থেকেই তারা তাদের উচ্ছেদের প্রতিবাদ করছিলেন। সামাজিক নিরাপত্তা না দিতে পারার ব্যর্থতার জন্য মেয়রকে অভিযুক্ত করেন।

মেক্সিকোর ফুটবল সমর্থকদের জন্য চমক  

ব্রাজিলের সাথে ড্র করে মেক্সিকোর ফুটবল সমর্থকরা খুব খুশি। একদল সমর্থক মেক্সিকোর অ্যানিমেশন কার্টুন চরিত্র এল কাপুলিন কলোরেডো‘র কস্টিউম পরে এসেছিলেন। মেক্সিকোর ২০ জন ফুটবল সমর্থক এই সাজে এসেছিলেন। আরেকজন নারী সমর্থক জনপ্রিয় টিভি সিরিজ এল স্যাভো ডেল অচো‘র চরিত্র লা সিলিন্ড্রিনা'র পোশাক পরে এসেছিলেন। এই টিভি সিরিজ দু'টি রবার্টো গোমেজ বলানোস নামের একজন নির্মাতা বানিয়েছেন। উভয়ই সিরিজ-ই ব্রাজিলে ব্যাপক জনপ্রিয়।

এল কাপুলিন কলোরেডোর কস্টিউম পরে মেক্সিকান সমর্থকদের স্টেডিয়ামের আসার ছবি শেয়ার করেছেন টুইটার ব্যবহারকারী অ্যালিসন:

সেরা বিশ্বকাপ। ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোর খেলা দেখতে কাপুলিন অ্যারেনা ক্যাসতেলাও স্টেডিয়ামে যাচ্ছে।

ক্যাসতেলাও স্টেডিয়ামের সামনের সারিতে আরো কাপুলিন রয়েছে। হাহাহহা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .