রাশিয়া বলছে ইন্টারনেট চরমপন্থার প্রসার ঘটায়

Is the Internet Russia's greatest extremist threat? Images mixed by author.

ইন্টারনেট রাশিয়ার সবচেয়ে বড় চরমপন্থী হুমকি কি? লেখক দ্বারা মিশ্র চিত্র।

রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহিংস চরমপন্থা প্রতিহত করার জন্য একটি দশ বছর মেয়াদী কৌশলের খসড়া তৈরি করেছে যা ফেডারেল আইনের অধীনে ঘৃণাঘটিত অপরাধ থেকে শুরু করে সশস্ত্র বিপ্লব সবকিছু অন্তভুর্ক্ত করেছে । সংবাদপত্র কামেরসান্টের ফাঁস করা এই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ চরমপন্থীদের তথ্যের সূত্রের ওপর আঘাত হানবে এবং এবং চরমপন্থার ধারণার প্রসার প্রতিরোধের জন্য কাজ করবে। 

পরিকল্পনাটি রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানোকে “সমাজে মৌলবাদ প্রসারের মৌলিক উপকরণ”  হিসাবে চিহ্নিত করেছে, এই  যুক্তিতে যে চরমপন্থীরা অনলাইনে ঘৃণ্য ধারণা ছড়ানোর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে দাঙ্গায় রুপান্তর করতে পারে। 

কামেরসান্টের মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন কৌশল “চরমপন্থা প্রকাশ” থেকে মনোযোগ সরিয়ে সরাসরি “চরমপন্থী মতাদর্শ” চ্যালেঞ্জ করার প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বাস্তবে, এর ফলে সরকারের নজরদারী ক্ষমতার প্রসার ঘটবে যা কর্মকর্তাদের অনলাইনে সহিংস না হলেও নির্দিষ্ট ভাবাদর্শের অনুভূতি প্রচার করে এরকম তথ্যের প্রচার নিরুদ্ধ করবার ক্ষমতা প্রদান করবে।

পরিকল্পনাটিতে চরমপন্থা মোকাবেলা করার জন্য চারটি প্রধান ধাপের প্রস্তাব দেওয়া হয়:

  1. চরমপন্থী মতাদর্শগত প্রচারণার বিষয়ে আরো গভীরভাবে রাশিয়ার অনলাইন এবং এবং প্রথাগত প্রচার মাধ্যম নিরীক্ষণ করা
  2.  এ ধরনের তথ্যসমূহের প্রবেশাধিকার সীমিত করতে নতুন পদ্ধতির বিকাশ। যেমন, রাশিয়ার ইন্টারনেটের কালো-তালিকা বিস্তৃত করার ব্যাপারে লেখকরা মত দিয়েছে 
  3. সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলিতে “পাল্টা প্রোপাগান্ডা” প্রচারণা সংগঠিত করা
  4. স্কুলের বাচ্চাদের এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সংস্কার ঘটানো যাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরমপন্থার বিরুদ্ধে ধারণা সৃষ্টি হয় এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার নৈতিক ও পেশাগত বাধ্যবাধকতার চেতনা জাগ্রত হয় 

“পরিকল্পনার লেখকেরা,” কামেরসান্ট মতে, “সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ‘আদর্শিক সমর্থন’ প্রত্যাশা করছে।”

রাশিয়াই একমাত্র দেশ নয় যেখানে ইন্টারনেটকে চরমপন্থা বিস্তারের একটি হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ২০১১ সালের মার্কিন সরকারের একটি রিপোর্টে ওয়েবকে ‘মৌলবাদকে সহিংসতায় রূপ দেবার ক্ষেত্রে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী উপাদান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যা বিদেশে থাকা সহিংস চরমপন্থীদের সরাসরি তাদের লক্ষ্যবস্তু শ্রোতাদের সাথে সংযোগ করিয়ে দেয়।  হোয়াইট হাউজের নেতৃত্বে চরমপন্থার বিরুদ্ধে “সামগ্রিক সরকারের সমন্বয়” কার্যক্রম পরিচালিত হয় যার মধ্যে স্কুল পরবর্তী কার্যক্রম, নতুন অভিবাসীদের সহায়তা করে এরকম কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন, সহিংসতা-প্রতিরোধ কার্যক্রম, এবং অন্যান্য “নন সিকিউরিটি অংশীদার”।

কিন্তু রাশিয়া এর পাল্টা-চরমপন্থা নীতি ইন্টারনেটের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। রুনেট পর্যবেক্ষক ওয়েবসাইট টিজার্নাল ডট আরইউতে ভিক্টর স্টেপানভ লিখেছেন, “অনলাইন চরমপন্থার বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ ওয়েব রিসোর্স অবরুদ্ধ বা ‘ইন্টারনেট প্রদানকারীর সঙ্গে কাজ’ শর্তায়িত করা না, যা রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা থেকে ভিন্ন।”

বিভিন্ন প্রতিবেদনে ব্যক্ত করা হয়েছে যে ওয়াশিংটনের চরমপন্থা ও ইন্টারনেট সম্পর্কে যে ভয় তা সন্ত্রাস ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বাথে, মতাদর্শগত কোনকিছু নয়। অন্যদিকে, মস্কো, অনলাইন সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং রাস্তায় বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বলছে, যা ক্রেমলিনের সন্ত্রাসবাদের তুলনায় রাশিয়ার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিষয়ে বেশি উদ্বেগের ইঙ্গিত প্রকাশ করে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি পাল্টা-চরমপন্থা কৌশল উপস্থাপন করেছে মানবাধিকার সম্পর্কিত রাষ্ট্রপতি পরিষদে যা রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং সুশীল সমাজ বিষয়ে ক্রেমলিনকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। পরিষদের সদস্যরা ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আপাতদৃষ্টিতে যা আসলে অবিরামভাবে রুনেটের স্বাধীনতা খর্বকারী আইনের তালিকায় নতুন সংযোজন মাত্র।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .