সিরিয়ার শহর হোমসে অবরোধের মাঝে আহার

এই পোস্টটি পূর্বে সিরিয়া আনটোল্ডে প্রকাশিত হয়েছে

হোমসি হ্যামবার্গার, ঘেরাও মিষ্টি, উদ্বিগ্ন পিজা……বর্তমানে হোমসের নাগরিকরা তাদের প্রতিদিনের খাবারের নাম উল্লেখ করার সময় এই নামগুলো উল্লেখ করছে, যে শহরটি ২৪ মাস ধরে অবরোধে মাঝে রয়েছে, যার ফলে শহরের বাসিন্দারা যা পাচ্ছে তাই খেতে তারা বাধ্য হচ্ছে। তাদের খাদ্য তালিকায় এখন রাস্তার পাশে জন্মানো ঘাস থেকে কচ্ছপ, পাখি, পোকা উঠে এসেছে, আর এইসব রান্নায় হোসের নাগরিকরা তাদের সুপরিচিত সৃষ্টিশীলতা এবং সব কিছুকে সহজ ভাবে নেওয়ার বিষয়কে অন্য এক স্তরে নিয়ে গেছে।

Traditional Syrian manaqish, cooked in the besieged city of Homs. Source: Meals Under Siege facebook page

ঐতিহ্যবাহী সিরীয় খাবার মানাকিশ, অবরুদ্ধ শহর হোমসে করা রান্না। সূত্রঃ- “মিলস আন্ডার দি সেইজ”-এর ফেসবুকের পাতা।

 

অবরোধের মাঝে আহার।

এপ্রিল ২০১৪-এ” মিলস আন্ডার দি সেইজ” নামক এক ফেসবুকের পাতা তৈরী করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের অনাহারে মারার প্রচেষ্টা মোকাবেলায় জন্য এক আলোচনা কেন্দ্র তৈরী করা। আটা, চাল, ময়দা এবং নিত্য পণ্য যা ঐতিহ্যগত ভাবে এক সময় সিরিয়ার সকল রান্নাঘরে মিলত, অবরুদ্ধ এলাকার প্রায় সকল ঘরে এখন আর তার দেখা মিলছে না। অবরোধ এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকজন বাসিন্দা কিছু কিছু পণ্য মজুত করে রেখেছিল, কিন্তু যথারীতি দ্রুত তা ফুরিয়ে যায়।

প্রবাদে আছে “প্রয়োজনীতা উদ্ভাবনের চাবিকাঠি”। হোমসের পুরোনো এলাকায় বাস করা এক ব্যক্তি সিরিয়া আনটোল্ডকে জানাচ্ছে “তার মানে, আমরা এখন এমন এক অবস্থায় রয়েছি, যার ফলে হাতের কাছে যা পাচ্ছি তাই দিয়ে মানাকিশ রান্না করার চেষ্টা করছি”। তিনি আরো বলেন- খাবারে মধ্যে এই বীজ অর্ন্তভুক্ত রয়েছে, যা আমরা হাতের নাগালে পেয়েছি, কিন্তু আমরা এই বিষয়ে একমত হতে পারছি না যে এটা কি কোন মসলা নাকি মেহেদি, এখন প্রাপ্ত “উপাদান যাই হোক না কেন, তাতে এক চিমটি লবণ ঢেলে দিন, ব্যাস, তা খাওয়ার যোগ্য হয়ে গেল।

একই সাথে প্রয়োজনের তাগিদে অবরুদ্ধ এই নগরের বাসিন্দাদের নাগালের মধ্যে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাই খেয়ে তাদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছে, যে সব খাবারের মধ্যে রয়েছে কচ্ছপ, পাখি এবং পোকামাকড়, যা কোনদিন সিরিয়ার রন্ধনশিল্পের অংশ ছিল না।

 

A stew made of figs and medlar. Source: Meals Under Siege facebook page

মেডলার নামক আপেল জাতীয় ফল এবং ডুমুরের চচ্চড়ি। সূত্র “মিলস আন্ডার দি সেইজ”-এর ফেসবুকের পাতা।

“প্রথমে কচ্ছপের মাংসটাকে সিদ্ধ করে নিতে হবে, তারপর এর মধ্যে মেডলার এবং ডুমুর দিতে হবে, অথবা এটাকে এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ঝোল করার উপযোগী হয়। বলা যেতে পারে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কচ্ছপের মাংস অতীব উত্তম খাদ্য”।

অবরোধের সময়, হোমসের নাগরিকরা সৃষ্টিশীল রান্নায় যে দক্ষতা অর্জন করেছে তা একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে থাকা অন্য এলাকার নাগরিকদের কাজে এসেছে। এই সব রন্ধন প্রণালীর ছবি তোলা হয়েছে এবং ফেসবুকে প্রতিদিন সেগুলোর ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে, যাতে অন্যেরা এতে উৎসাহিত হতে পারে এবং রান্নার জন্য নিজেদের কাছে যে দুষ্পাপ্য সামগ্রী রয়েছে তা ভাঁড়ারের জন্য ব্যবহার করতে পারে।

নিজেদের সুবিখ্যাত রোসবোধকে প্রমাণ করতে, হোমসের নাগরিকরা তাদের পরিস্থিতি বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছে যেমন “আমি শুধু এক পাখির মাংস রান্না করেছি, আকারে তা এতই ছোট যে আমি নিশ্চিত নই, আদতে তা কি কোন পাখি নাকি সেটা একটা মসলা” এবং “ আমার এক বন্ধু আমাকে বলল যে, প্রতিবেশী আঙ্গুরলতার পাতার ভাগ্যে কি ঘটেছে তা শোনার পর তার বাগানের আঙ্গুরলতার পাতারা এখন আর বের হতে চাচ্ছে না।”।

 

সকল বাঁধা অতিক্রম করা

বাইরের একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে বলা যায় যে ‘কোন ব্যক্তির খাওয়ার ব্যাপারে মানসিক প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে ফেলা উচিত’ অথবা ‘কখনো বিশেষ কিছু খাবার খেতে পারব না’, এমন চিন্তা ঝেড়ে ফেলা উচিত। কিন্তু অবরুদ্ধ সিরীয় নাগরিকদের মাথা থেকে এ দুটো বিষয় অনেক আগে উধাও হয়ে গেছে। যখন আপনি ক্ষুধার্থ, “তখন খাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোন মানসিক বাঁধা থাকে না”।

দেশটির শাসকেরা তাদের অনাহারে রাখার যে নীতি গ্রহণ করেছে, সৃষ্টিশীলতা এবং হাস্যরস নাগরিকদের এই অবস্থার প্রতিরোধে সাহায্য করছে। এমন কি তারা এই অবস্থায় দুষ্প্রাপ্য যে সব উপাদান দিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছিল, এখন সে সব উপাদানও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন আমাদের সূত্র উত্তর করে:

“সত্যি, আমরা বর্তমানের বাইরে কিছু ভাবতে পারি না। আমরা জানি না, আগামীকাল আমাদের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা খেয়াল করেছি, যখনই আমরা ভাবতে শুরু করি যে আমাদের কাছে আর তেমন কোন প্রচলিত খাদ্যসামগ্রী অবশিষ্ট নেই, তখন আমরা এমন কিছু নতুন উপাদান খুঁজে পাই যা খাওয়ার যোগ্য। আমরা আশা করি পরম করুণাময় আমাদের তা সরবরাহ করে যাবে।”

Meal made of grasshoppers. Source: Meals Under Siege facebook page

ঘাসফড়িং দিয়ে তৈরী খাবার। সূত্র “মিলস আন্ডার দি সেইজ”-এর ফেসবুকের পাতা

 

এই অবস্থার বাস্তবতায়, ফেসবুকে পোস্ট করা খাবারের ছবিতে করা মন্তব্যে এই বিষয়টি উঠে এসেছে যে, “এমনকি সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতেও একজন মানুষ সুখী হতে পার”।

সিরিয়ার অনুষ্ঠিত প্রথম বিক্ষোভ, যা মার্চ ২০১১-এ অনুষ্ঠিত হয়, সে বিক্ষোভ হাজার হাজার নাগরিককে রাস্তায় নিয়ে আসে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত, প্রচণ্ড দুর্দশার মাঝেও হোমস বাসী বিশ্বের নাগরিকদের মর্যাদা বজায় রাখা, প্রতিরোধ এবং সৃষ্টিশীলতার বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে আসছে।

এই পোস্টটি পূর্বে সিরিয়া আনটোল্ডে প্রকাশিত হয়েছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .