সিরিয়া: দুই বছর পর আমরা জানলাম, আমরা সকলে প্রচণ্ড ভুল করেছি

ফেসবুকে পোস্ট করা অবশ্য পাঠ্য এমন এক লেখায় সিরীয় নাগরিক হিব্বা দিওয়াতি সিরীয় বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিকীতে তার দেশের পরিস্থিতির বিষয়ে আলোকপাত করেছে।

লেখিকা বিপ্লবের শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার কারণে হওয়া তার নিজের চার দিনের কারাবাসের কথা:

আজ আমি হালকা হৃদয়ে কিছু বিষয় তুলে ধরব। দুই বছর আগে আমরা দামেস্কে-এ সুর্যের নিচে হেঁটে গিয়েছিলাম এবং আমি আমার সান ফ্রান্সিসকো সোয়েটার-এ ঘেমে উঠতে করতে শুরু করলাম; এরপর আমি উপলব্ধি করতে পারলাম আজ্ঞাত স্থানে থাকার সে কয়টি দিন কত শীতল হতে পারে।

দু বছর আগে, আমরা ভাবতাম চারদিনের কারাবাস যেন আসলে এক উদযাপন ছাড়া কিছুই না। আর সে সময় এটা তার যোগ্য ছিল, কারণ শীঘ্রই সব কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটবে, বিপ্লবের জয় হবে, আর আমরা এই দ্বৈত জীবনের ইতি ঘটাবো এবং আমরা যে সে সুন্দর সিরিয়া নির্মাণে স্বপ্ন দেখেছি তা নির্মাণে একসাথে মিলে কাজ করব, যে স্বপ্নের সিরিয়া হবে গণতান্ত্রিক, যেখানে থাকবে সমতা, ক্রমাগত হুমকির বদলে থাকবে শান্তি, এবং স্বাধীনতা।

দুই বছর আগে আমি ছিলাম বন্ধু পরিবেষ্টিত, যাদের অনেকে আদালত ভবন থেকে বিতাড়িত হয়েছিল এবং তাদেরকে বলা হয়েছিল বাইরে অপেক্ষা করতে। আমাদের মুক্তির পর আলিঙ্গন এবং হাসির মাঝে এদের একজন রসিকতা করে আমাকে বলল, সৌভাগ্যবতী, বিপ্লব প্রায় শেষ হতে চলল আর আমি এখনো গ্রেফতার হইনি, “বিষয়টি ন্যায্য হল না”।

হিবা, উল্লেখ করছে:

দু বছর পরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের কারণে যে পাঁচজন তরুণের সাথে আমাকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের একজন আবার বিক্ষোভে অংশ নিতে গেল। সে ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক ছাত্র, মাঠ পর্যায়ের এক চিকিৎসক এবং সে এক ভয়াবহ অবস্থায় প্রায় এক বছর আটক ছিল।

যে সমস্ত বন্ধু আল নাসের বা “বিজয় সড়কে” বাইরে অবস্থান নিয়ে ছিল, তারা এখন বিচ্ছিন্নভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে, অন্যরা যে সমস্ত জায়গায় পাড়ি জমিয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি নাম হচ্ছে বার্লিন, ইস্তাম্বুল, ইরাক, বৈরুত, এবং আম্মান। অন্যের এখনো দামেস্কে বাস করে। এদিকে কয়েকজন যথারীতি “মুক্ত” হওয়া এলাকায় বাস করছে।

তার লেখায়, লেখিকা সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির যে বর্ণনা করেছে, তা নিচে তুলে ধরা হল:

দুই বছর পর, দক্ষিণ দামেস্কের শিশুরা রাস্তায় নুড়ি পাথর খাচ্ছে কারণ অবরোধের কারণে তারা উপোস করে মরছে। আলেপ্পো, অথবা তার যা অবশিষ্ট আছে তা টিএনটি ব্যারেল বোমার আঘাতে ভেঙ্গে পড়ছে। এই সকল উদ্বেগ চিহ্ন সত্ত্বেও অসাধারণ সুন্দর কেসাব –এর উপর আসাদ বোমা হামলা চালাচ্ছে। দামেস্কের কেন্দ্রে মর্টারের আঘাত এসে পড়ছে, যার পেছনে বিদ্রোহীদের হাত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তারা আসলে জানে না তারা কি করছে। অত্যাচারের কারণে প্রতিদিন ডজন খানেক বন্দী মারা যাচ্ছে। অভিশপ্ত ইসলামিক ফ্রন্টের জেহরান, উপকূলে জাতিগত বিশুদ্ধতার আহ্বান জানাচ্ছে। আইএসআইএস-এর দ্বারা সুশীল সমাজের একটিভিস্টদের গ্রেফতার এবং তাদের নির্মম ভাবে হত্যা করছে। সিরিয়া শিল্প এবং উদ্বাস্তুর সংখ্যায় রেকর্ড করেছে। সাংবাদিকরা যুদ্ধ বিমানে করে সংবাদ সংগ্রহে যাচ্ছে। সবখানে যোদ্ধাদের দেখা মিলছে, কিন্তু কোথাও কোন খাবারের সন্ধান নেই।

হিবা আরো উল্লেখ করছে:

দুই বছর আগে আমরা কেউ চিন্তা করিনি যে সবকিছু এভাবে ভেঙ্গে পড়বে। দুই বছর আগে আমরা দুই বছর পর আমাদের দুঃস্বপ্নের মত ঘৃণা এবং জীবন হারানোয় বিষয়টি মহামারী আকারে হানা দেবে।

দুই বছর আগে, ফিলিস্তিনি এক বন্ধু দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল এবং এই ঘটনার বিষয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী প্রচার করেছিল। তার নিজের ধারণা সম্বন্ধে তার নিজের বেশ আস্থা ছিল, কালো ও সাদা কফি, চামড়ার জ্যাকেট, একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাওয়া, আমার এই বন্ধুর মাথায় ছিল কেবল মার্কসীয় দর্শন, ইতিহাস এবং রাজনীতি।

“আর কিছুদিনের মধ্যে আমেরিকানরা আমাদের এখানে বোমা বর্ষণ করবে। শাসক দল হোমসের যে অবস্থা করেছে তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হয় না, কিন্তু এটা আমাদের আঘাত প্রদান করবে, সবচেয়ে বড় কথা আমরা রাজধানীতে। এতে উভয়ের ক্ষতি হবে ,হয়ত এমনকি আমাদেরও, কিন্তু আসাদ এলাকা ত্যাগ করবে, আর এরপর আমরা এই জঞ্জাল পরিষ্কার করা শুরু করতে পারি”।

তিনি উপসংহার টানেন এভাবে:

দুই বছর পর আমরা জানলাম, আমরা সকলে প্রচণ্ড ভুল করেছি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .