মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় নুতন বর্ষ প্রতিবাদ

#তুরুনে বিশাল জনসমাগম।  

কুয়ালালামপুরে প্রাক নববর্ষ কালীন একটি অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ কর্মসূচীতে পরিণত হয়েছে। বেশ কিছু মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং সেবার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এটি তাদের মনে ছাপ ফেলেছে। তাই সেখানে কয়েক হাজার মালয়েশিয়ান নাগরিক বিরোধীদলের সাথে যোগ দিয়েছে।

প্রধানত শিক্ষার্থীরা এই জীবনধারণ খরচ কমানো আন্দোলনের (গেরাকান তুরুন কোস সারা হিডাপ) আয়োজন করেছে। কয়েক হাজার লোককে দাতারান মারদেকা উদ্যানে বার্ষিক নুতন বছরের ক্ষণ গণনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তুরুন সমবেত করেছে। দেশটিতে জীবনধারণ খরচ বেড়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তারা এই অনুষ্ঠানটিকে ব্যবহার করেছে। 

সরকার ঘোষণা দিয়েছে, জনকল্যাণে ব্যয়কে আরো যুক্তিসঙ্গত করতে জ্বালানী এবং চিনির ওপর দেয়া ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যদিকে আরো ঘোষণা দেয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ বিল, পেট্রোল, চিনি, কুলালামপুরে সম্পত্তি মূল্যায়ণ হার, গণপরিবহন ভাড়া এবং মহাসড়কগুলোতে পথ শুল্কের হার বাড়ানো হবে।

পুলিশ প্রতিবাদকারীদেরকে আয়োজনস্থলের কাছে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে, তবে প্রতিবাদকারী তরুণদের বিরুদ্ধে পুলিশ অনুষ্ঠানটি ব্যাহত করার অভিযোগ করেছে। কনসার্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং আতশবাজির পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এতে করে অনেকেই হতাশ হয়েছেন।  

অনিলনেটো লক্ষ্য করেছেন যে প্রতিবাদকারীদের বেশীরভাগই তরুণঃ      

প্রতিবাদকারীদের বেশীরভাগই দেখা গেছে খুব তরুণ। কারণ এই বাড়ন্ত জীবনধারণ ব্যয়ের সাথে খাপ খাওয়াতে তাদেরই সবচেয়ে বেশী বেগ পেতে হবে।

…সে সব সাহসী মালয়েশিয়ানদেরকে অভিবাদন, যারা সতর্কবাণী উপেক্ষা করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন এবং গতরাতে শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছেন। 

বিকল্প খবরের গ্রুপ, মালয়েশিয়াকিনি এই ঘটনা সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করেছে এবং নিম্নোক্ত বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেঃ    

বেশীরভাগ প্রতিবাদকারীরাই তরুণ। পরিবেশটি বেশ হৈচৈ পূর্ণ ছিল। সারা মিছিল জুড়ে তারা জাতীয় সঙ্গীত গাইছিল, বক্তৃতা দিচ্ছিল এবং সমস্বরে স্লোগান দিচ্ছিল।  

মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিছিলটির আশেপাশের পরিচ্ছেদবিন্দুতে যেসব ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছিল, তারা সেসব পোস্টগুলো ছেড়ে চলে গিয়েছিল।         

নুতন বছরের প্রতিবাদের বেশ কিছু দৃশ্য এই ভিডিওটিতে দেখা যাবেঃ 

কিন্তু পুলিশ মনে করে খুব কম সংখ্যক জনগণই র‍্যালীটিতে সমর্থন জানিয়েছেঃ     

সত্যিকার অর্থে, তারা ছোট একটি দল নুতন বছর উদযাপনের এই জনসমুদ্রে আরোহণের চেষ্টা করে। র‍্যালীতে বিপুল বিস্তৃত জনগণের সমর্থন রয়েছে এমন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটে ডাউনলোড করা বিভিন্ন ছবিতে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে তারা এমনটি করেছে।

অতঃপর, প্রতিবাদকারীরা অস্বীকার করেছে যে তারা নিয়ম বহির্ভুতভাবে এই প্রতিবাদ কার্যক্রম চালিয়েছে। সাধারন মালয়েশিয়ানরা যে এই প্রতিবাদে সমর্থন জানিয়েছে তাঁর প্রমাণ স্বরূপ প্রতিবাদ কর্মসূচীটি ছত্রভঙ্গ হওয়ার আগে প্রতিবাদকারী সম্প্রদায় তাদের জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে।      

টুইটার হ্যাশট্যাগ #তুরুন ব্যবহার করে, মালয়েশিয়ার ইন্টারনেটবাসীরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচী সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া শেয়ার করেছেন। কেউ কেউ প্রতিবাদকারীদের সাহসের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু অন্যান্যরা বলেছেন, যথাযথ সময় এবং স্থানে তাদের দুঃখ দূর্দশাকে অতিরঞ্জিত করে দলটি প্ররোচিত করেছে। 

আমাদের জন্য মূল্য বৃদ্ধি এতোটা আকাশ-চুম্বী হয়ে যায়নি, যে আমাদের #তুরুন নামের একটি হ্যাশট্যাগের দরকার হবে। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা যথাক্রমে এই সমস্যাকে ধীরে ধীরে দূর করে দিবে।

সত্যিকার অর্থেই আমি বরং তাদেরকে শ্রদ্ধা করি, যারা এই #তুরুন র‍্যালীতে (যতদূর শুনেছি, এটি শান্তিপূর্ণ ছিল) অংশগ্রহণ করেছে। 

আমরা আপনাকে বলছি না যে আমাদের ভাতা বন্ধ করে দিন। আমরা আপনাদেরকে দুর্নীতি, অপচয় এবং গোপন বিষয় ফাঁস হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে বলছি! #তুরুন #এফবি 

@এ্যাড্রিয়ানএনসিএফ আরটি “মা, আমি এখানে” ২০১৩ সালের সর্বোত্তম স্বাক্ষরঃ পাঙ্গুং বানদারায়ার সামনে এই জনসমাগম #তুরুন #আরপিডিএম৩১ডি     

সরকার কয়েক দিন আগে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জনগণের অসন্তোষ দূর করতে একটি আদেশে ১১ টি মিতব্যয়িতার মনদন্ড বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও তুরুন প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে।  

জুরাইরি এআর বিশ্লেষণ করেছেন, কেন তুরুন প্রতিবাদ গত কয়েক বছরে এতো দ্রুত গতিশীল হতে পেরেছেঃ                    

দলটি যে উপায়ে অপরিহার্য কর্তব্য বলে বিবেচনা করেঃ এটি ২০১৪ সালকে “জনগণের দূর্ভোগের” বছর বলে দাবি করেছে। নুতন বছর সম্পর্কে খুশী হওয়ার মতো কোন কারণই নেই। 

এই র‍্যালী আয়োজকেরা শুরু থেকেই খুব স্পষ্টভাবে এটির করণিয় বিষয় নির্ধারণ করেছেঃ ব্যাপক সংখ্যক জিনিসের মূল্য এবং হার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং জীবনধারণ ব্যয়ের আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

হয়তো আয়োজকদের জন্য এখানে আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় আছেঃ এই ইস্যুগুলো জনগণের কাছে খুবই প্রিয়। সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা এবং জীবিকার মতো ইস্যুগুলো ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে  ব্যাপকভাবে তাড়িয়ে বেড়াতে সক্ষম।

আমাদের পকেটের টাকার মূল্য কমে যাওয়া সম্পর্কে তুরুন কথা বলেছে। অন্যান্যদের মতো তারা সকল বয়সী লোককেই আকৃষ্ট করেছে। 

যদি সরকার দেশটির নাগরিকদের ভোগ করা অর্থনৈতিক দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, তবে মালয়েশিয়াতে আগামী কয়েক মাসে যা ঘটবে, তুরুন প্রতিবাদ হয়তো ছিল তারই একটি আগাম চিত্র। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .