বিপুল অংকের ঘুষ কেলেঙ্কারির দায়ে বরখাস্ত হলেন কয়েকশ চীনা আইনপ্রণেতা

একটি বিশাল নির্বাচনে প্রবঞ্চনা করতে কয়েক লক্ষ মার্কিন ডলার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চীনের দক্ষিণের হেঙ্গিয়াং শহরের বেশীরভাগ পার্লামেন্ট সদস্যকে দায়িত্ব হতে বরখাস্ত করা হয়েছে।

দৈনিক হুনান পত্রিকায় ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, হেঙ্গিয়াংশহরের ৫১৮ জন আইনপ্রণেতা এবং পার্লামেন্টের ৬৮ জন কর্মচারী ঘুষ নেয়ার সময় হাতে নাতে ধরা পড়েছেন। তাই ৫১৮ জন পার্লামেন্ট সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ ৫৬ জন প্রতিনিধিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার জন্য তারা ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ দেওয়ার সময় হাতে নাতে ধরা পরেছে।

কিয়াও মুয়ের মতে, বেইজিং বৈদেশিক অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ পাঠ কেন্দ্রের পরিচালক কংগ্রেসের একজন সদস্য হতে যাচ্ছেন। তিনি রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। কয়েক বছর আগে দলটি স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের সূচনা করার পর থেকে এ পর্যন্ত ভোটের সময় টাকা ছিটানোর সমস্যাটি বেশ বিস্তৃতি লাভ করেছে।

রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম সিনহুয়া লিখেছেঃ

A cartoonist drew a picture based on the scandal. Photo from Weibo

সিনা উইবো থেকে ঝাউ গুপিং এর আঁকা কার্টুন।  

দলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হলে এবং দেশটির মৌলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের বিশ্বাস ধরে রাখতে হলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে হবে এবং কঠিন শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে।

চীনের একটি দৈনিক কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে ব্যাখ্যা করেছেঃ

হেঙ্গিয়াং শহরে ঘুষ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি দেখিয়ে দিয়েছে, একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা কতোটা জরুরী।

এই ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক ওয়েব ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন, এই ঘুষ আদানপ্রদান কি শুধুমাত্র হেঙ্গিয়াং শহরেই সীমাবদ্ধ ?

আইনজীবি হুয়াং লেপিং বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন [ম্যান্দারিন]: 

钱从何而来?当选后究竟有多少回报? 衡阳贿选实践,将现行选举制度的根子问题彻底曝光,支撑选举的两大力量来源,一个是money,一个是power。

এই টাকা কোথা থেকে আসে? নির্বাচনের পর একেকজন লোক কতোটুকু লাভবান হয়? হেঙ্গিয়াং শহরে ঘুষ কেলেঙ্কারি, বিরাজমান নির্বাচনী ব্যবস্থার মূল সমস্যা ফাঁস করে দিয়েছে। এই নির্বাচনকে মূলত: দু’টি উৎস সমর্থন করেঃ একটি হচ্ছে টাকা, আরেকটি হচ্ছে ক্ষমতা। 

সাংবাদিক শি শুসি কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেনঃ

湖南此次对衡阳贿选案不遮不掩,痛下重拳,严厉追究,无疑是次值得称道的亡羊补牢,也是对各地人大选举敲响警钟。但一根本问题是:这样的贿选案产生的根源是什么?今后如何有效从制度上彻底防范?怎样保障人大代表的选举公开公正地进行?

হেঙ্গিয়াং ঘুষ কেলেঙ্কারি সম্পর্কে কি এই বার হুনান সংবাদ প্রকাশ করেছে? যদি করে থাকে তবে এটি করতালি দিয়ে অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। সমগ্র এনপিসি জুড়ে নির্বাচনের জন্য এটি একটি হুঁশিয়ারি সংকেত হিসেবে কাজ করেছে। যাই হোক, মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছেঃ এই ঘুষের টাকার উৎস কি? ভবিষ্যতে কার্যকরভাবে এই ঘুষ প্রদান কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? কীভাবে একটি উন্মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয়া যায়?

টেলিভিশন উপস্থাপক ঝাং লিউয়ান একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেনঃ

这种贿选在全国不会是个例,如果不赋予人民真正的选举权,选举最后就是官员暗箱操作的一场秀。规范民主选举制度,不是惩治了几个贿选干部就解决的事!

কোনভাবেই এটি কোন ব্যক্তিগত ঘুষের মামলা নয়। যদি আপনি জনগণকে ভোট প্রদানের প্রকৃত অধিকার না দেন, তবে নির্বাচন শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের একটি দেখানো অনুষ্ঠানে পরিনত হবে। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রণালীবদ্ধভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যক। শুধুমাত্র কয়েকজন ঘুষখোর বাহিনীর স্থায়ী সংস্থাপনকে শাস্তি প্রদান করলেই হবে না। 

ব্যবহারকারী “হং জিংতিয়ান” মনে করেন নির্বাচন নিজেই সাধারণ মানুষের জীবনযাপন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেঃ   

其实湖南贿选事件只是冰山一角而已。看看全国的村委会选举,贿选是普遍现象。对于老百姓来说,谁当官跟自己没有任何关系。你给我钱我就收着,选谁都一样。

এমনকি এই মানব ঘুষ মামলাটি একটি বড় বরফ খণ্ডের একটি ডগা মাত্র। জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত গ্রাম নির্বাচনগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। ঘুষ আদান প্রদান একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যেই জনপ্রতিনিধি হোক না কেন, তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায় না। যে তাদেরকে টাকা দেয়, তাকেই সাধারণ মানুষ ভোট দেয়। সব কিছুর পরে যে লোকগুলো নির্বাচিত হয়, তারা সবাই একই রকম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হেঙ্গিয়াং শহরের ঘুষ কেলেঙ্কারি কোন গোপন বিষয় নয়। এ বছরের শুরুতে চীনে কয়েকজন তদন্তকারী সাংবাদিকের মধ্যে মামলাটি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিভিন্ন চাপ এবং সেন্সরশিপের কারণে তারা এই খবরটি প্রকাশ করতে পারছিলেন না। হাইকু কলেজ অব ইকোনোমিক্স থেকে ডঃ লিউ ইয়ুন লিখেছেনঃ 

湖南衡阳人大代表贿选案值得注意的是除了大面积大规模贿选暴露的人大选举制度的弊端,还有此案是在中央最高层的多次直接干预下才得以查清并做出处理的。

তাঁর সাথে সাথে নির্বাচনী ব্যবস্থার বাঁধা সম্পর্কে এই ধরনের একটি কেলেঙ্কারি ফাঁসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের বৃহদাকৃতির ঘুষের মামলা চিহ্নিত করতে এবং প্রকাশ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরাসরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।  

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .