ভারতে সমকামিতা অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টের রায়

Hundreds gathered in central Delhi to protest against the Supreme Court decision toverturn a 2009 High Court ruling and instead, ruled in favour of 'Section 377,' a colonial era law which renders same sex relationships in India an illegal offense. Image by Louise Dowse. Copyright Demotix (11/12/2013)

দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন হাজারো মানুষ। এই রায়ের ফলে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল হয়েছে। এর ফলে দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারা এখন থেকে আবারো প্রযোজ্য হবে। ঔপনিবেশিক আমলে চালু হওয়া ওই বিধিতে সমকামিতাকে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ছবি তুলেছেন লুইস ডাউসি। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১১/১২/২০১৩)।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট সমকামিতাকে অবৈধ হিসেবে রায় দিয়েছেন। এই রায় শুনে অবাক হয়েছেন অনেকেই। এর আগে দিল্লির হাইকোর্ট সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে সেই ব্রিটিশ আমলে আইনের চেপে বসেছে ভারতীয়দের উপরে। ব্রিটিশ যুগের আইন অনুযায়ী, সমকামিতা শুধু অপরাধই নয়, পশুপাখি এবং শিশুদের সাথে যৌনকর্মের মতো নিন্দনীয় ও সেটা। এই রায়ের ফলে সমকামীদের অধিকার আবার লঙ্ঘিত হলো।

এদিকে সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে রক্ষণশীল সংগঠন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট সমলিঙ্গের সম্পর্ককে বৈধতা দিয়েছিল। তবে নতুন এ রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এটি এখন নির্ভর করতে সংসদের ওপরে।

ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারা ১৫৩ বছরের পুরোনো ঔপনিবেশিক আমলের আইন। এই আইন অনুযায়ী, সমলিঙ্গের যৌন সম্পর্ক “অপ্রাকৃতিক অপরাধ” এবং অপরাধীর এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত শাস্তি হতে পারে। আম জনতা ব্লগ ব্যঙ্গ করে প্রাকৃতিক যৌনক্রিয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কী ধরনের গাইডলাইন আছে এবং কী অনুমোদন করে তার একটি তালিকা করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন লেখক কামায়ানি বালি মহাবাল:

আজকে সমকামিতাকে অবৈধ ঘোষণা করা হলো। সুপ্রিম কোর্ট ভারতকে ২০০৮ সালে নয়, সেই উনিশ শতকে নিয়ে গেলেন। যেইসব মানুষ যারা বন্ধু, পরিবার এবং সমাজকে গর্বের সাথে তাদের যৌন প্রবৃত্তির কথা বলেছিল, এরকম লক্ষ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাছাড়া ২০০৯ সাল থেকে বিগত চার বছর ধরে যেসব সংগঠন সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করছিল, তাদের মুখেও চুনকালি মাখা হলো। এইচআইভি সংক্রমণ কমিয়ে আনতে এমএসএম গ্রুপের সাথে যেসব সরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছিলেন, তারাও ধোলাই হয়ে গেলেন। এটা অনেকটা বাবা রামদেবের সমকামী সম্প্রদায়ের ৩০ মিলিয়ন মানুষকে ‘আসক্ত’ হিসেবে অভিহিত করে, তাদের সুস্থ করে তুলতে আশ্রমে ডেকে এনে ইয়োগা করানোর মতোই ব্যাপার।

ব্লগার এবং অ্যাকটিভিস্ট রিতা ব্যানার্জি এই রায়ে নৈতিকতার চেয়ে রাজনৈতিক ব্যাপার বেশি ছিল বলে মনে করেন। ফার্স্ট পোস্টে শুভজিৎ উল্লেখ করেছেন, ৩৭৭ ধারা অফিসে নিয়ে আসা হলে সমকামীদের জন্য এক ভয়াবহ ব্যাপার হবে। কেন না, সারাদেশ সমকামিতাকে পাপ হিসেবে দেখে:

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাজের ক্ষেত্র থেকে ‘বাইরে বের’ হওয়ার জন্য দশবার ভাববো। অফিসে আমি একটি দলের নেতৃত্ব দেই। অফিসের কাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গুণ দরকার। পুরো দলকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আর এখানে যদি কেউ জেনে যায় আপনি একজন সমকামী, তাহলে পেশাগত দক্ষতা কিংবা গুণ থাকা সত্ত্বেও এটা আপনার জন্য বিরাট অপূর্ণতা তৈরি করবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় এগুলোকে আইনি বৈধতা দিলো।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আদিত্য নিগম কাফিলা ব্লগে প্রতিবাদের ঘোষণা দিয়ে লিখেছেন:

দু:খজনক! লজ্জাকর!! ন্যাক্কারজনক!!!

দিল্লি হাইকোর্টের সমকামিতাকে বৈধতা দেয়ার রায়কে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ভারতের ইতিহাসে সবচে’ পশ্চাদগামী রায় দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কী যুক্তিতে এটিকে অবৈধ বললেন, তার বিবরণ এখনো জানা যায় নি। তবে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। এখন সময় আইন অমান্য করার, প্রতিবাদ করার।

আজ ১১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে যন্তর-মন্তরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বিশ্বকে জানিয়ে দেব- ‘উই আর অল ক্যুইয়ার'। আমরা এও ঘোষণা দিবো, এটা শুধুমাত্র সমকামীদের লড়াই নয়, এটি আমাদের সবচে’ মৌলিক মানবাধিকারের লড়াই।

ব্ল্যাক নয়েজ ব্লগ সমকামী অধিকারকর্মী গৌতম ভানের সংবাদ সম্মেলনের খবর শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, “যেখানে সামাজিক প্রাসঙ্গিকতার ব্যাপারটাই ঠিক হয় নি, সেখানে আইনি প্রাসঙ্গিকতার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়”:

নিউজ লন্ড্রিতে ভিসভাক সেন এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন:

তারা এখনো তাদের মনস্থির করে উঠতে পারেন নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মতে, সমকামিতা অনৈতিক এবং বিপদগামী মনের প্রতিচ্ছবি। এটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করলে, নৈতিক অবনতি ঘটবে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর সাথে একমত নয়। তারা ৩৭৭ ধারাকে এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে বিবেচনা করছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর টুইটারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে।
দেশটির কমিউনিকেশন, আইটি এবং শিপিং মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা টুইট করেছেন:

এই একই সুপ্রিম কোর্ট গতকালও প্রাজ্ঞ ছিল। আজকে তারা ৩৭৭ ধারা নিয়ে রায় দিয়ে আমাদের হতাশ করলো। এটা সুপ্রিম কোর্টের ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।

সিনেমা পরিচালক এবং কফি উইথ করণের উপস্থাপক করণ জোহর লিখেছেন:

৩৭৭ ধারা শুধুমাত্র মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, এটা আমাদের দেশের গণতন্ত্রকেও মরীচিকা বানিয়ে ফেলবে।

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী শাবানা আজমী একে অগণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন:

অবাক করা রায়! ৩৭৭ ধারা মানবাধিকারের লংঘন এবং অগণতান্ত্রিক। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সংসদ ৩৭৭ ধারা বাতিল করে দিতে পারে। অপরাধী? কীভাবে?

Image from the fifth annual Delhi Queer Pride Parade 2012 in central New Delhi, India. The future of this parade is uncertain after this Supreme Court Verdict. Image by  Jiti Chadha. Copyright demotix (25/11/2012)

ভারতের নয়া দিল্লির ৫ম বার্ষিক দিল্লি সমকামী প্রাইড প্যারেড ২০১২ থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ছবি তুলেছেন জিতি চাধা। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৫/১১/২০১২)। (25/11/2012)

সাংবাদিক বুকরাহ দত্ত লেখক বিক্রম শেঠের সাথে তার আলাপচারিতা টুইট করেছেন:

বিক্রম শেঠ আমাকে বলেছেন: গতকাল আমি অপরাধী ছিলাম না। কিন্তু আজ আমি অপরাধী। আমি তাদের একজন যে, কাকে ভালোবাসব তার জন্য ঈশ্বরের অনুমতি নিতে বসে থাকি না

সিএসএম-এর ভারতীয় প্রতিনিধি এবং কাফিলার সহ-সম্পাদক শিভাম ভিজ উল্লেখ করেছেন:

সুপ্রিম কোর্টের রায় বিচারিকভাবেই হোমোফোবিয়াকে মুখোশ পরিয়ে রাখবে।

লাইটহাউজ ইনসাইটে প্রশান্ত নাইডু টুইটারের আরো কিছু প্রতিক্রিয়া সংকলন করেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .