অহিংস একটিভিস্ট রাজান জায়তুনেহ এবং তার দল সিরিয়ায় অপহৃত হয়েছে

একটিভিস্ট নিউজ এ্যাসোসিয়েশন সংবাদ প্রদান করছে যে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপশহর এলাকার ভায়োলেশন ডকুমেন্টেশন সেন্টারের দোমা (ভিডিসি) কেন্দ্র থেকে পরিচয় জানা যায়নি এমন একদল মুখোশধারী আন্তর্জাতিক ভাবে প্রশংসিত রাজান জায়তুনেহ সহ চারজনকে অপহরণ করেছে।

নাজেম আল হামিদ, সামির আলখালিলি এবং ওয়ায়েল হামিদ মিলে জায়তুনেহ-এর দলকে ৯ ডিসেম্বর অপহরণ করা হয়, তারা কোথায় আছে এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন সংবাদ নেই, যা আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

তাদের অপহরণের ঘটনার পর, স্থানীয় কমিটি এই কাজের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, তারা সাথে সেখানে যুক্ত করা হয় যে ভিডিসি অফিস তছনছ করাও একটা নিন্দনীয় কাজ আর তারা উল্লেখ করে এই কাজটিতে আসাদ সরকারের হাত রয়েছে [আরবি ভাষায়]:

(photo source: Douma Local Committee Facebook page)

(ছবির উৎস: ডোউমার স্থানীয় কমিটির ফেসবুক পাতা)

বিবৃতিটি হচ্ছে [আরবী ভাষায়]:

দোউমা আজ [ বুধবার, ডিসেম্ব্র১০,২০১৩]-এ সিরিয়ার ভায়োলেন্স ডকুমেন্টেশন সেন্টারে (ভিডিসি) চালানো সহিংস সংবাদ এবং রাজান জায়তুনেহ ও তার দলের গ্রেফতারের সংবাদে জেগে ওঠে, যারা এই বিপ্লবের সমর্থনে তাদের প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে এবং যারা এর আগেও এই নিপীড়নকারী সরকারের হাতে যারা এর আগেও বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। এই অবরোধের সময়ও তারা আমাদের মাঝে বাস করেছে, এই বিশ্বাসে যে সত্যিকারের কাজ ইন্টারেনেটের পাতায় নয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে করা দরকার। আমরা যারা স্থানীয় সিটি কাউন্সিলে আছি তারা কাপুরুষোচিত কাজের নিন্দা জানাই, যা এই শাসকের মত একই ধরনের কাজ এবং সকল সামরিক দল ও বিপ্লবী বাহিনীকে এই ঘটনা অনুসরণ কারা আহ্বান জানাই, যা মুক্ত দৌমার জন্য এক কলঙ্কের দাগ।

অপহৃতদের পক্ষ থেকে জায়তুনেহ দ্বারা তৈরী সিরিয়ার স্থানীয় সমন্বয় পরিষদ (এলএলসি) অপহৃত এই চারজনের সকলের মুক্তি দাবী করেছে এবং সকল মানবাধিকার কর্মীদের এলএলসির এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা একই সাথে যুক্ত করেছে যে অপহৃত একটিভিস্টরা সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করা ম্যান্ডেলার দ্বারা প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত, সাথে যোগ করেছে::

যখন সারা বিশ্ব নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শোকার্ত, তখন আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে বিশ্বের অন্য প্রান্তেও ম্যান্ডেলারা বাস করছে। এই সমস্ত একটিভিস্টরা ম্যান্ডেলা এবং তার কাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং এমনকি যখন শাসক সম্ভাব্য সকল উপায়ে সিরিয়ায় মানবাধিকার ভুলণ্ঠিত করে যাচ্ছে তখনও তারা অহিংস আন্দোলন এবং গণ প্রতিরোধের ধারণা তুলে ধরছে । তাদের মুক্তির আহ্বানের ব্যর্থতা হবে সেই সকল মানুষের পতনের সমান যারা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার রক্ষায় লড়াই করে।

ইস্টার্ণ ঘোউটা সিভিক এজেন্সির জারিকৃত এক ডিক্রি অনুসারে দামেস্ক অঞ্চলে কাজ করার সময় অপহরণের ঠিক আগে শাসক এবং চরমপন্থী বিদ্রোহী উভয়ের কাছ থেকে জায়তুনেহ হুমকি লাভ করে।

আলখালিলির স্বামী লেখক ইয়াসিন আল-হাজ সালেহ তার এক ফেসবুক পোস্টে বলছে তাদের অপহরণ সিরিয়া এবং তার বিপ্লবের প্রতি অপমান। তিনি একই সাথে তাদের কাছে আহবান জানিয়েছেন যে দ্রুত এই কাজটি করতে কে সাহায্য করতে পারে।

سميرة الخليل (زوجتي) ورزان زيتونة ووائل حمادة وناظم حمادي معتقلين من البارحة بدوما.
الرجاء ممن يستطيع المساعدة أن يتصرف بسرعة.
اعتقال سميرة ورزان ووائل وناظم إهانة للثورة ولسورية.

গতরাতে দোউমাতে সামিরা আল খালিলি (আমার স্ত্রী) সাথে রাজান জায়তুনেহ, ওয়ায়েল হামাদাহ এবং নাজেম আল হামিদি গ্রেফতার হয়েছে। যারা এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে দয়া করে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহন করুন। সামেরা, রাজান, ওয়ায়েল এবং নাজেম-এর গ্রেফতার বিপ্লব এবং সিরিয়ার জন্য এক অপমান।

টুইটার ব্যবহারকারীরাও জায়তুনেহ এবং তার সহকর্মীদের মুক্তির দাবীতে এক ভার্চুয়াল আন্দোলন সংঘঠিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা সিরীয় একটিভিস্ট রাফিফ জুয়েজাতি তাদের এই অপহরণকে মানবতার মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করেছে:

ক্যালেন্ডার চিহ্নিত করে রাখুন: মানবতার মৃত্যু। অন্যতম প্রখ্যাত অহিংস আন্দোলন ও মানবাধিকার রক্ষা কর্মীরা সিরিয়ায় অপহৃত হয়েছে।

ভদ্রমহিলা একই সাথে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন এই বিষয়ে সারা দিতে, কারণ নিরবতা ক্ষতিকর:

আমরা তাদের এই ভাবে চলে যেতে দেই, তাহলে সমগ্র বিশ্ব মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন ব্যর্থ হবে।

বাহারাইনী একটিভিস্ট মারিয়াম আল খাওয়াজা উল্লেখ করেছে যে এই ধরনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় অন্তত যে কাজটি করতে পারে তা হচ্ছে সম্মিলিতভাবে তারা এই বিষয়ে তাদের সচেতনতা তুলে ধরতে পারে:

রাজান জায়তুনেহ এক নিপীড়ক শাসকের সাথে লড়াইয়ের জন্য সিরিয়ায় থেকে গিয়েছিল। আমরা অন্তত তার এই অপহরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারি।

সিরীয় অহিংস আন্দোলনের এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর ইব্রাহিম আল আসলি এর সাতে যোগ করেছে যে জায়তুনেহ এক সত্যিকারের বিপ্লবী:

বিশ্বের স্বৈরশাসকেরা দেখতে যেমন হোক না কেন, সে আসাদ এবং বাকী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লবে অংশ নিয়েছে। কারণ সে এক সত্যিকারের বিপ্লবী।

বিবিসির সংবাদদাতা কিম ঘাট্টাস বলছেন যে জায়তুনেহ-এর অপহরণ সিরিয়ার অবশিষ্ট ধর্ম নিরপেক্ষ বিরোধীদের জন্য ভয়াবহ আঘাত:

সিরিয়ায় রাজান-এর মত একটিভিস্টদের অপহরণ এক ভয়াবহ সংবাদ। সিরিয়ায় অবশিষ্ট ধর্ম নিরপেক্ষ/শান্তিকামী বিরোধীদের জন এক ভয়াবহ আঘাত।

জায়তুনেহ-এর অর্জন দুঃসাহস এবং সাহসিকতার ক্ষেত্রে কোন অংশে কম নয়। সে ২০১১ সালে আনা পোলিটোভোস্কায়া, শাখারভ এবং ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ওমেন অফ কারেজ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।

(photo source: Metro, 2012)

(ছবির সূত্র: মেট্রো,২০১২)

তার সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২১ আগস্টে ঘোউটায় রাসায়নিক বোমা হামলার পর প্রথম সেখানে গিয়ে হাজির হওয়া, যেমনটা ফরেন পলিসি মিডিল ইস্ট-এর সম্পাদক ডেভিড কেনার উল্লেখ করেছে:

২১ আগস্টে সারিন গ্যাস হামলার সময় ঘটনার স্থান থেকে তার করা নথির কাজ যেন আমরা ভুলে না যাই- ঘটনাস্থলে যারা উপস্থিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে সে অন্যতম।

এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ক্রিষ্টিয়ান বেনডিক্ট উল্লেখ করেন যে ঘটনাক্রমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে :

সিরিয়ায় দুটি পক্ষ? খুবই সাধারণীকরণ করা হয়েছে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে সেখানে একটি পক্ষ রয়েছে যারা মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা করে, অপরপক্ষ যারা তা করে না

অপহৃত জয়াতুনেহ এবং তার সহকর্মীরা সিরীয় নাগরিকদের ২০১১ সাল থেকে দেশটির বেদনাদায়ক ঘটনায় নাগরিকদের জীবন হারানো এবং দুর্দশার ঘটনা নথিবদ্ধ করার কাজ করছিল। ভিডিসি ওই সমস্ত অপহরণের ঘটনার দারুণভাবে অনুসরণ করছিল আর সবসময় দ্রুত ওইসব অপহরণকারীদের মুক্তির দাবী জানতো। তাদের কাজ এবং অবদান কেবল প্রয়োজনীয় নয়, সাথে সাথে তা এক বিপ্লব এবং সিরিয়ার ভবিষ্যৎ। তাদেরকে অপহরণের এই ঘটনা আজকের সিরিয়ায় যে বিপর্যয় ঘটেছে তার বিরুদ্ধে যে আশাবাদ এবং ইতিবাচক ভাবনা তার ক্ষতি ঘটাবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .