বর্ণবৈষম্য, জাতিসংঘ এবং ঐতিহ্যবাহী সাধু নিকোলাস উৎসব পালন

Dibujo infantil que representa a San Nicolás y Zwarte Pete. Imagen de Vera de Kok en Wikimedia Commons con licencia CC by SA 3.0

একটি শিশুর তুলিতে উঠে এসেছে রূপকথার সাধু নিকোলাস এবং ব্ল্যাক পেট। ছবি তুলেছেন ভেরা দে কক। উইকিমিডিয়া কমন্স লাইসেন্স সিসি বাই এসএ ৩.০ এর আওতায় প্রকাশিত।

কবে আসবে ডিসেম্বরের ৬ তারিখ! অপেক্ষা যেন ফুরায় না বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর শিশুদের। কারণ সাধু নিকোলাসের ওইদিন পৃথিবীতে আসবেন। আর সান্তা ক্লসের মতো বাচ্চাকাচ্চাদের মাঝে বিলিয়ে দিবেন মজার মজার সব উপহার। তবে এ বছর বর্ণবাদের ছায়া পড়েছে সুন্দর এই আয়োজনের গায়ে।

একটি প্রাচীন গানে বলা হয়েছে, সাধু নিকোলাস নৌকায় করে স্পেনে আসেন। তারপর গাধার পিঠে চড়ে সারারাত ধরে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি ঘুরে বেড়ান। এ সময়ে সাহায্য করার জন্য তার সাথে থাকে জুয়রটার পিয়েট (ব্ল্যাক পেট) অথবা পেরে ফুয়েটটার্ড (ফাদার ল্যাশার, ফ্রান্সে)। উপকথার এই চরিত্র একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষই যিনি মুখে কালি মেখে কৃষ্ণ তরুণ হয়ে যান। উইগ আর ষোড়শ শতাব্দির পোশাক পরে থাকেন তিনি। উল্লেখ্য, জুয়রটার পিয়েট একজন “বাজে মানুষ” যিনি খারাপ বাচ্চাদের হাতে কয়লা তুলে দেন। যদিও আলিক্স গুইলার্ড তার মি ইন আমস্টারডাম ব্লগে লিখেছেন:

Aux Pays-Bas, alors que la sévérité envers les enfants n'est plus de mise, on n'a pas abandonné ce personnage. Mais il s'est transformé en joyeux drille sympatique qui amuse les enfants, beaucoup plus que ce vieil évèque un peu trop rigide.

যদিও নেদারল্যান্ডে বাচ্চারা তাকে নিয়ে অতটা চিন্তিত নয়। এমনকি তারা উপকথার এই চরিত্রকে বয়কটও করেনি। তিনি খুব ভালো মানুষে পরিণত হয়ে বাচ্চাদের আনন্দে মাতিয়ে রাখেন, যেমনটি অভিজ্ঞ বিশপরাও করতে পারেন না।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গ্রুপ এইভাবে জুয়রটার পিয়েট-এর প্রথা উদযাপনের প্রতিবাদ করে আসছে। তারা একে বর্ণবাদী বলে অভিহিত করছেন। মুখে কালি মেখে কৃষ্ণাঙ্গ সাজাটা জুয়রটার পিয়েটর আদি প্রথা নয়। কেউ কেউ বলেন, সে একজন মুর। সাধু নিকোলাসের সাথে স্পেন থেকে এসেছে। আবার যারা মুখে কালি মাখার ব্যাপারটা বিশ্বাস করেন, তাদের ধারণা, সে বাড়ির চিমনি দিয়ে ঘরে ঢোকে। কেউ কেউ আবার বলছেন এটা ঔপনিবেশিক আমলে দাসপ্রথার কথা মনে করিয়ে দেয়। আবার কারো ধারণা, এটা বোধহয় শয়তান নিজেই।

আফ্রিকার জাতিগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ। তারা এ বছর ডাচ সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তারা ডাচ সরকারকে বর্ণবৈষম্য প্রতিরোধ করার আহবান জানায়।

জ্যামাইকার অধিবাসী ভেরেন শেফার্ড হলেন সেই গ্রুপের একজন সদস্য। এক রেডিও সাক্ষাত্কারে তিনি সাধু নিকোলাসের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন:

Verene Shepherd, componente del grupo que inició la polémica. Foto del blog de Arjen Wilbers

বর্ণবাদকে আক্রমণ করেছেন ভেরেন শেফার্ড। আরজেন উইলবার্স-এর ব্লগ থেকে ছবি নেয়া হয়েছে।

si j'habitais aux Pays-Bas, je m'opposerais à la Saint-Nicolas (…) Cela ne devrait pas exister au 21e siècle. C'est offensant et scandaleux. Après tout, quel est le problème avec le père Noël ? Pourquoi devriez-vous avoir deux ‘Santa Claus’ ?”

আমি নেদারল্যান্ডে বাস করলে সাধু নিকোলাসের উত্সব পালন করতে অস্বীকৃতি জানাতাম। একুশ শতকে এ ধরনের একটি প্রথা থাকবে, তারা ভাবা যায় না। এটি যথেষ্ট আপত্তিজনক এবং স্ক্যান্ডালে ভরা। ফাদার ক্রিস্টমাস থাকলে সমস্যা কী? তাদের কেন দুটো সান্তা ক্লস দরকার?

তবে বেলজিয়াম এবং হল্যান্ডে এই মন্তব্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যারা এটা বলছেন, তারা সাধু নিকোলাস উত্সব সম্পর্কে কিচ্ছু জানেন না। সান্তা ক্লসকে অগ্রদূত হিসেবে স্থান দিয়েও তারা কয়েকটি দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি প্রথাকে অসম্মান করেছেন। শেফার্ডকে উল্লেখ করে এরকম মন্তব্যও করা হয়েছে:

Bravo Madame Verene Shepherd !!! . . Grace à une idiote comme vous, Marine Le Pen vient encore de prende 10 pts dans les sondages !!!

সাবাশ মিস ভেরেন শেফার্ড! আপনার মুর্খামির জন্য ধন্যবাদ। মেরিনে লে পেনের মতো নির্বাচনে আরো ১০টি পয়েন্ট পাবেন আপনি!

[মেরিনে লে পেন হলেন উগ্রপন্থী ফ্রন্ট ন্যাশনাল-এর রাজনৈতিক শাখার একজন প্রার্থী। ]

ঐতিহ্যবাহী জুয়রটার পিয়েট প্রথা বাঁচাতে ২০১৩ সালের অক্টোবরের ২২ তারিখে একটি ফেসবুক পেজ চালু করা হয়েছে। পেজের নাম হচ্ছে পেইটিটিয়ে। ইতোমধ্যে পেজটি ২,২০০,০০০ বার লাইক পেয়েছে। এই পেজে পিটার উডো নামের নিচের মন্তব্যটি করেছেন:

Berichtje voor de VN: Is er niet ergens een oorlog, hongersnood of genocide gaande waar jullie je beter druk om kunnen maken??

জাতিসংঘ শুনে রাখুন: এখানে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না, দুর্ভিক্ষও নেই, গণহত্যাও হচ্ছে না। তাহলে এখানে আপনার আর কি দরকার?

San Nicolás, rodeado de sus ayudantes Zwarte Piet, saluda desde el barco que lo trae de España. Foto de 12Danny12 en Wikimedia Commons con licencia copyleft.

সাধু নিকোলাস স্পেন থেকে নৌকায় করে আসছেন। সহকারী হিসেবে সাথে রয়েছে জুয়রটার পিয়েট। ছবি তুলেছেন ১২ড্যানি১২। উইকিমিডিয়া কমন্স লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশিত।

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে করে সবাই দু'ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কেউ কেউ উগ্র বামপন্থীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। যদিও অন্যরা একে তেমন একটা গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন না। তারা কাউকে আঘাত না করে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব পালন করে যেতে চাচ্ছেন। এ বছর জুয়রটার পিয়েট-এর সাজে সাজবেন অভিনেতা এরিক ভ্যান মুইসউইংকেল। তিনি এনআরসি.এনএল-এ লিখেছেন:

Zwarte Piet is een vrolijk relikwie uit racistische tijden, dat staat wel vast. (…)Ik vond het altijd wel mooi dat zo’n apert politiek incorrecte traditie, witte mensen die zich zwart schminken (…), in Nederland juist wel kon. (…) hij hoort bij Sint als Sancho Panza bij Don Quichot.

বর্ণবাদের এই সময়ে জুয়রটার পিয়েট নিশ্চিন্তভাবেই ভালো থাকবেন। (…) আমি সবসময় ভেবেছি, এটা একটা সুন্দর আনন্দদায়ক উৎসব। যদিও মুখে কালি মেখে একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষের কৃষ্ণাঙ্গ সাজা মোটেও রাজনৈতিকভাবে সঠিক না (…) নেদারল্যান্ডে এটা সম্ভব হয়েছে। (…) ডন কুইক্সসোটের সাথে যেমন সাঞ্জো পাঞ্জা আসে তেমনি সাধু নিকোলাসের সাথে জুয়রটার পিয়েট আসে।

ফেসবুকের পিয়েটিটিয়ে পেজে বারবারা ওয়েস্টানবার্গ-বুইজস্টার্স এই মন্তব্যটি করেছেন:

Zwarte Piet is een schoorsteenveger en Sinterklaas is een Turk en ze wonen in Spanje en dat vieren wij in Nederland – het is gewoon het beste integratie feestje aller tijden!

জুয়রটার পিয়েট চিমনি পরিষ্কারকারী আর সাধু নিকোলাস একজন টার্কি। তারা দুজনেই স্পেনে বসবাস করেন। আর নেদারল্যান্ডে আমরা যা উদযাপন করি তা হলো: যতো ধরনের মিলনমেলা রয়েছে, তার মধ্যে এটি সেরা উদযাপন!

এদিকে বিতর্ক থামাতে জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের চিঠি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইউনেস্কোর বেলজিয়াম প্রতিনিধি মার্ক জ্যাকব বলেছেন:

ভেরেন শেফার্ড জাতিসংঘের একজন কনস্যালট্যান্ট ছাড়া আর কিছু নন। নিজের ব্যক্তিগত মনোবাঞ্জা পূরণে তিনি জাতিসংঘের নাম ব্যবহার করেছেন (…)। যে চারজন ব্যক্তি ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, তারা ইউনেস্কোকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা শুধুমাত্র হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস-এর লেটারহেড ব্যবহার করেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .