ছবিতে টাইফুনে বিধ্বস্ত ফিলিপাইন

Tacloban City after the storm surge. Photo by ABS-CBN, Facebook

উত্তাল ঝড়ের পর ট্যাক্লোবান শহর। ফেসবুকের এবিএস-সিবিএন থেকে ছবি নেয়া হয়েছে।

কয়েকদিন আগে ফিলিপাইনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তীব্র গতির ঝড় (সুপার টাইফুন) হাইয়ান। এটি ভিসায়াস অঞ্চলের বেশিরভাগ দ্বীপেই রেখে গেছে ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ। সরকার পরিস্থিতিকে জাতীয় দূর্যোগ বলে ঘোষণা দিয়েছে। সুনামির মতো প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন এই ঝড়ে ল্যাইতে এবং সামার প্রদেশের মানুষদের বাস্তুচ্যুত করেছে। তাছাড়া মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

রাস্তাগুলো দীর্ঘদিনের জন্য চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। সাংবাদিক এবং উদ্ধারকারীদের মাধ্যমে প্রান্তিক অঞ্চলের অবস্থা এখন জানা যাচ্ছে। মানুষের দু:খ যন্ত্রণার আরো কিছু ছবি তুলে ধরা হলো এখানে।

টাইফুন প্রথম আঘাত হেনেছিল সামারের পূর্বাঞ্চলের শহর গুইয়ানে। সাংবাদিক ডেভিড য়ু সান্তোস সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। নিচের ছবিগুলো তার ফেসবুক থেকে নেয়া:

A family riding a motor in Guiuan, East Samar. Photo by David Yu Santos, Facebook

সামারের পূর্বাঞ্চলের গুইয়ানের একটি পরিবার মোটরবাইক চালাচ্ছে। ছবি তুলেছেন ডেভিড য়ু সান্তোস। ফেসবুক থেকে নেয়া।

A woman washing clothes amid the debris after the storm. Photo by David Yu Santos, Facebook

ঝড়ের পর ধ্বংসাবশেষের পাশে একজন মহিলা কাপড় পরিষ্কার করছেন।ছবি তুলেছেন ডেভিড য়ু সান্তোস। ফেসবুক থেকে নেয়া।

Destroyed houses in Guiuan, East Samar. Photo by David Yu Santos, Facebook

সামারের পূর্বাঞ্চলের শহর গুইয়ানের একটি বাড়ির ধ্বংসস্তুপ। ছবি তুলেছেন ডেভিড য়ু সান্তোস। ফেসবুক থেকে নেয়া।

A family in typhoon-ravaged village. Photo by David Yu Santos, Facebook

ঝড়ের পর গুইয়ানের রাস্তায় এক পরিবার। ছবি তুলেছেন ডেভিড য়ু সান্তোস। ফেসবুক থেকে নেয়া।

Residents search for valuable materials in Guiuan, East Samar. Photo by David Yu Santos, Facebook

সামারের পূর্বাঞ্চলের শহর গুইয়ানের অধিবাসীরা ধ্বংসস্তুপের মাঝে দামি জিনিসপত্র খুঁজছেন। ছবি তুলেছেন ডেভিড য়ু সান্তোস। ফেসবুক থেকে নেয়া।

An aerial view of Guiuan, East Samar. Photo by AFP, Facebook

ঝড়ের পর পাখির চোখে দেখা গুইয়ান! ছবি তুলেছেন ডেভিড য়ু সান্তোস। ফেসবুক থেকে নেয়া।

রোক্সাস শহরে হাইয়ানের প্রভাব কেমন ছিল তারই কিছু ছবি তুলে ধরেছেন পেনাই দ্বীপের বাসিন্দা কাশ্মির ডিয়েস্ট্রো:

A tricycle passes by a ruined gas station in Roxas City. Photo by Kashmer Diestro, Facebook

রোক্সাস শহরের গ্যাস স্টেশনের ধ্বংসস্তুপের পাশ দিয়ে একটি অটোরিক্সা যাচ্ছে। ছবি তুলেছেন কাশ্মির ডিয়েস্ট্রো। ফেসবুক থেকে নেয়া হয়েছে।

Fallen electric posts in Roxas Boulevard. Photo by Kashmer Diestro, Facebook

বিদ্যুতের খুটি রাস্তার ওপর ভেঙ্গে পড়েছে। ছবি তুলেছেন কাশ্মির ডিয়েস্ট্রো। ফেসবুক থেকে নেয়া হয়েছে।

টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভুতি জানিয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা বার্তা পাঠাচ্ছেন। ছবিটি টুইটার থেকে নেয়া:

হৃদয়বিদারক ব্যাপার। টাইফুন আক্রান্তদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যাগের উপরে আশা জাগানিয়া বার্তা লিখছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

ঝড়ের আঘাতে মারা গেছে অসংখ্য জীবজন্তুও:

ঝড়ের হাত থেকে নিস্তার পায়নি নিরীহ জীবজন্তুরা!

ঝড়ের সময়ে বারে বারে ভাগ্য-পরীক্ষা দিতে হয়েছে ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারমিন কারানগানকে। তিনি লিখেছেন সে কথাই:

…আমরা দেখলাম পানি আস্তে আস্তে আমাদের পুরো অফিসেই ঢুকে পড়লো। আমরা আবার এখান থেকে সরে পড়লাম। তারপর হঠাৎ লক্ষ করলাম, পানি বাড়ছে তো বাড়ছে। এরপর আমরা বিল্ডিংয়ের সিলিংয়ের ওপরে উঠে যেতে বাধ্য হই। আমরা সিলিংয়ের ওপরে উঠতে একটি গর্ত করি। গর্ত দিয়ে আমিই সর্বশেষ উঠি।

হঠাৎ-ই ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে। আমরা সহকর্মীরা পানিতে পড়ে যায়। তখন তীব্র বাতাস বইছিল। এর উপরে ভবনের আর কোনো ছাদ ছিল না। আমি কোনোমতে ভবনের একটি কাঠের টুকরো ধরতে পেরেছিলাম- কিন্তু সেটা হাত থেকে ছুটে যায়। আমি পানির তীব্র স্রোতের মধ্যে পড়ে যাই।

পানিতে ভেসে ভেসে সাগরে এসে পড়ি। সাগর আরেক নরককুণ্ড হয়ে ছিল সে সময়ে। চারদিক থেকে বিশাল সব ঢেউ এসে আমাদের ওপর আছড়ে পড়ছিল। আমরা যেন সেখানে খড়কুটোর মতো ভাসছিলাম। আমরা লবণাক্ত পানি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি!

টেলিথনের অনেক স্বেচ্ছাসেবী আক্রান্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন। ফিলিপ উইলার্ড মেডালা ফেসবুকে তার স্বেচ্ছাসেবা'র অভিজ্ঞতা তুলেছেন:

আমি শ’ খানেক মানুষের সাথে কথা বলেছি। বেশিরভাগ সময়েই অবর্ণনীয় দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে আমার চোখে পানি জমেছে, গলা ধরে এসেছে। সবাই আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। বাস্তবতা হলো, যাদের সাহায্য দরকার, তারা এখান থেকে অনেক দূরে রয়েছেন।

পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ফিলিপাইন সরকারের প্রধান আলোচক ইয়েব সানো ক্লাইমেট প্যাক স্বাক্ষর করার সময়ে আবেগাক্রান্ত ভাষণ দেন। সেখানে তিনি টাইফুনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে আনেন:

আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্ধ করতে চাই। মানুষ দারিদ্র্যের ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে আসার জন্য যখন সংগ্রাম করছে, উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে, সে সময়ে দৈত্যের মতো এই ঝড় এসে আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটা মোটেও প্রাকৃতিক ব্যাপার হতে পারে না। বিজ্ঞান যখন আমাদের বলছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঝড় হচ্ছে, তখন এটাকে স্বাভাবিক ভাবা যায় না। মানুষরাই যখন জলবায়ুর পরিবর্তন ডেকে আনছে, তখন এটাকে আর প্রাকৃতিক বলা যায় না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .