সৌদি কারাবন্দীদের সাক্ষাৎ বাতিল, পরিবারের সদস্যরা গ্রেপ্তার

On October 16th sit-in via yasser939393

গত ১৬ অক্টোবরের অবস্থান সমাবেশ। ছবিঃ ইয়াসির ৯৩৯৩৯৩ 

ঈদুল আযহা’র [১৫অক্টোবর] ছুটির সময় কিছু কিছু সৌদি কারাগারে কারা বন্দীদের তাঁদের আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বছর ছুটির দিনের বেশীর ভাগ সাক্ষাতের সময় বাতিল করে দেয়া হয়। এতে করে বন্দীদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিচারহীনভাবে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়টি এই গোড়া রাজতন্ত্রে ইতিমধ্যে অন্যতম একটি উত্তপ্ত মানবাধিকার ইস্যুতে পরিনত হয়েছে।

স্বাধীন মানবাধিকার সূত্র মতে, বিচারহীন ভাবে কারাবন্দী অবস্থায় থাকা লোকের [আরবি] সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশী। তাঁদের বেশিরভাগই ৯/১১ পরবর্তী সময়ে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” কালীন সময়ে গন গ্রেপ্তারের শিকার। এসব বন্দীদের কোন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয় এবং কোন আইনজীবী ও বিচারের দ্বারস্থ হওয়ার অধিকারও তাঁদের নেই।

এরকম একটি পরিবারের সদস্য ইয়াসের আল-আয়াফ। তিনি সাক্ষাতের কথা টুইট করেছেনঃ 

আজ ঈদ উপলক্ষে আমার বাবার সাথে দেখা হতে পারে। আল-জুর [কারারক্ষী] বলেছেন, আমার বাবা আব্দুল্লাহ অন্য কোথাও গেছেন। আমরা তাঁর সাথে দেখা করতে না পেরেই ফিরে এলাম..

ইয়াসিরের বাবাকে সাত বছর আগে কোন বিচার ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়। গত আগস্ট মাসে একজন বিচারক তাঁর বাবার নামে একটি মুক্তির আদেশ জারি করেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই আদেশটি বাস্তবায়ন করেনিঃ

আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। আমার বাবার মুক্তির আদেশটি কয়েক মিনিট আগে ইস্যু করা হয়েছে। 

আব্দুল্লাহ আল- আয়াফের স্ত্রী মাহা আল-ধুহায়ান টুইট করেছেনঃ

আমার স্বামীর কোন কল ছাড়াই আমাদের ঈদ কেটেছে। আজ তাঁর সাথে আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছি। অবশেষে আমাদের জানানো হয়েছে, আমরা সাক্ষাৎ করতে পারবো না!

বন্দীদের সাথে দেখা করার অনুমতি না দেওয়ায় পরিবারের সদস্যরা ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর তারিখে একটি সংক্ষিপ্ত অবস্থান কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ বাহিনী তাঁদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং তাঁরা কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নিঃ

প্রায় ছয় ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে, অথচ কেউ কোন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে না! তাহলে আপনারা আমাদের কেন বলেছিলেন যে, আমরা দেখা করতে পারবো ? 

অবস্থান কর্মসূচিটির একটি ভিডিও চিত্র আপলোড করা হয়েছে। সেখানে একটি ছোট বাচ্চা সমস্বরে [আরবি] বলছেঃ “জনগণ কারাবন্দীদের মুক্ত করতে চায়”!  https://www.youtube.com/watch?v=c5gcx_cDOdI

স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ তাঁরা স্থান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ঃ 

আল-তারফিয়া [জেল] – এ অবস্থানকারী অংশগ্রহণকারীরা চলে গেছে। তাঁদের কেউ কেউ আত্নীয়স্বজনদের সাথে দেখা করতে প্রায় আট ঘন্টার মতো সেখানে অবস্থান করেছেন। কিন্তু সেখানে অবস্থান করে তাঁরা শুধু গোপন পুলিশের হৃদয়হীনতারই প্রমান পেয়েছেন।   

এর পরের দিন অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর তারিখে তাঁরা আরো একবার সাক্ষাতের দাবি নিয়ে ফিরে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদেরকে গভর্নরের দপ্তরে যেতে বলা হয়েছে। মাহা আল-ধুহায়ান টুইট করেছেনঃ 

আজ দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা একটি অবস্থান কর্মসূচীর একটি সারিতে বসেছি। আমরা একটি সাক্ষাৎ বা একটি ফোন কল পেতে চাই। এখন আমরা গভর্নরের দপ্তরের দিকে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

রিমা আল-জুরিশের স্বামীও বিচারহীনভাবে কারাবন্দী আছে। তিনি টুইট করেছেনঃ

ভিতরে ঢোকার সাথে সাথেঃ সব তরুণদের গ্রেপ্তার করা হল এবং সব মহিলারাও হারিয়ে গেলো। আমরা মহিলাদের ব্যাপারে কিছুই জানি না। তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদেরকে ফোন করেছেন, কিন্তু কোন উত্তর পায়নি। 

বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৫ টি শিশুকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছেঃ

পনেরটি শিশুকে (শিশুরা আল-হারবি, আল-আয়াফ ও আল-ধুহায়ানের পরিবারের সদস্য) এখনও বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁরা যখন তাঁদের বাবাদের সাথে দেখা করতে আল-তারফিয়া জেলে যাচ্ছিল, তখন তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কয়েকজন কারাবন্দীকে একেবারে শুরু থেকেই ঈদ সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয় না। যেমন, মানবাধিকার সক্রিয় কর্মী হুদ আল-আকেল। তাঁকে গত মার্চ মাসে আবারো গ্রেপ্তার করা হয়েছেঃ    

ক্রমাগতভাবে আমরা ফোন করা ও দাবি জানানো সত্ত্বেও আল-হায়ের জেলীর প্রশাসন হুদের সাথে আমাদের দেখা করতে দেয়নি। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .