সৌদি আরবের জাতীয় দিবস: ” কেবল এক উৎসব যথেষ্ট নয়”

২৩ সেপ্টেম্বর তারিখটি হচ্ছে সৌদি আরবের জাতীয় দিবস। সাধারণত এই দিনে রাষ্ট্র যতটা না রাজতন্ত্র দিবসটি উদযাপন করে, নাগরিকরা করে তারচেয়ে বেশী। তবে এর আগের দুটি জাতীয় দিবস ছিল খানিকটা ভিন্ন। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্লগের মধ্যে দিয়ে সৌদি নাগরিকরদের সুযোগ ছিল মুক্ত ভাবে নিজেদের চিন্তা প্রকাশ করার-এক জাতির নিজের আশাবাদ ব্লগ করার, যে জাতি তার জনগণ ও তাদের আকাঙ্ক্ষাকে শ্রদ্ধা এবং গ্রহণ করে।

লেখক ও ডাক্তার, বাদার আল ইব্রাহিম লিখেছেন:

সুখস্মৃতির মাঝে থাকার মত জাতীয় চেতনার অভাব, যৌথ পরিচয় এবং প্রতিষ্ঠানের নাগরিকদের দায়িত্বগ্রহণের মাধ্যমে জনগণকে চাঙ্গা করার জন্য কেবল আনন্দোৎসব উদযাপন যথেষ্ট নয়।

জর্ডানের মানবাধিকার কর্মী, ফাদি আল কাদি টুইট করেছে:

সৌদি আরবের জাতীয় দিবসে এসিপিআরএ-এর আবদুল্লাহ এবং তার অনুসারীরা কারাগারে বন্দী। তাদের বিরুদ্ধে আনীত একটি অভিযোগ হচ্ছে “উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করা” যখন শাসক নিজে অভিযুক্ত “মানবতাকে বাঁধাগ্রস্ত” করার কারণে।

লেখক আব্দুল আল মালেকি টুইট করেছে:

আমাদের জাতীয় দিবসে, আমরা এসিপিআরএ নামক সংগঠন, আল হামেদ, আল খাতানি, আল বাজাদি, তৌফক আল আমের, আল মানসিফ, এবং জেদ্দার সংস্কারবাদী ও তাদের সকলকে স্মরণ করছি। আপনারা যারা দেশটির সংস্কার এবং উন্নতির জন্য সংগ্রাম করছে, সেই আপনাদের জীবনে শান্তি আসুক।

এদিকে এমান আল -কাফাস উল্লেখ করছে:

যদি কেউ ভাবে যে স্বদেশকে ভালোবাসার জন্য স্বদেশের সরকারকে ভালোবাস জরুরী, তাহলে সে আসলে স্বদেশকে ভালোবাসে না।

এবং রেহাব আল হামাদান এর সাথে যোগ করেছে:

নাগরিকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন। খালি কথা দিয়ে কেউ এখন আর তাদের বোকা বানাতে পারবে না।

বেশীর ভাগ ব্লগার জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের চিন্তা প্রকাশ করেছে।

সুলতান-আল আমের একজন লেখক এবং ব্লগার,একজন আরব জাতীয়তাবাদীর দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি লিখেছেন:

إن تاريخنا “القومي” كعرب ليس محصورا بحدود الدولة السعودية وتاريخها.
إن تاريخنا القومي هو تاريخ الشعوب الممتدة من الخليج إلى المحيط وليس تاريخ الأنظمة فقط.
وإن معنى “الوطن” لا يمكن الاحتفال به قبل تجسيده كحقوق سياسية وحريات.
وإن الأنظمة الحاكمة تستطيع بسهولة أن تبني شرعية متينة إذا تحولت إلى أنظمة مدافعة ومنحازة لقضايا أمتها ومستجيبة لآمالها وتطلعاتها.

আরব হিসেবে আমাদের জাতীয় ইতিহাস কেবল সৌদি আরবের সীমান্ত আর ইতিহাসে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে নাগরিকরা উপসাগর ও [আটলান্টিক] মহাসাগরের মাঝে বাস করে, আর এটা কেবল শাসকদের ইতিহাস নয়। রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় পড়া একটি দেশ ততক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় দিবস উদযাপন করতে পারে না, যতক্ষণ না দেশটি রাজনৈতিক অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রদান করে না। ক্ষমতাসীন শাসকেরা খুব সহজেই জোরালো ভাবে নিজেদের বৈধতাকে নির্মাণ করতে পারে, যদি তারা তাদের নাগরিকদের রক্ষা করতে শুরু করে এবং তাদের দাবীর পাশে এসে দাঁড়ায় এবং আশা ও উদ্দীপনায় সাড়া প্রদান করে।

এদিকে আরেকজন জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক এবং লেখক আবদুল্লাহ আল দুহালিয়ান দুই ধরনের নাগরিকদের সমালোচনা করে, ব্লগ লিখেন, তাদের মধ্যে একদল হচ্ছে বুদ্ধিজীবী সুশীল নাগরিক, যারা সকল রাজনৈতিক এবং নাগরিক দাবী পূরণ না করা পর্যন্ত এ রকম দিবস উদযাপন করা প্রত্যাখান করে, অন্যরা হচ্ছে সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ যারা যারা প্রচার মাধ্যমের প্রচারণায় সাড়া প্রদান করে এবং স্বয়ং রাষ্ট্রের বদলে কিছু নির্দিষ্ট নাগরিকের বিষয় উদযাপন করে।

আটককৃতদের পরিবারের জন্য এই দিবসটিকে তাদের দাবী আদায়ের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরীর সুযোগ হিসেবে দেখছে। ছদ্মনামে পরিচালিত এক অ্যাডভোকেসি দল @এ৩তেকেলা [গ্রেফতার] এবং @আলমোনাসেরন [ সমর্থকেরা] ক্ষুদ্র আকারের বিক্ষোভের প্রদর্শনের আহ্বান জানায়, যা মূলত বুরাইদাহতে অনুষ্ঠিত হবে।

From the women's protest in Buraydah

বুরাইদার নারীদের বিক্ষোভ


অনাবাসিক এলাকায় টায়ার পোড়ানো হয়েছে, যেখানে তাদের সাথে আটককৃতদের মুক্তি দাবী করে তৈরী করা পোস্টার। আর বুরাইদাতে একটা একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল , যেখানে গ্রেপ্তারকৃতদের আত্মীয়রা মিলিত হয় এবং আটককৃতদের সম্ভাব্য সমর্থনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। কারাবন্দী এসিপিআরএ-এর সদস্য আব্দুল করিম আল খুদের-এর পরিবার হচ্ছে সেই সমস্ত অল্প কয়েকটি পরিবারের মধ্যে অন্যতম, যাদের গৃহ আটককৃত প্রিয় মানুষটির ছবি টাঙ্গানোর কারণে পুলিশের গাড়ি দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে
কাতিফের এক একটিভিস্ট মাহদি আল জাহির, টুইট করেছে:

আমি জাতীয় দিবস উদযাপন করতে চাই, কিন্তু আমার ভাই, আমার চাচাতো ভাই, এমনকি আমার প্রতিবেশী এখন কারাগারে।

এবং সৌদি নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার সংগঠন (এসিপিআরএ) চেতনার বন্দী হিসেবে আটককৃত সকল নাগরিকের মুক্তি এবং সরকার ও পিপলস এ্যাজ ইকুয়াল-এর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাঝে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে [আরবী ভাষায়]

وإن هذا الشعب كباقي الشعوب فيه من هو مستعد للنضال السلمي للوصول للحقوق المشروعة والسجون لن تكفي فكلما سجن فوج جاء فوج آخر … فأما الحكومات وأحيانا الدول تتغير وتبقى الشعوب.

এই জাতির মধ্যে এমন কয়েকজন ব্যক্তি আছে যারা বৈধ দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। কারাগার যথেষ্ট নয়। সবসময় যখন একদল মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়, তখন আরেক দল মানুষ বের হয়ে আসে…সরকার, এমনকি কখনো কখনো রাষ্ট্র বদলে যায়, কিন্তু জনতা কখনো বদলায় না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .