থাইল্যান্ডের দক্ষিণের বিদ্রোহীদের ইউটিউব ভিডিও নিয়ে বিতর্ক

থাইল্যান্ডের দক্ষিণে গভীর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গত নয় বছর ধরে বিদ্রোহ চলছে। বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী দল এর পেছনে রয়েছে। এখানে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটে, কোনো সন্দেহভাজন দল-ই তা স্বীকার করে না, দায়-দায়িত্ব নেয় না। এমনকি তাদের দাবিও জানায় না।

সহিংসতা এখনও চলছে।

থাই সরকারের সাথে দক্ষিণের প্রধান মুসলিম বিদ্রোহী দল বারিসান রেভলুসি ন্যাশনাল পাটানি (বিআরএন) এর শান্তি আলোচনা শুরুর কয়েকদিন আগে ২৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে উস্তাজ হাসান তাইব এবং আব্দুলকারিম খালিব ইউটিউবে একটি দুর্লভ ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটিতে তারা তাদের দলের পরিচিতি তুলে ধরে। বিআরএন পাতানি অঞ্চলের জনগণের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে।

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল সাড়ে তিনটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত। এই অঞ্চলে দুই মিলিয়ন লোকের বসবাস, যারা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর সহিংসতার মধ্যে রয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে এখানে ৫ হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আফগানিস্তানের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যার চেয়েও ২ হাজার জন বেশি। শুধু ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসেই ২৯৮টি সহিংস ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন ৭৫ জন।

পাতানিতে থাই রেন্জাররা টহল দিচ্ছেন।

পাতানিতে থাই রেন্জাররা টহল দিচ্ছেন। ছবি জ্যাক কুর্জের। সর্বসত্ব ডেমোটিক্স (২৯/৯/২০০৯)

থাইল্যান্ডের সহিংসতাসঙ্কুল তিনটি প্রদেশ- পাতানি, নারাথিওয়াত, ইয়েল এবং সংকলার কিছু অংশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এরা বাহাসা মালায়ু পাতানি ভাষায় কথা বলে, যা খুব কম থাইবাসীই বুঝতে পারে। তাদের জাতীয়তা, সংস্কৃতি, ধর্ম, প্রথা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী থাইদের চেয়ে আলাদা।

বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়ন করা দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি বিদ্রোহীদল সরকারী কর্তৃপক্ষ এবং সেনাদের সাথে কথা বলার উপায় খুঁজছে। যদিও ব্যাংকক থেকে আরো বেশি স্বায়ত্তশাসন ছাড়া তাদের বিদ্রোহের কারণ এখনো অস্পষ্ট রয়েছে। তাদের বিদ্রোহের এই অতি গোপনীয়তা বিষয়টিকে অদ্ভুতুড়ে করেছে।

২৪ মে তারিখে তারা দ্বিতীয় ভিডিও প্রকাশ করে। এতে তারা ৫টি দাবি জানায়। বাহাসা মালায়ু পাতানি ভাষায় নূর পরিষ্কার করে জানান যে, বিআরএন “স্বাধীনতাকামী”, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করছে না। ভিডিওতে তারা থাই সরকারের কাছে এও দাবি জানায়, শান্তি আলোচনায় পর্যবেক্ষক হিসেবে তৃতীয় পক্ষ যেমন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি)কে রাখতে হবে। এবং এটা অবশ্যই মালয়েশিয়ান সরকারের দুতিয়ালিতে হতে হবে।

এর আগে, পাতানি ইউনাইটেড লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিইউএলও) এর নির্বাসিত নেতারা যারা ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে আছেন তারা সরকারের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছিলেন। পিইউএলও ১৯৬৮ সালে গঠিত হয়। তবে তারা সরকারের সাথে সমাঝোতা করতে সক্ষম কি না তা তাদের প্রমাণ করতে হবে।

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী দল রয়েছে এবং তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদিকে বিআরএন দাবি করেছে, পিইউএলও বা অন্য কোনো গোষ্ঠী নয়, তারাই একমাত্র সংগঠন যারা থাই সরকারের সাথে সমাঝোতা করতে পারে। বিআরএন জানিয়েছে, তারা থাই সরকারকে বিশ্বাস করে না। এজন্য তারা মালয়েশিয়াকে শান্তি আলোচনা মধ্যস্থতা করার দাবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে মালয়েশিয়া সহিংসতাপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তাব্যূহ জোরদার করেছে। কেননা, অন্যান্য বিদ্রোহী দল শান্তি আলোচনা প্রত্যাখান করে সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বিদ্রোহী দলগুলোর চলাফেরা সীমাবদ্ধ করার জন্য নজরদারি টুলস হিসেবেই থাই সেনাবাহিনী “সীমান্ত বেড়া” নির্মাণের জন্য আলোচনা শুরু করেছে। দক্ষিণের বিদ্রোহ দমন করতে এ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি এবং ৬০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা ব্যর্থ হয়েছে।

ভিডিও ক্লিপগুলো থাইল্যান্ডের ব্লগজগৎে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ওয়ারাকর্ন বুনিয়াকর্ন বিদ্রোহীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ধর্ম সবসময়ই শান্তির বার্তা দেয়:

কোনো ধর্মই মানুষ হত্যার শিক্ষা দেয় না। এবং এই ‘ঘৃণ্য’ কাজটি যারা করে যাচ্ছে… তারা ধর্মের জন্য এটা করছেন সেই দাবি করতে পারেন না…ধর্ম মানুষের সাথে এমন ভুল করতে পারে না।

এমকে৪৭ বিদ্রোহীদের সাথে সমাঝোতাকারীদের প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:

আপনারা জানেন, এরা হলো সেই নেতা যারা হাজার হাজার থাই নাগরিককে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে? তাদের সাথে সমাঝোতা করছেন কেন?…

ডেভিড কিম পরিষ্কার করেছেন যে, বিদ্রোহীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে:

আমরা থাইল্যান্ডের অংশ হতে চাই না। আমরা থাই নই। আমাদের রক্ত কখনোই থাই রক্ত হবে না… আমরা জোর দিয়ে বলছি, থাইল্যান্ড থেকে আমরা আলাদা হতে চাই না, তবে আমরা আমাদের স্বাধীনতা চাই…

মুসলিম নর্থ সন্ত্রাসবাদীদের সাথে কথা বলতে বারণ করেছেন:

সন্ত্রাসবাদীদের সাথে কোনো সমাঝোতা নয়।

শান্তি আলোচনাই বলে দিচ্ছে সহিংসতা শেষ হয়ে যায়নি। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বিদ্রোহীরা আরো শক্তিশালী হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে থাইল্যান্ড আরো সহিংসতায় জড়িয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত এরকম ইউটিউব ভিডিও আরো আসছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .