মেইখাতিলায় দাঙ্গার পরিকল্পনাকারী কারা?

গত তিন দিন ধরে চলা দাঙ্গায় মায়ানমারের মান্দালয় প্রদেশের মেইখিতিলা শহর ছারখার হয়ে গেছে।

২০ মার্চ , ২০১৩ তখন থেকে এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যখন শহরের এক মুসলমান স্বর্ণকারের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করতে আসা দুই নাগরিকের যাচাই করতে দেওয়া স্বর্ণ ভেঙ্গে ফেলা নিয়ে বচসার সময় উক্ত দুই স্বর্ণ বিক্রেতাকে পেটানো হয়। এক পর্যায়ে একদল জনতা এই দুই বিক্রেতার সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং স্বর্ণের দোকান ভেঙ্গে ফেলার জন্য অগ্রসর হয়।

এই এলাকায় একদল লোক বাড়িঘর এবং মোটর সাইকেলে আগুন দিচ্ছে, এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়, বিশেষ করে যখন সেখানকার মুসলমানরা তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে, তারা অনুরোধ করে তাদের যেন শহরের উপকণ্ঠে রেখে আসে। পুলিশ ও ইয়াং বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন নামক সংস্থার সদস্যরা তাদের পাহারা দিয়ে স্টেডিয়ামের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসে।

Photo shared by Mg Byine Oo on Facebook.

এমজি বাইইনে ও-এর ফেসবু্কে শেয়ার করা ছবি

নেট নাগরিকরা এই বিষয়ে সক্রিয় ভাবে আলোচনা করছে। কেউ কেউ ফেসবুকে ঘৃণাসূচক মন্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, এদিকে অন্যরা ধর্মীয় সংঘর্ষের ঘটনায় হতাশ।

ইয়াং বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন একটি ছবি পোস্ট করেছে যেখানে লেখা আছে “ আপনি নিজে ধর্মীয় যুদ্ধের কারণ দাঁড়াবেন না”:

গণতন্ত্রের পথে পরিচালনার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবার মত অবস্থা এর বিপ্রতীপ অবস্থা সৃষ্টির জন্য জাতিগত ঘৃণা, সংঘর্ষ এবং দাঙ্গাকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমরা বিশ্বাস করি সকল অন্যায়, সংঘর্ষ এবং দাঙ্গার সবচেয়ে কম বাজে ভাবে সমাধান করার একমাত্র সম্ভাব্য উপায় হচ্ছে আইন সম্মত ভাবে সমাধান করা।
– ইয়াং বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (মায়ানমার)

২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ২,০০০ নাগরিক এটি শেয়ার করে, সেই সমস্ত লেখকদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য যারা ঘৃণাসূচক বাক্য ছড়ায় এবং যাদের পরিচয় আদতে জানা যায় না।
তুন জাও আনইয়ার মাই আই, আজীবন চলতে থাকা এই রক্তপাতের বিষয়ে সতর্ক করে দেন [বার্মিজ ভাষায়][সর্বশেষ সংবাদঃ সম্প্রতি এই পোস্টটি লেখক অপসারণ করেছে]:

বন্ধুরা, একই সাথে আমরা খুবই বেদনার্ত (এই সমস্ত সংবাদ শোনার কারণে), যদি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝেও এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এই রক্তপাত কোনদিন শেষ হবে না।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী-ইয়ে হুটুট, গণতান্ত্রিক উপায়ে সমস্যার সমাধানের গুরত্বের বিষয়টি জনতাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেছেন[বার্মিজ ভাষায়] :

যখন (আমরা সকলে) এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী ক্ষত নিরাময়ের জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, সেখানে (কেন তারা) এই ক্ষতকে আরো জোরালো করার চেষ্টা করছে?

আমি চাই সকলে এই বিষয়টি উপলব্ধি করুন যে উন্মত্ত জনতার শক্তি দ্বারা সমাধান করার বিষয়টি গণতান্ত্রিক নয়, বিশেষ করে যখন তা হয়ত আইনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।

অন্যদিকে কিছু মানুষ প্রশ্ন করছে এই দাঙ্গা ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য প্ররোচিত কি না। থানডা উইন দাঙ্গার সময়কাল উল্লেখ করে এই নিয়ে সন্দিগ্ধ [বার্মিজ ভাষায়], এই কারণে যে যখনই নেতারা বিদেশে ভ্রমণ করে, তখনই দেশে দাঙ্গা শুরু হয়:

১) যখন আন্টি সু (নেত্রী দাও আং সান সূচি) অথবা রাষ্ট্রপতি বিদেশ ভ্রমণে যায়, তখন মায়ানমারে দাঙ্গা সংঘঠিত হতে থাকে ।

২) যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ অথিতি মায়ানমার ভ্রমণে আসে, তখনই দাঙ্গা সংঘঠিত হয়।

গুগলের প্রধান এরিক স্মিডস এই সপ্তাহান্তে মায়ানমার ভ্রমণে এসেছিলেন।

ইয়ে মিন হতুন তার বর্তমানের এই অভিজ্ঞতাকে ১৯৮৮ সালে গণজাগরণের সাথে তুলনা করেছে [বার্মিজ ভাষায়]। সে একই সাথে উগ্রবাদকে প্রত্যাখান করেছে :

কারা এই সমস্ত জাতিগত এবং ধর্মীয় দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে? এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে দিলে কারা এতে আক্রান্ত হবে।[…] যারা এই সমস্ত বর্ণবাদী এবং ধর্মীয় উগ্রবাদকে সমর্থন করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাই।

মেইখিতিলা হচ্ছে এমজি বাইয়েনে ও-এর বাসস্থান, এই দাঙ্গা সম্বন্ধে সে তার চিন্তা ব্যক্ত করেছে [বার্মিজ ভাষায়] ।

সারাদিন ধরে আমি এই শঙ্কায় মন খারাপ করে ছিলাম যে, যদি আমার কিংবা আমার বন্ধুর বাসায় আগুন লাগে[…] যদি মেইখাতিলবাসী অন্তত দুই সপ্তাহ কাজ করতে না পারে, তাহলে এই শহরের উপর নির্ভরশীল সকল গ্রাম সমস্যায় পড়ে যাবে। এই মূহূর্তে আমার দাদি আমাকে ডেকে বলছে আমার খেতের পেয়াজ এখন আমি কি ভাবে বিক্রি করব। আমি প্রচণ্ড বিরক্ত, বিষয়টি হতাশজনক […]

মেইখাতিলায় নানান ধর্মের অনুসারীর বাস-এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, এবং এমনকি ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসের অনেকে রয়েছে। সকলে একসাথে মিলে মিশে এখানে ব্যবস্যা করত। আমাদের এ রকম কোন সমস্যা ছিল না। আমরা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের মধ্য ওই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম কিন্তু এই রকম কিছুই ঘটেনি। এখানে অনেক পুলিশ স্টেশন রয়েছে, এখানে যদি একবার আপনি সমস্যার সৃষ্টি করেন, তাহলে আপনাকে জেলে যেতে হবে। […] মেইখাতিলায় বাস করা সকলে এই বিষয়টি জানে, এখানে সবাই শান্তিপূর্ন ভাবে অবস্থান করত। এখন এখানে যা ঘটছে বিষয়টি ধর্মীয় সংঘর্ষ নয়, কিন্তু (তারা) এটাকে আকার দিচ্ছে ।[…] আমি কোন সামরিক জেনারেলের ঘোষণা শুনতে চাই না যে বলছে “সারা দেশের পরিস্থিতি খারাপ হবার আগে, তা থামানোর জন্য সামরিক বাহিনী সময়মত দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে”। থু… […]

ইয়ে মিয়াত মিন একই চিন্তা টুইট করেছে :

@ইয়েমইয়াত৯১: এই সকল রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে মূলে যারা, তার ক্ষুদ্র বুদ্ধির মানুষকে উসকে দিচ্ছে। রক্ত এবং ক্ষোভ হচ্ছে তাদের তুরুপের তাস।#মায়ানমার

অন্য নেট নাগরিকরাও উগ্রবাদ এবং যারা ওই সকল মিথ্যা সংবাদ খবর এবং সংবাদ তুলে ধরেছে তাদের নিন্দা জানিয়েছে। বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের নামে যে সমস্ত ফেসবুক পাতা মিথ্যা এবং উগ্র সংবাদ প্রদান করেছে মোয়ে জাই নিয়েন এমন কি সে সবের তালিকা করেছে[বার্মিজ ভাষায়]। স্থানীয় জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ইলেভেন মিডিয়া, সংবাদ প্রদান করেছে যে[বার্মিজ ভাষায়] যে ১০ জন নাগরিকের নিহত হবার দাবি করে বিবিসির ফেসবুক পাতায় প্রদান করা সংবাদ অংশ [বার্মিজ ভাষায়] ( যা কিনা ২১ মার্চ ২০১৩ ) সঠিক ছিল না।

তথ্য মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে [বার্মিজ ভাষায়] যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ( ২২ মার্চ ২০১৩ তারিখ ৬:৩৭ মিনিট পর্যন্ত) এই দাঙ্গায় ১১ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছে।এই দাঙ্গায় একই সাথে ১৫২টি বাড়ি, দুটি গাড়ি একটি সরকারি দপ্তর, একটি মোটর সাইকেল, দুটি মোটর চালিত রিকশা এবং ১৩টি ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। ভেঙ্গে পড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য শহরটিতে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। .

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .