গ্যাবন থেকে মালি: আফ্রিকায় ফ্রান্সের সামরিক হস্তক্ষেপের ইতিবৃত্ত

[উল্লেখ ব্যতীত সবগুলো লিংক-ই ফরাসিতে]

ইসলামি উগ্রপন্থীরা বামাকোর দিকে অগ্রসর হলে গত ১১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে ফ্রান্স মালিতে সেনা হস্তক্ষেপ করে। ফরাসি সেনাবাহিনীর এই অভিযান ‘অপারেশন সারভাল’ [ইংরেজি] নামে পরিচিত। মালির জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ এবং অনেক বিদেশী পর্যবেক্ষক এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন। যদিও এই সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে আফ্রিকায় হস্তক্ষেপ না করার অবস্থান থেকে সরে এলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ।


View L'intervention militaire étrangère au Mali in a larger map

মালির সংঘর্ষের গুগল ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপ। একেঁছেন জিয়ন আফ্রিকি।

আফ্রিকায় ফরাসি সেনা হস্তক্ষেপ নিয়ে সারাবিশ্বের কোথাও প্রতিবাদ না হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন ফ্রান্সিস ডি’অ্যালেনকোন:

Bizarre, bizarre… L’intervention française au Mali ne dérange personne alors que des actions américaines similaires soulèveraient des tempêtes de protestation… De l’avantage de ne pas être une super puissance.

অদ্ভুত ব্যাপার… আমেরিকার সেনা হস্তক্ষেপ নিয়ে যেভাবে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়, মালিতে ফরাসি হস্তক্ষেপ নিয়ে সেরকম কিছুই হচ্ছে না… তারা আমেরিকার মতো মহাশক্তিধর নয় বলেই কি!

বিষয়টি ব্যাখ্যার জন্য সে লিডোভি নোভিনি পত্রিকা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে:

Les Français sont intervenus plus de 50 fois en Afrique depuis 1960. Ils ont combattu au Tchad, dans la guerre non déclarée avec la Libye, protégé les régimes de Djibouti et de République Centrafricaine des rebelles, empêché un coup d’état aux Comores, sont intervenus en Côte d’Ivoire. Que ce soit pour préserver des intérêts économiques, protéger les ressortissants français ou démontrer le statut de grande puissance du pays, les locataires de l’Élysée, de gauche comme de droite, ont fréquemment manifesté leur penchant pour les actions unilatérales. … Pourtant personne n’a jamais protesté. … Si les États-Unis intervenaient avec une telle véhémence, il y aurait des protestations interminables en Europe. Et les ambassades américaines verraient défiler des diplomates fâchés, à commencer par les Français.

ফ্রান্স ১৯৬০ সাল থেকে আফ্রিকায় ৫০ বারের বেশি সেনা হস্তক্ষেপ করেছে। তারা চাঁদে, লিবিয়ায় যুদ্ধ করেছে। বিদ্রোহের হাত থেকে জিবুতি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করেছে।কমোরোসে ক্যু প্রতিরোধ করেছে। আর আইভরি কোস্টে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ভবনে বাম কিংবা ডান যারাই ক্ষমতায় আসুক অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা কিংবা ফরাসি নাগরিকদের নিরাপত্তা অথবা নিজেদের নিছক শক্তিপ্রদর্শনের জন্য আফ্রিকায় অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু কেউই এর প্রতিবাদ করেনি। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো আচরণ করতো, ইউরোপে ব্যাপক প্রতিবাদ হতো। মার্কিন দূতাবাসের দরজা দিয়ে রাগী কূটনৈতিকরা ঢুকে পড়তো। আর এটা হতো একজন ফরাসি কূটনৈতিক দিয়েই।

Carte de la rébellion touareg au Azawad, au nord de Mali indiquant les attaques des rebelles au 5 avril 2012

উত্তর মালির আজাওয়াডের টুয়ারেগ বিদ্রোহের মানচিত্র। এখানে ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখের বিদ্রোহীদের আক্রমণের চিত্র দেখা যাচ্ছে। (সিসি-বিওয়াই- ৩.০)

সময়ানুক্রমে আফ্রিকায় ফ্রান্সের সামরিক হস্তক্ষেপের চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো। দুটি লেখার ওপর ভিত্তি করে এটা করা হয়েছে: এর একটি ওয়েল ডি’আফ্রিক-এর জন্য লিখেছেন নেসটর এন’গামপাউলাড্রুয়েজ ইনফো’র জন্য আরেকটি লিখেছেন জাঁ-প্যাট্রিক গ্রুমবার্গ। গ্রুমবার্গ ঔপনিবেশিক কালে আফ্রিকায় ফ্রান্সের সামরিক হস্তক্ষেপের বেশিরভাগগুলোই তার লেখায় যোগ করেছেন:

শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্যু করার উদ্দেশ্যে ১৯৬৪ সালে ফরাসি বিমান সেনা গ্যাবনের লিভারভ্যালিতে নামে। ক্যু শেষে তারা ফিরে যায়।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত চাঁদের উত্তরাঞ্চলের শহর তিবেস্টিতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়তে ফরাসি সেনারা অংশ নেয়।

১৯৭৮ সালে ফ্রান্স জায়ারের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র) কোলওয়েজি শহরে ৬০০ লিজিয়ন সেনা পাঠায়। সেনা পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল কাটানগান বিদ্রোহীদের হুমকিতে থাকা কয়েক হাজার আফ্রিকান, ইউরোপিয়ান নাগরিককে রক্ষা করা। জায়ারের প্রেসিডেন্ট মবুতু সেসে সেকোর অনুরোধেই ফ্রান্স এই অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ৫ জন লিজিয়ন সেনা নিহত হন। তবে ২ হাজার ৭০০ জন পশ্চিমা নাগরিক এতে রক্ষা পায়।

১৯৭৯ সালে অপারেশন বারাকুডার সময়ে ফ্রান্সের প্যারাট্রুপাররা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজা জাঁ-বেডেল বোকাসাকে উদ্ধার করে।

১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত ফ্রান্স চাঁদে অপারেশন মান্টা পরিচালনা করে। এ সময়ে তারা লিবিয়া সমর্থিত ৩ হাজার বিদ্রোহীর মুখোমুখি হয়। দুই বছর পরে, আরেকটি ফরাসি সেনা অভিযান পরিচালনা করে। ‘অপারেশন ইপারভিয়ার’ নামে পরিচিত এই অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল আকাশ পথে। সরকারবিরোধী আক্রমণের পরে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।

১৯৮৯ সালে করোমোসের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আবদুল্লাহ গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার পর বব ডেনার্ডের নেতৃত্বে ২০০ ফরাসি সেনা করোসাসে এসে বিদ্রোহীদের দেশ থেকে বিড়াতন করে।

১৯৯০ সালে সামরিক ঘাঁটি পুনর্স্থাপনের উদ্দেশ্যে ফ্রান্স গ্যাবনের লিভারভ্যালি এবং পোর্ট-জেন্টিলে সেনা পাঠায়। উল্লেখ্য, ভয়ংকর দাঙ্গায় সামরিক ঘাঁটির বেশ ক্ষতি হয়েছিল। এই অপারেশনের সময় ১ হাজার ৮০০ বিদেশীকে সরিয়ে নয়া হয়েছিল।

১৯৯১ সালে জায়ারেতে দেশজুড়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা ও লুটপাতের সময়ে বেলজিয়াম এবং ফরাসি সেনারা অভিযান চালিয়ে বিদেশীদের সরিয়ে নেয়।

১৯৯১ সালে ইথিওপিয়ান সৈন্যদের নিরস্ত করতে ফ্রান্স জিবুতির আফার বিদ্রোহে সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠায়। ইথিওপিয়ান সেনারা ইথিওপিয়ান প্রেসিডেন্ট মেনগিস্টু হাইলে মারিয়ামকে উৎখাত করতে সীমানা অতিক্রম করেছিল।

১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডাতে হুতুরা হাজার হাজার টুটুদের ওপর গণহত্যা চালানোর সময় ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের সৈন্যরা অভিযান চালিয়ে ইউরোপিয়ানদের সরিয়ে নেয়। পরের বছরে আফ্রিকান সেনাদের সহায়তায় ২ হাজার ৫০০ ফরাসি সেনা ‘অপারেশন টারকুইসি’ শুরু করে। জায়ারে এবং পূর্ব রুয়ান্ডায় মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে এই সেনা অভিযান শুরু হয়।

১৯৯৫ সালে বব ডেনার্ডের নেতৃত্বে হাজার খানেক সৈন্য’র ‘অপারেশন আজালিয়া’ কমোরিয়ান প্রেসিডেন্ট সাঈদ মোহাম্মদ জোহারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভ্যুত্থান নস্যাত করে দেয়।

১৯৯৬ সালে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট আন্জে-ফেলিক্স পাটাসের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থানের সময় ফরাসি সেনারা ‘অপারেশন আলমান্ডিন’ এর মাধ্যমে ১ হাজার ৬০০ বিদেশীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়। এর পরের বছর ১৯৯৭ সালে দুইজন ফরাসি সেনা নিহত হওয়ার পর ফ্রান্স ব্যানগুই সমর্থিত অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করে।

একই বছরে কঙ্গোর সেনাবাহিনী এবং মিলিটারি লিডার ডেনিস সাসিউ এনগুইসোর মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১ হাজার ২০০ ফরাসি সেনা অভিযান চালিয়ে ফরাসি ও আফ্রিকান প্রবাসীদের উদ্ধার করে।

২০০২ সালে আইভরি কোস্টে সেনা উত্তেজনার চলার সময়ে দেশটি দুই অঞ্চলে বিভক্ত হয়। এ সময়ে সংঘর্ষে আটকে পড়া পশ্চিমাদের উদ্ধারে ফরাসি সেনারা ‘অপারেশন লিকর্নি’ পরিচালনা করে।

২০০৩ সালে জায়ারের আইটুরি এলাকা নিরাপদ রাখতে এবং গণহত্যা বন্ধ করতে অপারেশন ‘অপারেশন আর্টেমিস’ চালানো হয়। এতে ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী অংশ নেয়, যার ৮০ শতাংশই ছিল ফরাসি।

২০০৪ সালে আইভরি কোস্টের সরকার ফরাসি সেনা ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালানোর পর ফরাসি সেনারা একটি ছোট্ট আইভরিয়ান বিমানঘাঁটি উড়িয়ে দেয়।

২০০৮ সালে চাঁদের প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবি প্রতিবেশী দেশ সুদানের বিদ্রোহী কর্তৃক আক্রান্ত হলে ফরাসি সেনারা বিদেশীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে অভিযান পরিচালনা করে।

২০১১ সালে মার্চ মাসে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় জাতিসংঘ লিবিয়ার ওপর সামরিক হস্তক্ষেপ অনুমোদনের পর ফরাসি বিমানবাহিনী প্রথম গাদ্দাফির বাহিনীর ওপর হামলঅ পরিচালনা করে। ৩১ মার্চ ন্যাটো লিবিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে ক্ষমতা দখল করতে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করা।

২০১১ সালে আইভরি কোস্টে গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে কুয়াত্তারার পক্ষে ভারসাম্য বজায় রাখতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি ফরাসি সেনারাও নামে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আলাসানে কুয়াত্তারাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরেও লরেন্ট জিবাগবো পদত্যাগ করতে অস্বীকার করায় এই যুদ্ধ শুরু হয়।

ফ্রান্স ‘আফ্রিকার পুলিশ’-এর ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসতেই মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। উল্লেখ্য, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রানকোইস বোজিজি (সাবেক সেনা প্রধান যিনি ২০০৩ সালের ১৫ মার্চ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আন্জে-ফেলিক্স পাটাসের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিলেন) বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি কতটা জানতেন যে মালির ঘটনা তাকে শক্তি জোগাবে:

২০১৩ সালে ইসলামী জঙ্গীরা মালির রাজধানী বোমাকোর দিকে অগ্রসর হলে ফরাসিরা তাদের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ করে। ফ্রান্স ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে যে, ইসলামী জঙ্গীরা যদি মালির উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়, তবে তা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে।

একই সময়ে সোমালিয়ায় আল কায়েদার সহযোগী জঙ্গী সংগঠন আল শাহাবের হাতে জিম্মি এক ফরাসি নাগরিককে উদ্ধারে ফ্রান্স কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করে। তবে জঙ্গীরা জিম্মিকে হত্যা করে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .