ইরান: ইউটিউবে দেখানো অপরাধে প্রকাশ্যে ফাঁসি

ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবাদ সংস্থা (ইরনা) অনুসারে ২০শে জানুয়ারী, ২০১৩ তারিখ দিনের শুরুতে জড়ো হওয়া প্রকাশ্য দর্শকদের [সতর্কতা: খোলামেলা ছবি] চোখের সামনে তেহরানে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দু’জন যুবক আলিরেজা মাফিহা এবং আলি সারভারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

অপরাধ এবং ইউটিউব

২০১২ সালের শেষের দিকে চারজন তরুণের একজন পথচারীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে ছুরি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে তার জিনিসপত্র নিয়ে নেওয়া দেখানো নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজ ইউটিউবে পোস্ট করার পর অভিযুক্ত ছিনতাইকারীদের অনুসন্ধানে শীর্ষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

শীঘ্রই চারজন লোককে গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়। মাফিহা এবং সাভারিকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য দু’জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ বছরের নির্বাসন ও ৭৪টি করে বেত্রাঘাত প্রদান করা হয়।

একমুঠো ডলারের জন্যে

আইএসএনএ থেকে পাওয়া রবিবারের মৃত্যুদণ্ডের অন্যতম একটি শক্তিশালী ছবিতে (উপরে) তার মৃত্যুদণ্ডের আগে একজন যুবককে দৃশ্যতঃ তার জল্লাদের কাঁধে মাথা রেখে বিশ্রাম নিতে এবং সেসময় মুখঢাকা লোকটিকে এক হাত দিয়ে তার কাঁধে হাত দিয়ে সান্তনা দিতে দেখা যাচ্ছে।

এই ছবিটি সম্পর্কে তেহরান থেকে আমিরহাদি তার ব্লগে লিখেছেন [ফার্সী ভাষায়]:

এই ছবিটির তাকান, মনে হচ্ছে যে অভিযুক্ত তার মাথা সেই শাস্তি [মৃত্যু] কার্যকরকারীর কাঁধে রেখেছে। আপনি কি তার চোখ ভয় দেখতে পেয়েছেন? আমার কাছে এই দৃশ্যটি বিরল। কোন জল্লাদ অভিযুক্তের মাথা তার কাঁধে রাখতে দেওয়ার কারণে। এই কারণে যে কয়েক মুহুর্তের মধ্যে মৃত্যু বরণ করবে এমন একজন অভিযুক্ত তার জল্লাদের কাঁধ ছাড়া আর কোন আশ্রয় খুঁজে পায়নি তাই।

[…]

এইসব বাচ্চারা, হ্যাঁ “বাচ্চারা” যেহেতু সবচেয়ে বয়স্কের বয়স ২৪, আর কনিষ্ঠতমের মাত্র ২০ বছর। তারা পেশাদার চোর এবং ছিনতাইকারী নয়। তারা হয়তো সামান্য ৭০ বা ৩০ হাজার তোমানের [আনুমানিক ১,৮৭০ এবং ৮০০ বাংলাদেশী টাকা] জন্যে ছিনতাই করেছে।

তারা কাজও করতো। তাদের জীবন বৃত্তান্তে দেখা যায় যে তারা কুরিয়ারের কাজ করতো এবং…. কিন্তু যখন জাতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটতে শুরু করলো। তো দৈনিক ভিত্তিতে। যখন একজন কেরানির বেতন শুধু দই আর এবং রুটি দিয়ে তিন জনের খাওয়া-পরার জন্যে যথেষ্ট নয়। যে সমাজে আগামীকালের কোনও ভরসা নেই। (তখন) তাদের কী করা উচিৎ?

কোলাজটি রবিবারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া অভিযুক্ত দু’জন ছিনতাইকারীকে পলাতক ইরানী জাতীয় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে: “একজন তার ২০ বয়সের শুরুতে ২০ ডলার চুরি করে ফাঁসি কাষ্ঠে জীবন দিয়েছে। অন্যজন ২৬০ কোটি ডলার চুরি করে ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং কানাডায় তার সময় উপভোগ করছে।”

অর্থ তসরুপের সন্দেহভাজন এবং পলাতক ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ রেজা খাভারির একটি প্রতিকৃতির পাশে একই ছবি পুনরায় পোস্ট করে “১৯৭৯ সালের বিপ্লব সংঘটনকারীদের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই” শীর্ষক একটি ইরানী ভিন্নমতাবলম্বী পৃষ্ঠা লিখেছে [ফার্সী ভাষায়]:

আমাদের হত্যা করুন। যে যুবকের প্রতিদিনের রুটি কেনার টাকা নেই তাকে হত্যা করুন। এটা আমাকে লা মিজারেবল উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দেয় যেখানে একটি রুটির টুকরা চুরি করার জন্যে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, আর যারা আমাদের শত কোটি ডলার লুণ্ঠন করে নেয় তারা আমাদের মুখের উপর হাসে। নিশ্চিত থাকুন এটা ছাই চাপা আগুন এবং সারাজীবন নির্যাতিত এবং বৈষম্যের শিকার এইসব দরিদ্র এবং বেকার তরুণরা আপনার পতন ঘটাবে।

দর্শকের মজা

সংবাদটিতর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দারা তার ‘আমার হৃদয়ের গভীরের কথা‘ [ফার্সী ভাষায়] নামের ব্লগে লিখেছেন:

আমাদের এই দিনটির কথা ভেবে অবশ্যই আতংকিত হওয়া উচিৎ যখন জনগণ মজার জন্যে সিনেমা, উদ্যান এবং পর্বতে যাওয়ার পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেখতে যায়… সরকার সবাইকে ভয় দেখানোর জন্যে প্রকাশ্যে জনগণের মৃত্যুদণ্ড দেয়, কিন্তু জনগণের প্রতিক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ। তারা এরকম একটি মৃত্যুদণ্ডকে স্বাগত জানায়। একজন মৃত্যুপথযাত্রী বিনোদনের একটি বিষয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .