লাওসে বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন এক আন্দোলন শুরু করেছে

লাওসের বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন প্রাণীদের নিরাপত্তা এবং তাদের যত্নের ব্যাপারে গণসচেতনতার বিষয়ক আন্দোলন তৈরীর লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে। যেমন উদাহরণ হচ্ছে, এ্যানিম্যাল রেসকিউ সেন্টার লাওস (লাওসের প্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র) নামক সংগঠনটি নীচের এই সমস্ত উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষে স্থাপন করা হয়েছে:

-উদ্ধারকৃত পশু, বিশেষ কুকুর, ঘোড়া এবং বিড়ালের জন্য আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা।
-ডিগ্রিধারী এবং নিবন্ধিত পশু চিকিৎসকের সহযোগিতায় গবেষণাগার এবং ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক স্থাপন করা
– কর্মশালা পরিচালনার সুবিধাদি প্রদান করা, পশু চিকিৎসক, পোষা প্রাণী বিক্রেতা, পোষা প্রাণীর মালিক এবং যারা এই সব কর্মশালা পরিচালনা করবে তাদেরকে এই সুবিধা প্রদান করা।
– স্থানীয় শিশুদের শিক্ষার জন্য গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে একটা ছোট্ট চিড়িয়াখানা স্থাপন করা।
– প্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রের চাপ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কুকুর আর বিড়ালের জন্য আহার ও থাকার ব্যবস্থা ( কুকুর আর বিড়ালের হোটেল) সরবরাহ করা।

লাওস এ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টার

লাওস এ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টার নামক দলটি লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েন-এর রাস্তায় ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো প্রাণীদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন:

ভিয়েনতিয়েন, ঠিক যেখানে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি, সেখানে রাস্তার কুকুর এবং পোষা কুকুরকে আলাদা করা খুব সহজ নয়…বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে বেশীরভাগ কুকুর কারো না কারো পোষা। এমনকি যদিও আপনি কোন কুকুরকে রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াতে দেখেন, এর মূল কারণ হচ্ছে লাও জনগণ সাধারণত সকালে তাদের বাড়ির দরজা খুলে দেয় এবং কুকুরকে বের হয়ে যেতে দেয়।

এখানে বেশ কয়েকটি কুকুরের মালিকানা বৌদ্ধ মন্দিরের হাতে, এই বিষয়টিও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেঃ যদিও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সাধারণত কুকুরের যত্ন নেয়, কিন্তু প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন প্রদান, পশু চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং চিকিৎসার ইত্যাদির জন্য তাদের যথেষ্ট সামর্থ্য ও অর্থ নেই।
ভবিষ্যতে যদি একবার এই কেন্দ্রটি নির্মাণ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিড়াল, ঘোড়া, খরগোশ, হ্যামেস্টার (ধেড়ে ইঁদুরের মত প্রাণী), এবং অন্য সব ক্ষুদ্র গৃহপালিত প্রাণীর জন্য একটা এলাকা নির্ধারিত করব।

আহত এই সব প্রাণীদের উদ্ধার এবং পুনরায় তাদের আশ্রয় প্রদানের পর, উদ্ধারকারীরা ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য অনুসন্ধান করতে থাকে, যারা কিনা এই প্রাণীটিকে গ্রহণ করবে অথবা তার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে। উদ্ধারকারীরা নিজস্ব ওয়েব সাইট, ফেসবুক,এবং টুইটারপাতার মাধ্যমে এই বিষয়ে আবেদন প্রচার করতে থাকে। যেমন উদাহরণ, এই দলটি এমন একজনকে খুঁজছে যে এই উদ্ধারকৃত বিড়ালছানাটিকে গ্রহণ করতে রাজি:

বিড়াল ছানাটির একটি বাসস্থান প্রয়োজন।
হোম আইডিয়ার কাছে এই বিড়াল ছানাটিকে পাওয়া যায় এবং সেটিকে আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয়, কারণ তাকে খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিটি এটিকে আর তার কাছে রাখতে সামর্থ্য নয়। এটা একটা ছোট্ট বেড়াল (এ্যাপ)। চার সপ্তাহের একটি বাচ্চা, বেশ শক্তিশালী, যার শরীরে সুন্দর ধূসর দাগ রয়েছে। যদি আপনি এই বিড়ালটিকে একটা নতুন আবাসস্থল প্রদান করতে পারেন, তাহলে দ্রুত আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন !

প্যালঅথবা পেট এ্যাওয়ারনেস ইন লাওস (লাওসের পোষা প্রাণী সচেতনতা) হচ্ছে এখানকার আরেকটি পশুপ্রেমী সংগঠন:

প্যাল হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের ও স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত প্রকল্প, যাদের উদ্দেশ্য বৃহত্তর সামাজিক দায়িত্ব ও পশু চিকিৎসায় সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী লাওসে কুকুর ও বিড়াল এবং তাদের সাথে যুক্ত মানুষের কল্যাণের বিষয়টিকে উন্নত করা।

তারা প্রথম লাওসে প্রাণী দেহের গর্ভাশয় অপসারণ/বন্ধ্যকরণ এবং টিকাদান কর্মসূচির আয়োজন করে:

এই কর্মসূচি, প্রাণী এবং মানব স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অবদান পারে। এই ধরনের আয়োজন,এখানকার সম্প্রদায় যে সমস্ত রোগে আক্রান্ত হয় সে সমস্ত রোগ সংক্রমণের উপাদান কমিয়ে তা মানবকে উন্নত স্বাস্থ্য প্রদান করবে। গণপ্রজাতন্ত্রী লাওস কর্মরত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পশুচিকিৎসক-এর কাহিনীর ভিত্তিতে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুসারে, গৃহপালিত অনেক কুকুর আর বিড়াল ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদেরকে কোন প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয় না এবং তাদের শরীরে নানান ধরনের পরজীবীর বাস (আঁটুলি,চেলাপোকা, মাছি ইত্যাদি)।

পাওয়াস৪থটস নামক এই দলটি লাওসের, বান শিবুনহাঙতে -ও একটি টিকাদান কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।

লাওসের বান শিবানহাঙ-এ টিকাদান কর্মসূচি, ছবি পাওয়াস ৪ থটস-এর ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া

আরেকটি আন্দোলন অবৈধ কুকুরের মাংস বিক্রি বন্ধের দাবীর সাথে যুক্ত হয়েছে। কেইলিঘ এন্ড্রুজ লিখেছে:

লাওসে এই বীভৎস ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে। ভিয়েনতিয়েনে এখন অনেক কুকুরের মাংসের রেস্টুরেন্ট হয়েছে…কিছু মানুষের চুরি হয়ে যাওয়া কুকুর এখানে রান্না হয়।

কুকুরের মাংস খাওয়া আমার জন্য ততটা নয় (যদিও আমি একজন নিরামিষভোজী), তারচেয়ে এই প্রাণীগুলো যে নিষ্ঠুরতা এবং যন্ত্রণার দিয়ে যায়, তা আমার জন্য উদ্বেগের বিষয়। এই সমস্ত অবৈধ কুকুরের মাংস বিক্রয়ের কারণে মানব স্বাস্থ্যের প্রতি যে হুমকি এবং সংক্রমণ রোগ বিস্তারে যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, এমনকি সে সবের কথা শুরু করতে আমাকে বলবেন না।

ফেসবুকের মাধ্যমে, একটি এ ধরনের কুকুরের মাংস বিক্রয় কেন্দ্র উন্মোচিত হয়েছে।

“ভিয়েনতিয়েনের যে সকল স্থানে কুকুরের মাংস বিক্রি হয় এটি তার মধ্যে একটি। ছবি এবং শিরোনাম এ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টার-এর ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে”।

পিটিফোন সিথিকুন আমি শুনেছি এবং দেখেছি যে চাদর, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, ইত্যাদির জন্য নাগরিকরা অবৈধ ভাবে কুকুর কেনাবেচা করে। তারা এই সমস্ত কুকুরগুলোর মালিক নয় (সম্ভবত মালিকের কাছ থেকে সেগুলো চুরি করা)

এই সমস্ত পশুকল্যাণ সংগঠনের বেশীর ভাগই সমাজকল্যাণ মূলক সংগঠন, যাদের দীর্ঘ সময়ের লক্ষ্য সমাজে প্রাণী নিরাপত্তার বিষয়কে বিবেচনা করার উপর গুরুত্ব প্রদানে জনগণকে সচেতন করা, যাদের মধ্যে নীতি নির্ধারকেরাও রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .