ইরান: নিষেধাজ্ঞা এবং অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্যে টাকা নেই

এই পোস্টটি পীমেন মজিদজাদেহ কর্তৃক আরসেহ সেভম-এ পূর্বপ্রকাশিত

সর্ষের ভিতরের ভুত

ইরানে লক্ষ লক্ষ রোগীদের জীবনে অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞার তাৎক্ষণিক ফলাফলের বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এমন কোন দিন নেই যেদিন আমরা ইরানে ঔষধ সংকট এবং কিভাবে এটি ইরানীদেরকে – যাদের একটানা ঔষধ প্রয়োজন – বিরূপভাবে প্রভাবিত করছে সেই সম্পর্কে নতুন কোন গল্প শুনি না।

তবে গত তিন সপ্তাহ ধরে ইরানের স্থানীয় মিডিয়া সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং আমদানী অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধরছে। এটি ঔষধ সংকট এবং উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও অযোগ্যতা প্রকাশে অবদান রেখেছে।

সংসদের স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান হোসেন আলী শাহরিয়ারি বলেছেন [ফার্সী ভাষায়], “সরকার স্বাস্থ্য এবং ঔষধ ক্ষেত্রে কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না।” তিনি আরো বলেছেন যে গত ছয় মাস ধরে বাজেটে এবং ওষুধ আমদানির জন্যে “কার্যতঃ কোন টাকা” নেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী মার্জিয়েহ ভাহিদ-দাস্তজারদি বাজেট বরাদ্দকরণকে সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন: “ঔষধ ক্রয়ের জন্যে বরাদ্দকৃত নগদ টাকার কি ঘটেছে আমরা তা জানি না।” তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঔষধ কেনার জন্যে প্রয়োজনীয় বাজেটের মাত্র ২৪% সরবরাহ করেছে।

সংসদের স্বাস্থ্য কমিশন স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে অভিসংশনের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেছে, যা অনেককে কাহিনীটির আরেকটি দিককে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখতে প্রণোদিত করেছে।

জামানেহ ট্রিবিউনে ঔষধ নিষেধাজ্ঞা নাকি নিস্পাপ খেলা [ফার্সি ভাষায়] পোস্টের লেখক লিখেছেন:

“স্বাস্থ্য পরিষেবার একজন পেশাদার ব্যক্তি হিসেবে আমি মনে করি, এই ‘ঔষধ ঘাটতি’ সমস্যা লাঘবে শাসকগোষ্ঠী কোন পদক্ষেপ নিয়ে থাকলে অথবা এর ফলস্বরূপ মানুষের দুর্ভোগকে সাধারণভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার আশায় এটা শুধুই সমস্যাটিকে গভীরতর করছে কিনা সেটা একটু সামান্য গভীরে গিয়ে খুঁজে দেখলে তা আকর্ষণীয় হবে।”

জামানেহ ট্রিবিউনে ঔষধ নিষেধাজ্ঞা নাকি নিস্পাপ খেলা [ফার্সি ভাষায়] পোস্টের লেখক লিখেছেন:

“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্যে তার নাগরিকদের বলি দিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ‘নিষেধাজ্ঞা'র স্বার্থপর ব্যবহার আমাদেরকে সতর্ক করছে। ঔষধ আমদানির উপর অবরোধ মানে হল চিকিৎসা পরিষেবার উপর নির্ভরশীল নাগরিকদের জীবন নিয়ে খেলা।”

এছাড়াও কেরমানশাহ অঞ্চলের কাসর-ই-শিরিন থেকে জনাব হোসেইনি তার ব্লগে  [ফার্সি ভাষায়] তার শহরের ঔষধের ঘাটতি নিয়ে তার উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি দেশে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ৯৫% উৎপাদনের সরকারী দাবির সমালোচনা করেছেন এবং বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত ওষুধপত্রের কতগুলি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রত্যয়িত। তিনি যোগ করেছেন:

“এসব সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ঔষধ ও জরুরী উপাদানসমূহ আইটেম জন্যে প্রয়োজনীয় টাকা [সরকারকে] প্রদান করতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। ঔষধ কেনার পরিবর্তে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রিত বাজারে সামান্য অবশিষ্ট টাকা অপচয় এড়ানোর জন্যে এটা করতে হবে।”

হিমোফিলিয়া জটিলতায় আক্রান্ত কিশোর মানুচেহর এসমাইলি-লিউজি ঔষধপত্রের অভাবে মৃত্যুবরণ করেছে।

তার জনগণের স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ [ফার্সি ভাষায়] বিষয়ক ব্লগ পোস্টে আহমদ হিমোফিলিয়াইয় আক্রান্ত রোগীদের সম্পর্কে আলোচনা করে বলেছেন যে ঔষধজনিত ঘাটতিই তাদের দুর্ভোগের কারণ। তিনি বলেছেন:

“বর্তমান সংকটে স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দীর্ঘসূত্রিতা এবং এর অনীহার কারণটি অজানা।”

আহমদ স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্যাদি সরবরাহ করে দাবি করেছে যে সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। শেষ করার সময় তিনি বলেছেন:

“স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা পরিষেবা খাতের সমস্যাগুলো স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগের অভাবের বাস্তব প্রমাণ দিচ্ছে। প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করায় [ব্যর্থতা] সরকারের ধারাবাহিক আচরণ হাজার হাজার রোগীদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিবে; যে সত্যটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় লুকানোর চেষ্টা করছে… তবে [মৃত] ১৫-বছর বয়েসী হেমোফিলিক কিশোরের মতো হাজার হাজার জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার চেয়ে সত্য বলা এবং কর্তৃপক্ষকে এটা শুনতে বাধ্য করা ভাল।”

ইরানের জন্যে সাহায্যের হাত

নিষেধাজ্ঞা এবং ঔষধ সামগ্রীর অভাব তৈরী করা সরকারের নীতি নিয়ে সমস্ত সমালোচনার মাঝে জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের একদল ইরানী ছাত্র-ছাত্রী এবং মানবাধিকার একটিভিস্টরা ইউরোপীয় ঔষধ সরবরাহকারী এবং ইরানের রোগীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরী করার জন্যে একটি অলাভজনক এনজিও প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইরানের জন্যে সাহায্যের হাত-এর লক্ষ্য হলো রোগীদেরকে স্বল্পতম সময়ে দুষ্প্রাপ্য ঔষধ সরবরাহ করা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .