অস্ট্রেলিয়া: বিশ্বে প্রথম ব্র্যান্ডবিহীন সিগারেট মোড়ক

অস্ট্রেলিয়াতে ১লা ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে চালু হওয়া নজির সৃষ্টিকারী নতুন সাধারণ সিগারেট প্যাকেজিং (মোড়ক) আইনকে সন্তুষ্টির সঙ্গে সম্ভাষণ জানিয়েছে অধিকাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী। টুইটার হ্যাশট্যাগ #সাধারণমোড়ক এবং “সাধারণমোড়ক” অনুসন্ধান করে মাত্র গুটি কয়েক নেতিবাচক টুইট পাওয়া গিয়েছে। হাফিংটন পোস্ট পত্রিকা বিশ্বের এই প্রথমটির মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বার্থের প্রতিফলন ঘটিয়েছে:

সাধারণ প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে প্যাকেট করা সিগারেট অস্ট্রেলিয়ার তাকগুলো ভরে উঠেছে। এতে করে মহাসাগরীয় দেশটি সিগারেটের প্যাকেট থেকে সমস্ত তামাক কোম্পানীর লোগো এবং রং নিষিদ্ধ করা বিশ্বের প্রথম দেশে পরিণত হয়েছে।

Tobacco plain packaging laws come into effect in Australia

তামাকের সাধারণ প্যাকেজিং আইন অস্ট্রেলিয়াতে কার্যকর হয়েছে
ছবি মারিয়া ঙ্গুইয়েন © কপিরাইট ডেমোটিক্স ১লা ডিসেম্বর ২০১২

অ্যান্ড্রু ডিক্সনের যৌনতা, ড্রাগ ও রাজনীতি  ব্লগের অবস্থান এর মধ্যবর্তী কোন এক জায়গায়:

তামাক কোম্পানীগুলো প্রকাশ্যে বলছে যে এটা কাজ করবে না। ব্র্যান্ড সমতা সম্পর্কে আমার গবেষণা বলে সবচেয়ে নিশ্চিতভাবেই এটা কাজ করবে। সরকার একে “পরিবারগুলোর জন্যে একটি জয়” হিসেবে অভিহিত করে বলেছে যে এটাই তাদের করা সবকিছু। ব্রান্ড যুদ্ধে স্বাগতম, যেখানে একটি প্রবর্তনের ব্র্যান্ড করার অধিকার নিয়ে যুদ্ধের সদ্য পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

কিন্তু তিনি এটাকে ভাল-মন্দ উভয়ভাবে গ্রহণ করেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে:

প্রশ্নাতীতভাবে, সাধারণ প্যাকেজিং জনস্বাস্থ্যের জন্যে একটি ইতিবাচক ফলাফল।

তবে অ্যান্ড্রু আইনি এবং বাণিজ্যিক বিভিন্ন দিক সম্পর্কেও চিন্তিত:

কিন্তু এটি সরকারের ব্যক্তিগত মেধা সম্পত্তি চুরি (বা ধ্বংস) করার একটি অগ্রহণযোগ্য উদাহরণ সৃষ্টি করে।

ব্লগার ডন এটকিন ভাবছেন ‘সাধারণ সিগারেটের প্যাকেট জনস্বাস্থ্যের জন্যে কী একটি মহা কৃতিত্ব?':

আমি কর্তৃত্বশীল রাষ্ট্রের সমর্থক নই এবং (আর তাই) সিগারেটের সাধারণ প্যাকেজিংকে হবু-নিয়ন্ত্রকদের কাছে জনস্বাস্থ্যের জন্যে একটি মহান বিজয়ের চেয়ে বড় কোন সাফল্য হিসেবে দেখি না। সম্ভবতঃ এটা অল্পবয়সীদের একটা ব্যয়বহুল এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণের প্রবণতা আরো বেশি করে কমাবে। তবে আমি জনগণকে হদ্দ বোকার পরিবর্তে যুক্তিশীল বিবেচনা করে আরো ভালভাবে তথ্য প্রদানের পথ বেশি পছন্দ করতাম।

তবে পরিবর্তনগুলোর প্রতি ধূমপায়ীদের যুক্তিহীন একটি প্রতিক্রিয়াও রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আপাতদৃষ্টে কিছু ধূমপায়ী মনে করে যে তাদের পুরানো ব্র্যান্ড যুক্ত সিগারেটগুলো থেকে সাধারণ প্যাকেটের সিগারেটের স্বাদ বেশী খারাপ। কেউ কেউ একে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর শুধু একটি চালাকী মনে করেন।

জনাব লিওপল্ড নয়। তিনি জলপাই সবুজ ধূমপানের প্যাকেট…স্বাদ কী ভিন্ন? আলোচনার সূত্র শুরু করেছেন এইউএসআরসি.কম/ফোরাম [আরসি= রিমোট কন্ট্রোল]-এ::

আসল প্যাকেটগুলোর তুলনায় নতুন *** সবুজ প্যাকেটগুলোর ধোঁয়ার মধ্যে ভিন্ন স্বাদ আছে কিনা দেখার জন্যে সেখানে ধূমপায়ীদের কেউ আছে কী?? সবুজ প্যাকেটগুলোর স্বাদ একই রকম নয় এবং সেগুলোর স্বাদ পাদের মতো।

এটা শুধু মানসিক চিন্তার ব্যাপার নয়, কারণ নতুন সিগারেটগুলো আমি এমনকি অর্ধেক ভরা একটি পুরানো প্যাকেটে ঢুকিয়ে মিশিয়ে নিয়েছিলাম এবং সেগুলোর স্বাদ লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন (নয় কি)?

আনলিসড-এ বিজ্ঞাপনী সংস্থা ন্যাকেড কমিউনিকেশনস-এর যোগাযোগ এবং বিপণন গুরু এডাম ফেরিয়ার এই অসম্ভাব্য ঘটনাটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন:

আমরা কোন কিছুর স্বাদ নেওয়ার সময় আমরা এটা কিসের মতো মজা সেটা নথিবদ্ধ করি না, (বরং) আমরা স্বাদটি তৈরী করি – আমরা এটাকে তৈরী করি হাতে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে।

…একটা সিগারেটের স্বাদ নেওয়ার সময় সমস্ত বিজ্ঞাপন সেই সিগারেটের স্বাদে অবদান রাখে।

যাইহোক, তিনি আইনটির একজন সমর্থক:

প্রতিটি সরকারের উদ্যোগের – বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা থেকে সরবরাহ সীমিতকরণ, কর বাড়ানো থেকে  সাধারণ প্যাকেজিং পর্যন্ত – একটি প্রভাব রয়েছে।

এটা যদি একটি কর্তৃত্বশীল রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন হয়ে থাকে, তাহলে  খুব অল্পবয়সে ক্যান্সারে মারা যাওয়া একজন ধূমপায়ীর ছেলে হিসেবে আমি আনন্দের সঙ্গে বলবো “গু গু গা গা। আমাদের দেখাশোনা অব্যহত রাখুন।”

যুক্তরাজ্য এবং নিউজিল্যান্ডের মতো অন্যান্য দেশ একই ধরনের ধূমপানবিরোধী আইন প্রবর্তনের বিবেচনা করছে। দি হাফ ধারণাটি সম্পর্কে মার্কিন প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ৪০০-এর উপর মন্তব্য লাভ করেছে।

লরেন্টডিস্কার্ড-এর প্রতিক্রিয়া খুবই ইতিবাচক:

এটি একটি মহা উন্নয়ন। ইতোমধ্যে অবিশ্বাস্য প্রমাণ রয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে এমনকি কঠিন আসক্ত ধূমপায়ীরাও তাদের ব্র্যান্ড কম উপভোগ করে বলে মনে হয়।

আমি নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বাস করি না। তবে আমাদের শিশুদের রক্ষা করার সমষ্টিগত দায়িত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং সেখানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখতে পাবো।

এইচজিকোহান আরো একটি উদারবাদী মতামত পোষণ করেন:

কর্তৃত্বশীল রাস্ট্র, নাক গলানো সরকার। স্বাধীনতা মানে ‘মুক্ত থাকা।’ বিশ্বে কোন সরকার কিভাবে সিগারেটের প্যাকেজিং সম্পর্কে রায় দেয়ার একটি পথ খুঁজে পেয়েছে? এটা সরকারের সীমা অতিক্রমের স্থূল প্রমাণ।

তামাক শিল্প যুক্তি দেখিয়েছে যে সাধারণ প্যাকেজিং অবৈধ ব্যবসা ও চোরাচালান বৃদ্ধি করবে। এটা বর্তমান যুক্তরাজ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। (আলোচনা এখানে)

অদূর ভবিষ্যতে অন্য কোন দেশ অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব ভূমিকা অনুসরণ করলে সেটা দেখতে ভাল লাগবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .