২০ মাসের যুদ্ধে সিরিয়ায় মারা গেছে ৪০ হাজার মানুষ

এই পোস্টটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১/১২ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে মানুষের অসহায়তা বেড়েই চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৩ সালের শুরুতেই সেখানে প্রায় ৪ মিলিয়ন লোককে নানা ধরনের সহযোগিতা দেয়ার প্রয়োজন পড়বে। সিরিয়ার ওপরে করা জাতিসংঘের মানবাধিকার বুলেটিন ১১ নভেম্বর ২০১২ ইস্যুর [পিডিএফ] শিরোনামই ছিল এটা। এই ৪ মিলিয়ন লোকের ২ মিলিয়নই শিশু, কিশোর-কিশোরী। এরা প্রাথমিক সেবাগুলো পাচ্ছে না। তাদের যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এবং ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:

যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে… প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে দেশের অভ্যন্তরেই রয়েছে। তারা বসবাস করছে কনকনে ঠান্ডা শীতের মধ্যে। তারা জানে না কবে এ যুদ্ধ শেষ হবে। প্যালেস্টাইন এবং গ্রিমের উদ্বাস্তুদের মতো কবে এই যুদ্ধ শেষ হবে তা কেউ আগাম জানতেও পারছে না।

সিরিয়ার মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে আসা হয়েছে। সূত্র: আইসিআরসি ওয়েবসাইট

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) এবং সিরিয়ান আরব রেড ক্রিসেন্ট (এসএআরসি) ২০১২ সালের শুরু থেকেই এক মিলিয়ন মানুষকে পানি সরবরাহ করে আসছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠায় প্রতিদিন ১১ হাজারের মতো মানুষ সিরিয়া থেকে পালিয়ে পাশ্ববর্তী দেশসমূহে চলে যাচ্ছে।

মারা গেছে ৪০ হাজার সিরিয়ান

গত ২২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে সিরিয়ান অবজারবেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর ওয়েবসাইটে আরো ভয়াবহ একটি খবর ওঠে আসে। আর সেটা হলো যুদ্ধে প্রাণহানির খবর। অবজারবেটরির তথ্য অনুসারে, সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে

৪০ হাজার ১২৯ এর বেশি মানুষ মারা গেছে। তবে যুদ্ধে যারা নিখোঁজ হয়েছে, তাদের হিসেব এতে যোগ করা হয়নি। সিরিয়ান অবজারবেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, যুদ্ধ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। নিহতদের তালিকা এরকম:

নিহত সাধারণ মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৮০২৬ জন, দলত্যাগী ১৩৭৯ জন, সেনাসদস্য ১০১৫০ জন, অজ্ঞাতনাম ৫৭৪ জন। এরা গত ২০ মাসের যুদ্ধে মারা গেছেন।

সিরিয়ার সামাজিত মিডিয়া। সূত্র: রামি আলহামেস ব্লগ

বেশিরভাগ মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে, এই পরিমাণ হত্যাযজ্ঞের জন্য সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী দায়ী। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস তিনটি কেইস উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে প্রতিবাদকারীদের ওপর সিরিয়ান গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের প্রমাণও রয়েছে। তাদের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা গেলে এবং স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি দেয়ার পরে সরকার তাদের মৃতদেহ নিজ নিজ পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে ফেরত দেয়। সে সময়ে তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

সিরিয়ার যুদ্ধাপরাধ

৩ মে ২০১২ তারিখে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ “তারা আমার হৃদয় পুড়ে দিয়েছে” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটি প্রকাশ করা হয় যখন শান্তি আলোচনার জন্য জাতিসংঘের দূত হয়ে কফি আনান আইডিলিব প্রদেশে আসেন:

শান্তি আলোচনা নিয়ে কুটনৈতিকরা যখন যুক্তি-তর্ক করছেন, তখন সিরিয়ার ট্যাংক, হেলিকপ্টার আইডিলিবের একটার পর একটা শহর ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেখানেই যাই না কেন, আমরা দেখতে পাবো আগুন জ্বলছে, বাড়িঘর, দোকানপাট, গাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি শোনা যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির আগে সিরিয়ার সরকার প্রতিটি মিনিট ব্যবহার করছে।

আইডিলিবে যা ঘটেছে তার প্রমাণ হিসেবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইউটিউবে এই ভিডিওটি শেয়ার করেছে:

প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ায় মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সূত্র: দ্য ডেইলি ডোজ

সিরিয়ার বিপ্লব কী জয়ী হতে পারবে?

এই প্রশ্নটা তুলেছেন সোশ্যালিস্ট রেভিউলেশন, তিনি উত্তরও দিয়েছেন:

এটি তখনি হবে যখন শ্রমিক এবং তরুণরা আসাদ সরকারকে ছুঁড়ে ফেলবে। তাছাড়া ন্যাটোর হস্তক্ষেপ এবং রাশিয়ান সাম্রাজবাদ মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের জন্য শুধুমাত্র দশকব্যাপী রক্তপাত-ই নিয়ে আসবে।

ইতোমধ্যে আম্মার আবদুলহামিদ তার সিরিয়ান রেভিউলেশন ডাইজেস্ট ব্লগে লিখেছেন:

ঘটনা যাই হোক না কেন, ৪০ হাজার নিহত আর ৫০ হাজার নিখোঁজ মানুষ মিলে, সারাদেশের অবকাঠামো ধ্বংস করার মাধ্যমে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

এই পোস্টটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১/১২ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .