গাজা সংঘাত সম্পর্কে ইজরায়েলী মিডিয়া কভারেজের সমালোচনা

ইজরায়েল এবং গাজা জঙ্গিদের মধ্যেকার সর্বশেষ যুদ্ধটি সারাক্ষণ কাভার করা হয়েছে ইজরায়েলে যেখানে সংবাদমাধ্যমের আউটলেটগুলো আক্রমণের জন্যে মূলত: সরকারের বর্ণনা এবং যৌক্তিকতাকে গ্রহণ করেছে। বামপন্থী ইজরায়েলী ব্লগার এবং নেটনাগরিকরা অভিযান চলাকালে সরকারের সমালোচনা করা ছাড়াও ঘটনার একটি পক্ষপাতদুষ্ট কভারেজ বিবেচনা করে তারা এগুলোকে আক্রমণ করেছে।

ইজরায়েলী বামপন্থী টুইটার ব্যবহারকারী ইউরি হোরেশ দক্ষিণ ইজরায়েলে পোষা প্রাণীদের দুর্ভোগ-যন্ত্রণা সম্পর্কে একটি গল্প লেখার জন্যে নিযুক্ত জেরুজালে্মের একজন পোস্ট প্রতিবেদককে তিরস্কার করেছেন। তাদের মধ্যেকার (টুইট) বিনিময় এখানে দেয়া হলো:

‏@শ্যারণউদাসিন: রকেট সাইরেনের কারণে কারো পোষা প্রাণীরা কী চেঁচামেচি করে? যদি তাই হয়, একটি কাহিনীর জন্যে দয়া করে আজকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ! #জেপোস্ট

@ইউরিহোরেশ: @শ্যারণউদাসিন আপনি কী দি ওনিয়নের (প্রখ্যাত মার্কিন বিদ্রুপ সংবাদ মাধ্যম) জন্যে লিখেন?

‏@শ্যারণউদাসিন: না @ইউরিহোরেশ, এটা দক্ষিণ ইজরায়েলের কুকুর-বিড়ালের মালিকদের জন্যে সত্যিকারের একটি উদ্বেগ!

@ইউরিহোরেশ: @শ্যারণউদাসিন #গাজায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে আর জেরুজালেম পোস্ট এশদোদে কুকুর ছানাদের সাইরেন ভীতি নিয়ে একটি গল্প চালাচ্ছে। ভাল কথা।

বামপন্থীরা যুদ্ধবাজ বিবেচনা করে চ্যানেল ২ এর সামরিক সংবাদদাদতা রনি ড্যানিয়েলের ব্যাপক সমালোচনা করে থাকে। সাংবাদিক আলেকজান্দ্রা বেলপোলস্কি তার স্যালুনা ব্লগে লিখেছেন [হিব্রু ভাষায়]:

“הגיע הזמן להפסיק עם הפינצטה”, קבע דניאל בקולו הרדיופוני שאין עליו עוררין, תוך שהוא מנסה “לחנך” את צה”ל לפעולה הנכונה לדידו. “הגיע הזמן להוציא את הפטיש הכבד. בשלב מסוים צריך לעבור למשהו יותר קשה ואלים”.

קל לפספס בתוך זרם הברברת המגויסת לדגל, נטולת הביקורת, הממלאת את המסכים בימים האחרונים, את עוצמת הזעזוע שאמור לייצר משפט כזה. ודווקא משום כך, אסור בשום אופן להקל בו ראש. מצב שבו עיתונאי בכיר, שאמור להעניק לצופים מידע ופרספקטיבה, קורא באופן בלתי מוסווה לאלימות צבאית באוכלוסיה בלתי-לוחמת הוא מצב שאסור בשום אופן לעבור עליו לסדר היום.

“এখন সুনি্দিষ্ট হামলা থামানোর সময় হয়েছে,”বলেছেন ড্যানিয়েল কিভাবে কাজ করা উচিৎ সে বিষয়ে আইডিএফ’কে “শিক্ষিত” করার চেষ্টা করতে গিয়ে তার রেডিও-স্বর এবং কর্তৃত্বপরায়ণ কণ্ঠে। “ভারী হাতুড়ি বের করার এটাই সঠিক সময়। এক পর্যায়ে আমাদের আরো কঠোর এবং হিংসাত্মক কিছু করতে হবে।” সম্প্রতি আমাদের (মিডিয়ার) পর্দাগুলো দেশাত্মবোধক, দ্ব্যর্থহীন বকবকানির ধারায় ভরে উঠেছে, এটা বুঝাই যায় এই বাক্যটি অনেককে ধাক্কা দেয়নি কেন। এবং ঠিক এই কারণেই একে হালকাভাবে গ্রহণ করা উচিৎ নয়। আমাদের এমন একটি পরিস্থিতি মেনে নেয়া ঠিক হবে না, যখন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক দর্শকদের তথ্য এবং পরিপ্রেক্ষিত বলে না দিয়ে সরাসরি একটি অসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের আহবান করেন।

শীর্ষ বামপন্থী ব্লগার ইয়োশি গার্ভিৎজ টুইট করেছেন:

התקשורת הישראלית, באופן שבו היא מדווחת על האירועים ברצועה, חזרה שני דורות אחורה, לימי פעולות התגמול. שוב היא שופר של מערכת הבטחון.

গাজা ভূ-খণ্ডের ঘটনাবলী সম্পর্কে এটা এমনভাবে রিপোর্ট করছে যে মনে হচ্ছে ইজরায়েলী মিডিয়া যখন এটি সামরিক স্থাপনার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতো সেই দুই দশক আগের প্রতিশোধ অভিযানের যুগে ফিরে গিয়েছে।

আইডিএফ (ইজরায়েলী রক্ষী বাহিনী) মুখপাত্রদের ইউনিট এবং ইজরায়েলী মিডিয়ার মধ্যেকার মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণ করে ড্যানিয়েল আর্গো এবং শিরি এইরাম মিডিয়া ওয়াচডগ কেশেভের ব্লগে লিখেছেন [হিব্রু ভাষায়]:

במלחמות הקודמות צה”ל היה “מזרים” מידע לכתבים הצבאיים, ומזין מערכות תקשורת בחומר וידאו ובהדלפות מהשטח. את החומרים שנאספו היו מערכות התקשורת “מעבדות” בצורה זו או אחרת, ומשדרות את מה שהתאים, או לא התאים, למהדורה. בקיצור – צה”ל היה זקוק לעיתונאים כשם שהם נזקקו למידע של צה”ל. אבל במבצע הנוכחי משהו השתנה…. התהליך בו הופך צה”ל לכלי התקשורת המרכזי, ולבעליו של המידע הבלעדי החשוב ביותר, הוא תהליך שבסופו המידע שמגיע לאזרח – מגיע משובש. חלק גדול מהאחריות במקרה זה נופל גם על כלי התקשורת בישראל – אלו שבוחרים לשדר את ידיעות דובר צה”ל מבלי לבדוק ומבלי לשאול שאלות. בסופו של דבר הם אלו המחויבים לאתיקה ולכללי עבודה עיתונאיים. דובר צה”ל, למרות שקל לשכוח זאת, מחויב לא לאמת אלא למטרות המבצעיות של צה”ל.

পূর্ববর্তী যুদ্ধগুলোতে আইডিএফ সামরিক সংবাদদাতাদের তথ্য ‘যোগান’ দিত এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে ভিডিও সরবরাহ এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে তথ্য ফাঁস করতো। সংবাদমাধ্যমগুলো এসব উপাদান এদিক সেদিক করে প্রক্রিয়াজাত করে তাদের উপযোগী করে সম্প্রচার করতো। অল্প কথায় – আইডিএফের যেমন সাংবাদিকদের প্রয়োজন ছিল তেমনি সাংবাদিকদেরও আইডিএফের তথ্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বর্তমান অভিযানে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে …  যে প্রক্রিয়ায় আইডিএফ নিজেই একটি মিডিয়া আউটলেট এবং একচেটিয়া ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মালিক হয়ে গিয়েছে সেই প্রক্রিয়াটিতে নাগরিকদেরকে দেয়া তথ্যটি সঠিক নয়। এর আংশিক দায়-দায়িত্ব বস্তুনিষ্ঠতা পরীক্ষা ছাড়া এবং প্রশ্ন না করে আইডিএফ মুখপাত্র বিবৃতি সম্প্রচার করা ইজরায়েলী সংবাদমাধ্যমগুলোর উপরও বর্তায়। সর্বোপরি, যথাযথ এবং নৈতিক সাংবাদিকতার নিয়ম অনুসরণ করা সাংবাদিকদেরই দায়িত্ব। অপরপক্ষে, আইডিএফ মুখপাত্রদের দায়িত্ব হলো – যদিও এটা ভুলে যাওয়া সহজ এই কথা সত্য নয় – আইডিএফের সামরিক উদ্দেশ্য বজায় রাখা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .